দুনিয়ার সুখ সুখ না, জান্নাতের সুখই আসল সুখ

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন কাজটি আল্লাহর নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বললেন, ‘ঠিক সময়ে নামায আদায় করা।’ তিনি (আবদুল্লাহ) পুনরায় বললেন, এরপর কোন কাজটি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়? নবী (সাঃ) বললেন, ‘পিতামাতার সেবা ও আনুগত্য করা। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কোন কাজটি? জবাবে নবী (সাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।

দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী, নিশ্চই আমিও দুনিয়ায় ক্ষনস্থায়ী

“ তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” -সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০

দুনিয়ার দুঃখ দুঃখ না, জাহান্নারের দুঃখ আসল দুঃখ

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে এবং আমার উপর ঈমান এনেছে তার জন্য তো একবার মোবারকবাদ। আর যে আমাকে দেখে নাই তারপরেও আমার উপর ঈমান এনেছে তাকে বারবার মোবারকবাদ - মুসনাদ আহমাদঃ ৩/১০০

নামাজ বেহেস্তের চাবি

রাসুলে পাক (সা:) বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার উম্মতের উপর সর্বপ্রথম নামাজ ফরজ করেছেন এবং কেয়ামতের দিন সবার আগে নামাজের হিসাব নয়া হবে।

কালেমা পড়ি, ঈমান আনি, বলি আমি মুসলিম

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন কাজটি আল্লাহর নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বললেন, ‘ঠিক সময়ে নামায আদায় করা।’ তিনি (আবদুল্লাহ) পুনরায় বললেন, এরপর কোন কাজটি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়? নবী (সাঃ) বললেন, ‘পিতামাতার সেবা ও আনুগত্য করা। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কোন কাজটি? জবাবে নবী (সাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।

Sunday, March 23, 2014

মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত

মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত
মুফতি শামসুর রহমান পোরশা : মিসওয়াক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বিশেষ সুন্নাত। বিভিন্ন হাদিস শরীফে মিসওয়াক করার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কে বেশি বেশি মিসওয়াক করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হাদিস শরীফে হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখনই জিবরাঈল (আ.) আমার নিকট আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য আদেশ দিতেন। যাতে আমার ভয় হতে লাগলো যে, মিসওয়াক করতে করতে আমি আমার মুখের সম্মুক দিক ক্ষয় করে দিব।’ (মেশকাত শরীফ- ১/৪৫) রাসূল (সা.)ও উম্মতগণকে মেসওয়াকের গুরুত্ব বোঝাতে, যেয়ে বলেন, ‘যদি উম্মতের কষ্ট ও অসুবিধার কথা চিন্তা না করতাম, তাহলে প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক তাদের ওপর আবশ্যক করে দিতাম।’ (মুসলিম শরীফ- ১/১২৮)

