দুনিয়ার সুখ সুখ না, জান্নাতের সুখই আসল সুখ

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন কাজটি আল্লাহর নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বললেন, ‘ঠিক সময়ে নামায আদায় করা।’ তিনি (আবদুল্লাহ) পুনরায় বললেন, এরপর কোন কাজটি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়? নবী (সাঃ) বললেন, ‘পিতামাতার সেবা ও আনুগত্য করা। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কোন কাজটি? জবাবে নবী (সাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।

দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী, নিশ্চই আমিও দুনিয়ায় ক্ষনস্থায়ী

“ তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” -সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০

দুনিয়ার দুঃখ দুঃখ না, জাহান্নারের দুঃখ আসল দুঃখ

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে এবং আমার উপর ঈমান এনেছে তার জন্য তো একবার মোবারকবাদ। আর যে আমাকে দেখে নাই তারপরেও আমার উপর ঈমান এনেছে তাকে বারবার মোবারকবাদ - মুসনাদ আহমাদঃ ৩/১০০

নামাজ বেহেস্তের চাবি

রাসুলে পাক (সা:) বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার উম্মতের উপর সর্বপ্রথম নামাজ ফরজ করেছেন এবং কেয়ামতের দিন সবার আগে নামাজের হিসাব নয়া হবে।

কালেমা পড়ি, ঈমান আনি, বলি আমি মুসলিম

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন কাজটি আল্লাহর নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বললেন, ‘ঠিক সময়ে নামায আদায় করা।’ তিনি (আবদুল্লাহ) পুনরায় বললেন, এরপর কোন কাজটি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়? নবী (সাঃ) বললেন, ‘পিতামাতার সেবা ও আনুগত্য করা। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কোন কাজটি? জবাবে নবী (সাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।

Friday, August 29, 2014

বিজ্ঞানের আলোকে সালাত

বিজ্ঞানের আলোকে সালাত
প্রফেসর ড. মোহা: একরামুল হক


দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বা নামাজ কায়েম করা সারা মুসলিম উম্মাহর ওপর ফরজ করেছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। ঈমানের পরেই সালাতের স্থান, যা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপরই ফরজ। বলা হয়েছে ‘আস্সালাতু ইমাদ উদ্-দ্বীন’। সালাত হচ্ছে দ্বীনের বা ধর্মের খুঁটি।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সালাতের ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণে যাওয়ার আগে, নামাজের আগে কেন অজু করার বিধান দেয়া হলো সে ব্যাপারে আলোচনা করা প্রয়োজন। বহু মাওলানাকে আমি প্রশ্ন করেছি, নামাজ আদায়ের আগে অজু কেন করতে হবে? এক বাক্যে সবাই বলেছেন, দেহ ও মনের পবিত্রতা অর্জনের জন্য। কিন্তু ব্যাপারটার সাথে আমি কোনো

Thursday, August 14, 2014

ইসলামের এক জ্বলন্ত মোজেজা ইমাম বোখারি (রহ.)

ইসলামের এক জ্বলন্ত মোজেজা ইমাম বোখারি (রহ.)

