Thursday, December 19, 2013

ড. শ্রী শক্তি স্বরুপজী’র ইসলাম গ্রহণ

ড. শ্রী শক্তি স্বরুপজী’র ইসলাম গ্রহণ

ড. ইসলামুল হক এর কথা অনেকেই হয়তো জানেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পূর্বে তাঁর নাম ছিল ড. শ্রী শক্তি স্বরুপজী মহারাজ উদাশেন ধর্মাচার্য উদয় শক্তি, যিনি আচার্য মহান্ত ড. স্বরুপজী মহারাজ নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতের বিখ্যাত হিন্দু পন্ডিত।

ড.স্বরুপজী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডিভিনিটি এবং ওরিয়েন্টালিজম-এই দু’বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ইংরেজি, গ্রিক, আরবিসহ ১২টি ভাষায় পড়তে ও লিখতে জানতেন।

ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পূর্বে ভারতবর্ষের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাঁকে তাদের দেবতা হিসেবে গণ্য করতো এবং প্রচুর দান-দক্ষিণা প্রদান করত। এছাড়া মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসেবেও তিনি ছিলেন অগাধ সম্পত্তির মালিক।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মগুলি আমি অধ্যয়ন করেছি, তাই ইসলাম ধর্মের ডিভিনিটি আর সত্যতা সম্পর্কে আমার কোনরূপ সন্দেহ ছিলনা।
একবার ১৯৮১ সালের প্রথম দিকে পরমধাম আশ্রমের অধ্যক্ষ আমাকে লেকচার দেওয়ার জন্য তাঁর আশ্রমে নিমন্ত্রণ জানান। সেখানে অনেক বিখ্যাত হিন্দু পন্ডিতবর্গ উপস্থিত ছিলেন।



 তাদেঁর মধ্যে একজন ছিলেন দাদা ধর্ম অধিকারী। তিনি সেখানে উপস্থিত সবার সামনে আমাকে হঠাত প্রশ্ন করে বসলেন, স্বামীজি, আপনি তো পৃথিবীর অনেক ধর্ম অধ্যয়ন করেছেন , তো আপনার মতে মানুষের জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর কোনটি? আমি এক কথায় উত্তর দিলাম, “ইসলাম”। তিনি অবাক হলেন এবং অবাক হয়ে আমাকে বললেন , কিন্তু ইসলাম তো একটি “টাইড-আপ” অর্থাত “বদ্ধ” ধর্ম। আমি উত্তরে বললাম ,হাঁ,ঠিকই বলেছেন, ইসলাম একটি “বদ্ধ” ধর্ম, কিন্তু এই “বদ্ধ” ধর্মই মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছে। তথাকথিত উম্মুক্ততা বা নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীনতা মানুষকে দাসত্বের দিকে নিয়ে যায়। মানুষের এমনই একটি “বদ্ধ” ধর্মের প্রয়োজন যা ইহকালে তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখবে যাতে পরকালে সে মুক্তি লাভ করে। আমার মতে ইসলাম ধর্মেরই কেবল সেসকল গুণাবলী আছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ইসলামের মহানুভবতা হচ্ছে এটি মানুষকে বর্ণ-গোত্র,জাত-পাত,শ্রেণী,স্থান, ভাষা,প্রাচুর্য,পদ-মর্যাদার বেড়াজাল থেকে মুক্ত রাখে। এর পরিবর্তে মানুষকে প্রদান করে একটি “ফার্ম এনটিটি” অর্থাত দৃঢ় স্বকীয়তা। এটি মানুষকে শুধু সৃষ্টিকর্তার সামনেই মাথা নত করা শেখায়, মানুষকে মুক্তি দেয় দাসত্ব আর পরাধীনতার নাগপাশ থেকে।

তাঁক প্রশ্ন করা হয়েছিল, একটি বিলাসবহুল ও আরামপ্রদ জীবন ছেড়ে আপনি ইসলামে প্রবেশ করেছেন, এর জন্য বিশাল সম্পদের মালিকানাও আপনাকে ছাড়তে হয়েছে, তো আপনি বর্তমানে কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমার হাতে যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদও জমা থাকতো, তবে ইসলামের জন্য আমি তা-ও ত্যাগ করতাম। শুধু তাই নয়,সাত পৃথিবীর সমপরিমাণ সম্পদও আমাকে ঐভাবে আনন্দিত করত না যে আনন্দ আমি ইসলাম থেকে পেয়েছি।”

ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তাঁকে ভারত থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু ভারত সরকারের চাপে তাঁকে বাংলাদেশও ত্যাগ করতে হয়েছিল। অবশেষে মালয়েশিয়ায় তিনি আশ্রয় পান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর ভালো কাজগুলো কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাত নসীব করুন, আমিন।
সূত্র-  মুসলিম বাংলা ব্লগ ।

0 comments:

Post a Comment