Tuesday, March 11, 2014

পরোপকার মহৎ গুণ

পরোপকার মহৎ গুণ

পরোপকার মহৎ গুণ একটি বহুল প্রচলিত প্রবচন। কম-বেশি যেকোনো স্তরের শিক্ষিত মাত্রই এ বাণীটি পড়েন, জানেন, অন্তত শুনে থাকেন। বাণীটি বাংলা ভাষায় সহজে বোধগম্য একটি বাক্য। কিন্তু সমাজের দিকে তাকালে মনে হয়, যারা এ বাক্যটির সাথে পরিচিত তারা শুধু বাক্যটি জানেন, অর্থ বোঝেন না বা বাস্তবায়ন অযোগ্য মনে করেন। ধরুন, রাস্তায় কারো মোবাইল, টাকা-পয়সা বা গয়নাগাটি পড়ে গেল। দেখবেন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তা হাওয়া হয়ে যাবে। মালিক খোঁজার জন্য ফিরে এলেও তা না পাওয়ার গ্যারান্টি শতভাগ। অথচ এ ক্ষেত্রে চিত্রটি যদি এ রকম হতো যে, পড়ে যাওয়া বস্তুটি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পড়ে থাকল, কিন্তু কেউ এটি তুলে নেয়ার মতো নেই অথবা কেউ তুলে নিয়ে মালিকের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল বা যেখানে পড়েছিল সেখানের সবাইকে জানিয়ে রাখা হলো মালিক ফিরে এলে সংবাদ দিতে হবে। তাহলে হয়তো বলা যেত আমরা যা পড়ি, জানি বা শুনি তার আমলও করি বা তা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করি। বাস্তবে এই ‘পরোপকার’ প্রসঙ্গটি কে না জানে? বরং না জানা লোকের সন্ধান পাওয়া মুশকিল। কিন্তু যখন রোড এক্সিডেন্ট হয়, বাস-ট্রেন এমনকি লঞ্চ তখন প্রত্যক্ষদর্শীর ওপর যেখানে আহতের সেবা, নিহতের পরিচয় বের করে ডেডবডি শোকাতুর পরিবারের নিকট পৌঁছানো গুরুদায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় সেখানে এমন অনেক প্রত্যক্ষদর্শীও রয়েছেন যাদের আহত-নিহত নয় বরং টাকা-পয়সা, মালপত্রের দিকেই দরদ বেশি থাকে। এটি আমাদের দেশের একটি কমন চিত্র। যখন এ লেখাটি লিখছি তখন আমাদের দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত মারমুখী। যে যাকে পারছে নির্বিচারে আহত-নিহত করছে। পরোপকারে অভ্যস্ত হতে পারলে এমনটি হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল বলে মনে হয় না। অথচ রাজনৈতিক নেতৃত্বই সবচেয়ে বেশি পরোপকারী হওয়া প্রয়োজন ছিল। এরপর দেখুন রাজপথের এ মারামারিগুলোতে একশ্রেণীর সাংবাদিক রয়েছেন তার পেশাগত দায়িত্ব, সত্য-মিথ্যা রিপোর্ট করা নিয়ে ব্যস্ত। তিনি যদি তখন আহত ব্যক্তিকে নিয়ে ব্যস্ত হতেন তাহলে রিপোর্ট প্রস্তুতের সাথে সাথে হয়তো একটি প্রাণও বাঁচানো যেত, অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। এটি এমন একটি উপদেশ যা দিয়ে গোটা সমাজে পরিবর্তন আনা যায়, স্বর্গীয় শান্তির ধারণা ও সন্ধান পাওয়া যায়। এবার আসি শিরোনামের দ্বিতীয় অংশে। মানুষের মধ্যে মতের ভিন্নতা অতি স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক একটি বিষয়। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোটি কোটি মানুষ সৃষ্টি করেছেন ভিন্নতা দিয়েই। কারো সাথে কারো চেহারার মিল নেই, কণ্ঠস্বরের মিল নেই। কারো সাথে কারোর আঙুলের ছাপও মিলবে না। তাহলে পৃথিবীতে যত মানুষ এসেছে এবং আসবে কারো সাথেই কারো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। এত স্বতন্ত্র করে অন্য কোনো জীবকে আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন কি না তা তিনিই ভালো জানেন। সুতরাং মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিও ভিন্নতর। তাই মতামতও ভিন্ন হওয়া অতি স্বাভাবিক। সৃষ্টিগত দিক থেকে সব মানুষই সমান। এমন কেউ নেই যার তিনটি পা অথবা কারো পা ছয়টি। কেউ তিন চোখের মালিক অথবা কারো তিনটি কান- স্বাভাবিকভাবে হয় না। তাই সৃষ্টিগত মর্যাদা সবার সমান। তবে এটা বাস্তব যে, জ্ঞান, চরিত্র ও কর্ম দিয়ে অনেকেই তার সম্মান বৃদ্ধি করতে পারে। এ অবস্থায় আমার নিজের যেমন যেকোনো মত দেয়া বা গ্রহণ করার অধিকার আছে, অন্য কারো ঠিক সে অধিকারই রয়েছে। নিজ মতকে কোরবানি করা, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে মেনে নেয়া ও অপরের মতকে সম্মান করার শিক্ষা যদি আমরা গ্রহণ না করি তবে হানাহানি বাড়বেই। পৃথিবীতে এমন কোনো একটি বিষয়ও নেই যেখানে ভিন্নমত নেই। হোক না তা যথার্থ অথবা ভিত্তিহীন। বড় একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য এই যে, সব মানুষ কখনো একই মতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। তাই পরমতসহিষ্ণুতা অনেক বেশি প্রয়োজন। দেশের সর্বত্র শান্তি স্থাপনে এর চর্চা ও বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। ভিন্নমতকে যেহেতু কখনোই ঐকমত্য করা যাচ্ছে না, সেহেতু ভিন্নমতের সহাবস্থান না হলে মানবতাকে বাঁচানো অসম্ভব; বাঁচবে না দেশ, বাঁচানো যাবে না এই পৃথিবীকে। আমরা বসবাসযোগ্য পৃথিবী চাইলে বিপরীত মতের সহাবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে। শুরুর বক্তব্যের সাথে একটি যোগসূত্র প্রয়োজন। পরোপকার সর্বপ্রথম করতে হবে ভাষা দিয়ে। ভাষা হলো মতপ্রকাশের মাধ্যম।
আর ভাষা বা মুখ দ্বারা পরোপকার করতে অর্থ ব্যয় হয় না বা খুব বেশি ত্যাগ করতে হয় না। প্রয়োজন হয় শুধু বাস্তবতা মেনে নেয়ার মানসিকতা। তাই দয়া করে আসুন, আমরা পরোপকারী হওয়ার ব্রত গ্রহণ করি এবং আজ থেকে পরমতের সহাবস্থান মেনে নিয়ে পরোপকারের প্রথম ধাপটি অতিক্রম করে নিজের মানুষ পরিচয়কে সার্থক করে তুলি। আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করিম সা:কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সর্বোত্তম মুসিলম কে? জবাবে রাসূল সা: বললেন, যার মুখ (ভাষা) ও হাতের অনিষ্ট থেকে অন্যান্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। (হাদিসটি ইমাম মুসলিম নিজ গ্রন্থে সঙ্কলন করেছেন)।
লেখক : মাওলানা মোহাম্মদ জাফর ইকবাল
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, শুক্রবার, ৯:২৬ দৈনিক নয়াদিগন্ত

কী জবাব দেব আল্লাহর কাছে

কী জবাব দেব আল্লাহর কাছে
ইসলাম পরম দয়াময় আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্র্ম। ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। তাই ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলা হয়। শাব্দিক অর্থে ইসলাম কোনো ধর্ম নয়। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। যা অন্য ধর্মে নেই। ইসলাম ধর্মের তথা ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সংবিধান আল্লাহতায়ালা প্রেরিত মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। এতে আছে জীবজগতের সব নীতিবিধান। আছে সর্বকালের সব সমস্যার সমাধান। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে আরবের অসভ্য বর্বর জাতি আল কোরআনের আলোকে আলোকিত হয়েছিল। আজ আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রায় ৯০ শতাংশ আল কোরআনের অনুসারী। এদের ভেতর আমরা লাখ লাখ নায়েবে রাসূল (সা.), আশেকে রাসূল (সা.), আওলাদে রাসূল (সা.), মুজাদ্দিদ, হাজী, গাজী ও বিশ্ব ইজতেমা অনুসারী থাকা সত্ত্বেও সব ধরনের ন্যায়নীতি, নৈতিকতা, সততা, মানবিকতা, মনুষ্যত্ব বোধ, শ্রদ্ধাবোধবিবর্জিত অবাধ ভোগবাদী সমাজে আজ হিংসা-প্রতিহিংসা, মারামারি, হানাহানি, খুন, গুম, অপহরণ, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপ্রতিহত শোষণ, জনগণের সম্পদ লুটপাট, জ্বালাও, পোড়াও, ভেজাল, নকল, ওষুধ খাদ্যসামগ্রী, বিষ মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য, চোরাকারবারি, মজুদদারি, মুনাফাখোরি, কালোবাজারি, মাদক ব্যবহার আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার যুগকেও ছাড়িয়ে গেছে। অথচ আমরা যদি সুচিন্তিত, সুপরিকল্পিত এবং আন্তরিকভাবে দক্ষতা, বিচক্ষণতার সঙ্গে নিরলসভাবে নিঃস্বার্থভাবে নিজেদের শক্তি সামর্থ্য, শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করতাম তাহলে এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হতো আল কোরআনের আলোকে আলোকিত ইসলামী জীবনব্যবস্থা। দেশে আজ এমন অবস্থা হতো না। তাই ভাবছি কি জবাব দেব কাল হাশরের ময়দানে আল্লাহর দরবারে।
সূত্র - মোহাম্মদ আবুল হাসেম,  দৈনিক যুগান্তর।

চির বসন্তের স্বাদ মন ভরে উপভোগ করে আল্লাহপ্রেমিক

চির বসন্তের স্বাদ মন ভরে উপভোগ করে আল্লাহপ্রেমিক
মাহমুদ আহমদ সুমন
প্রকাশ : ০৭ মার্চ, ২০১৪

ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ছয় ঋতুর সবচেয়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য ঋতু বসন্ত। তাইতো বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ। কবির ভাষায়, ‘আহা আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে, কত পাখি ডাকে’। যদিও ফুল সব ঋতুতেই ফোটে আর সব ঋতুতেই পাখি গায়। কিন্তু বসন্তে ফুলের রং, বাহার যেমন ভিন্ন হয় তেমনি বসন্তদূত কোকিলের কুহুতানও যেন ভিন্ন এক প্রকৃতিকে উপহার দেয়। বসন্ত এলে প্রকৃতিতে লাগে রং বদলের ছোঁয়া আর পাতা ঝরার দিন শেষ হয়ে যায়। ধূসর প্রকৃতির ঠোঁটে ফোটে হাসি। প্রকৃতি যেন ফিরে পায় নতুন জীবন। আসলে বসন্তের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক নিবিড়। যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি পৃথিবীকে নিষ্প্রাণ দেখতে পাও। এরপর আমরা যখন এর ওপর পানি বর্ষণ করি তখন তা সক্রিয় হয়ে ওঠে ও ফেঁপে-ফুলে ওঠে এবং প্রত্যেক প্রকার উদ্ভিদের সবুজ শ্যামল শোভামণ্ডিত জোড়া উৎপন্ন করে।’ (সূরা হজ : ৫)।
আল্লাহতায়ালার জান্নাতের বসন্ত নির্দিষ্ট কোনো মাস নয় বরং বছরের প্রত্যেকটি দিনই বসন্ত। যারা পৃথিবীর ভোগবিলাসে মগ্ন না হয়ে আল্লাহর প্রেমে মগ্ন থাকে কেবল তারাই কেবল আল্লাহপাকের সেই চির বসন্তের স্বাদ উপভোগ করার তৌফিক লাভ করেন। আল্লাহপাক তার প্রিয়দের জান্নাতের চির বসন্তে চিরকাল থাকার প্রতিশ্র“তিও দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের এমন সব বাগানের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন যেগুলোর পাদদেশ দিয়ে নদ-নদী বয়ে যাবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর তিনি তাদের চিরস্থায়ী বাগানসমূহে পবিত্র গৃহেরও প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটাই মহান সফলতা।’ (সূরা তাওবা : ৭১)। অপর এক স্থানে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যাদের সৌভাগ্যবান সাব্যস্ত করা হয়েছে তারা জান্নাতে থাকবে। আকাশসমূহ ও পৃথিবী যতদিন স্থায়ী থাকবে তারা সেখানে ততদিন অবস্থান করবে। তবে তোমার প্রভু-প্রতিপালক অন্যকিছু চাইলে সে কথা ভিন্ন। এ হবে এক নিরবচ্ছিন্ন দান।’ (সূরা হুদ : ১০৮)।
পবিত্র কোরআনের শিক্ষানুযায়ী জান্নাত বা বেহেশত চিরস্থায়ী তবে দোজখ বা জাহান্নামের শাস্তি চিরস্থায়ী নয় বরং ক্ষণস্থায়ী। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেছেন, আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আল আস (রা.) থেকে বর্ণিত মহানবী (সা.) বলেছেন, জাহান্নামের ওপর এমন এক সময় আসবে যখন এর দরজাগুলো বাতাসে খট খটাতে থাকবে এবং এর মধ্যে কোনো লোক অবশিষ্ট থাকবে না। এর অধিবাসীরা এতে বহু শতাব্দী থাকার পর এমন ঘটবে। (মুসনাদ)। এই হাদিস অনুযায়ী জাহান্নাম সম্বন্ধে ‘খালেদিনা’ শব্দ শতশত বছর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ব্যাপারে হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর, হজরত জাবির (রা.) ও হজরত ইমাম হাম্বলও (রহ.) একমত প্রকাশ করেছেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকেও এই হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (বোখারি) বিখ্যাত ওলামায়ে কেরামের মধ্যে ইবনে তাঈমিয়া এবং ইবনে কাইয়্যিম লিখেছেন ‘যদিও দুষ্ট প্রকৃতিবিশিষ্ট অবিশ্বাসীদের চিরকাল জাহান্নামে থাকা উচিত, একদিন আল্লাহর অসীম করুণাবলে দোজখই অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে এবং যখন জাহান্নামই থাকবে না তখন এর নিবাসীও থাকবে না।’ (ফাতহ)।
পবিত্র কোরআনে জান্নাত সম্পর্কে বলা হয়েছে এর পুরস্কার কখনও শেষ হবে না কিন্তু জাহান্নাম সম্পর্কে এ ধরনের কোনো শব্দাবলী পাওয়া যায় না। তাই এ কথা স্পষ্ট যে, আল্লাহতায়ালার জান্নাত হচ্ছে চির বসন্ত। আল্লাহপাকের জান্নাতের বাগান কতই না চমৎকার হবে যেখানে বছরের বার মাসই বসন্ত আর এর সৌন্দর্য আমাদের ভাবনার ঊর্ধ্বে। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানরূপে চোখ জুড়ানো কত কী যে তাদের জন্য গোপন করে রাখা হয়েছে তা কেউই জানে না।’ (৩২ : ২৭)। জান্নাত বা বেহেশতের আরাম-আয়েশ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সম্পর্কে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এত নেয়ামত তৈরি করেছি যে, কোনো চোখ তা দেখেনি, কোনো কান তা শোনেনি, বরং কোনো মানুষের হৃদয়েও তার ধারণা জন্মেনি।’ (বোখারি, কিতাবুল বাদউল খালক)। মহানবী (সা.)-এর হাদিস অনুযায়ী পরকালীন জীবনের অনুগ্রহগুলো পার্থিব বস্তুর মতো নয়। ধর্মপরায়ণ ও বিশ্বাসী মুমিন ব্যক্তিদের ইহজীবনের প্রতিটি সৎ কাজের জন্য আধ্যাত্মিক তৃপ্তিদায়ক আশীর্বাদ তাদের সামনে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহপাকের নেক বান্দাদের তিনি সেদিন এমন পুরস্কার প্রদান করবেন যা মানুষ ইহজীবনে কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহতায়ালার এই চির বসন্তের বাগানে কেবল শান্তিপ্রাপ্ত আত্মারাই বিচরণ করবে। যেভাবে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে শান্তিপ্রাপ্ত আত্মা! তুমি তোমার প্রভু-প্রতিপালকের দিকে সন্তুষ্ট হয়ে এবং তাঁর সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আস। অর্থাৎ তুমি আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (সূরা ফাজর : ২৭-৩০)। অপর এক স্থানে আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশ দিয়ে নদ-নদী বয়ে যায়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। তাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এরাই আল্লাহর দল। সাবধান! আল্লাহর দলই সফল হবে।’ (সূরা মুজাদেলা : ২২)। মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির উচ্চতম পর্যায় হচ্ছে, সে তার প্রভুর ওপর পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট এবং তার প্রভুও তার প্রতি সন্তুষ্ট আর এই পর্যায়ে যখন মুমিনের আত্মা পৌঁছে তখনই আল্লাহপাক তাকে চিরকালের জান্নাতের বসন্তে বসবাসের জন্য আহ্বান জানান। যেভাবে অপর এক স্থানে আল্লাহপাক বলেন, ‘এরাই জান্নাতের অধিবাসী। এদের কৃতকর্মের প্রতিদান হিসেবে এরা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সূরা আহকাফ : ১৪)।
আসলে ‘শান্তিপ্রাপ্ত আত্মার অবস্থা হল জান্নাতি অবস্থা, যে অবস্থায় সে সব মানবীয় দুর্বলতা ও দোষের ঊর্ধ্বে উঠে যায় এবং এক অপূর্ব আধ্যাত্মিক শক্তিতে শক্তিমান হয়ে ওঠে। সে আল্লাহর সঙ্গে একীভূত ও বিলীন হয়ে যায়, আল্লাহ ছাড়া সে বাঁচতেই পারে না। এই যে পরিবর্তন তা কিন্তু ইহলোকে পূর্ণ কর্ম করার ফলেই তার মাঝে ঘটে, যার ফলে ইহকালেই সে চির বসন্তের জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভ করে। আর এ ধরনের মুমিনকে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মৃত্যুর আগেই বলা হবে, ‘হে শান্তিপ্রাপ্ত আত্মা! তুমি তোমার প্রভু-প্রতিপালকের দিকে সন্তুষ্ট হয়ে ও তাঁর সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আস।’
আমরা যদি আল্লাহতায়ালার জান্নাতের চির বসন্তের স্বাদ লাভ করতে চাই তাহলে আমাদেরও শান্তিপ্রাপ্ত আত্মার সার্টিফিকেট অর্জন করতে হবে আর এর জন্য আমাদের আল্লাহওয়ালা হতে হবে, তার নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালিত করতে হবে। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে তার চির বসন্তের বাগানের অধিবাসী হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন।
সূত্র - দৈনিক যুগান্তর

সৎ ব্যবসায়ী হাশরের দিন নবী সিদ্দিক ও শহীদদের দলে থাকবেন

সৎ ব্যবসায়ী হাশরের দিন নবী সিদ্দিক ও শহীদদের দলে থাকবেন


আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যা কিছু দান করেছি তা থেকে হালাল বস্তুগুলো ভক্ষণ কর এবং আল্লাহপাকের শোকর আদায় কর যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাক। হজরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন  হালাল সম্পদ কামাই করা ফরজের পর ফরজ। অত্র হাদিস আল্লামা বায়হাকী হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। হজরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সত্যবাদী, আমানতদার ও বিশ্বাসী ব্যবসায়ী ব্যক্তি হাশরের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের দলে থাকবেন। (তিরমিজি শরিফ) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- মহান আল্লাহ অতীব পূতপবিত্র। তিনি কেবল- পাক-পবিত্র বস্তুই কবুল করেন। আর এ ব্যাপারে তিনি মুমিনদের ওই আদেশই করেছেন যা দ্বারা তিনি রাসূলগণকে আদেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, হে রাসূলগণ আপনারা পাক-পবিত্র হালাল মাল খাবেন এবং নেক আমল করবেন। এ একই আদেশ মুমিনদের করতে গিয়ে তিনি বলেন  হে মুমিনগণ। আমার দেওয়া পাক-পবিত্র হালাল রিজিক খাও। অতঃপর তিনি এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দূরদূরান্তে সফর করছে। তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধুলাবালি। এমতাবস্থায় সে উভয় হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে কাতর স্বরে হে প্রভু, হে প্রভু বলে ডাকছে। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম ও পরিধেয় বস্তু হারাম। এ লোকের দোয়া কিরূপে গৃহীত হবে? (মুসলিম শরিফ) হজরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, হজরতে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে দেহের গোশত হারাম মাল দ্বারা গঠিত উহা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারে না। হারাম মালে গঠিত প্রত্যেক দেহের জন্য দোজখই অধিক উপযুক্ত। (দারামী)


হজরত ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। হজরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি দশ মুদ্রায় একটি কাপড় খরিদ করল যার মধ্যে একটি মুদ্রা অবৈধ উপায়ে অর্জিত, তার নামাজ কবুল হবে না। যে পর্যন্ত ওই কাপড় তার পরিধানে থাকবে (আহমদ) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। হজরত রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন_ মিরাজ রাতে আমি এমন একদল লোকের কাছে উপস্থিত হলাম যাদের পেট ঘরের মতো বড় এবং উহার ভেতরে বহু সাপ রয়েছে, যেগুলো পেটের বাইরে থেকে দেখা যায়। আমি (আমার সঙ্গীকে) জিজ্ঞেস করলাম যে জিব্রাঈল! এরা কোন লোক? তিনি বললেন  এরা সুদখোর (আহমদ শরিফ) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। আল্লাহপাক বলেন- কিয়ামতের দিন আমি তিন শ্রেণীর লোকের বিরোধিতা করব ওই ব্যক্তি, যে আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করল (মান্নত করল) অতঃপর উদ্দেশ্য লাভের পর সে তার অঙ্গীকার ভঙ্গ করছে। ওই ব্যক্তি, যে স্বাধীন লোক বিক্রি করত, উহার মূল্য ভক্ষণ করে। ওই ব্যক্তি যে কোনো শ্রমিককে পরিশ্রমের বিনিময়ে কাজের জন্য নিযুক্ত করল। অতঃপর সে তার দ্বারা পুরোপুরি কাজ বুঝে পেল কিন্তু সে তাকে পারিশ্রমিক পরিশোধ করল না। (বুখারি শরিফ) হে আল্লাহ! আপনি আমাদের হারাম থেকে দূরে রেখে হালাল দ্বারাই যথেষ্ট করুন এবং গায়রুল্লাহ থেকে বিমুখ করে আপনার অনুগ্রহ দ্বারা ধন্য করুন। মহান আল্লাহ আমাদের আপনাদের মহাগ্রন্থ কোরআনের বরকত দান করুন।

সূত্র- মাওলানা মো. সালাহ্উদ্দিন (খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ)
      বাংলাদেশ প্রতিদিন,