[প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র বাণী হলো হাদিস। এসব হাদিসকে সংরক্ষণ করে গ্রন্থবদ্ধ করা হয়। এ ধরনের ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে হজরত ইমাম বোখারি (রহ.) প্রণীত গ্রন্থ হলো বোখারি শরিফ। যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এই বিখ্যাত গ্রন্থের প্রণেতা পবিত্র এ শাওয়াল মাসেই জন্ম নেন এবং মৃত্যুবরণ করেন। ক্ষণজন্মা এই মণীষীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ সংক্ষিপ্তাকারে তাঁর জীবনী পত্রস্থ করা হলো]
ইসলামের ঊষালগ্ন থেকে এমন কিছু সোনার মানুষের আবির্ভাব হয়েছে, যাঁদের প্রভাব এবং বিভায় এ বসুন্ধরা এখনো এত অনিন্দ্যসুন্দর, শান্তি এবং জ্ঞানের প্রতিভু হয়ে যাঁরা এ বিশ্বকে আলোকিত করেছিলেন। পৃথিবীতে বিপ্লব সৃষ্টিকারী সেসব আলোকিত মানুষের মধ্যে অন্যতম হলেন- আমিরুল মু'মিনীন ফিল হাদিস, ইসলামের এক জ্বলন্ত মোজেজা, ইমাম বোখারি (রহ.)। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বর্তমানে উজবেকিস্তানের অধীনে মুসলিম অধ্যুষিত একটি প্রসিদ্ধ নগরী বোখারায় বিশ্ববরেণ্য হাদিস শাস্ত্রবিদ ইমাম বোখারি (রহ.) ১৯৪ হিজরির ১৩ শাওয়াল মোতাবেক ৮১০ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই জুমার নামাজের পর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম মুহাম্মদ, উপনাম আবু আবদুল্লাহ। উপাধি আমিরুল মু'মিনীন ফিল হাদিস। জন্মস্থান বোখারায়, তাই তাঁকে বোখারি বলা হয়। তাঁর বাবা ইসমাইল, দাদা ইবরাহিম। তাঁর বাবা ছিলেন প্রসিদ্ধ হাদিস বিশারদ। তিনি ছিলেন তৎকালীন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হাম্মাদ (রহ.) ও ইমাম মালেক (রহ.) (৯৩-১৭৯ হি.)-এর অন্যতম শাগরেদ। ইমাম বোখারি (রহ.) শিক্ষা, জ্ঞান ও যোগ্যতা শুধু পিতার দিক থেকেই পাননি, বরং মায়ের দিক থেকেও অর্জন করেছিলেন। ইমাম বোখারি (রহ.)-এর মাও ছিলেন একজন মহীয়সী নারী। তিনি শৈশবেই পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হন। লালিত-পালিত হন তাঁর মমতাময়ী মায়ের কোলে।
শিক্ষাজীবন : ইমাম বোখারির শিক্ষাজীবন শুরু হয় কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি কোরআন মুখস্থ করেন। ১০ বছর বয়স থেকে তিনি হাদিস মুখস্থ করা শুরু করেন। এ সময়ই তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আবদুল্লাহ বিন মুবারক (রহ.) এবং ওয়াকি বিন জাররাহ (রহ.)-এর সব পাণ্ডুলিপি মুখস্থ করেন। তখন থেকে হাদিস চর্চার প্রতি তাঁর অন্য রকম আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তিনি নিজেই বলেন, '১০ বছর থেকে হাদিস চর্চায় আমি প্রচণ্ড আগ্রহ অনুভব করি।' তিনি ১৭ বছর বয়সে হাদিস শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৮ বছরের আগে থেকেই তাঁর কাছে লোকদের ভিড় বাড়তে থাকে। তিনি যখন হাদিস শিক্ষাদানে ব্রত হন, তখন তাঁর মুখে দাড়িও গজায়নি।
যাঁদের শিক্ষায় ধন্য হন ইমাম বোখারি : হাদিসের জ্ঞান অর্জনে হাজার হাজার মুহাদ্দিসের সান্নিধ্য লাভ করেছেন ইমাম বোখারি (রহ.)। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মুহাদ্দিসগণ হলেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.), ইয়াহইয়া বিন মায়িন, আলী ইবনুল মাদিনী এবং ইসহাক বিন রাহওয়াই।
উচ্চতর শিক্ষা লাভে বিদেশ গমন : ১৬ বছরেই তিনি মা এবং বড় ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম হজে যান। হজের পর তিনি মক্কা শরিফে থেকে যান এবং হেজাজের মুহাদ্দিসদের কাছে হাদিস পড়তে শুরু করেন। এ ছাড়া হাদিসের জ্ঞান লাভের অদম্য স্পৃহা নিয়ে তিনি চষে বেড়িয়েছেন সিরিয়া, বসরা, কুফা, মিসর, বাগদাদ, হেজাজসহ অসংখ্য ইসলামী নগরীতে। এসব শহর-নগরে তিনি বহুবার গিয়েছেন।
অসাধারণ স্মৃতিশক্তি : শৈশবেই তাঁর অসাধারণ স্মৃতিশক্তি এবং তীক্ষ্ন মেধার স্ফূরণ ঘটে। 

Saturday, August 9, 2014

কুরআন-সুন্নায় কবরের আজাব

কুরআন-সুন্নায় কবরের আজাব


কুরআন হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ার কারণে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ইজমা হচ্ছে- কবর আযাব এবং মুনকার নকীর কর্তৃক কবরে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার প্রক্রিয়া হক। এর প্রতি ঈমান আনা জরুরি। ইমাম আবু হানীফা থেকে শুরু করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সকল ইমামগণের এটাই সর্বসম্মত আক্বীদা।

কবর আযাবের প্রতি ঈমান আনতে সর্বপ্রথম অস্বীকার করে যে বাতিল ফিরকা, তারা হচ্ছে খারেজী সম্প্রদায়। পরবর্তী পর্যায়ে আরেকটি বাতিল ফিরকহা মুতাযিলা সম্প্রদায় বিষয়ে বিভিন্ন মনগড়া যুক্তির অবতারণা করে কুরআন-হাদীসের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করার দুঃসাহস দেখায়। মুতাযিলা সম্প্রদায়ের দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল যুক্তি। তথাকথিত যুক্তিতে না টিকলে কুরআন হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করা বা অর্থ বিকৃত করতে তাদের আপত্তি ছিল না। অপরপক্ষে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা হচ্ছে যেখানে কুরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে, তা কোন যুক্তির মোকাবেলায় প্রত্যাখ্যান করার প্রশ্নই আসে না। যুক্তি বড় না কুরআন সুন্নাহ বড়। যুক্তিই যদি চূড়ান্ত ফায়সালাকারী হতো, তাহলে আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূল বা ওয়াহী প্রেরণ করার কি প্রয়োজন ছিল? বিভিন্ন বাতিল গোমরাহ ফিরকা যুগে যুগে এসব বিতর্ক ফিৎনা সৃষ্টি করে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হলেও মাঝে মধ্যেই তাদের প্রেতাত্মাকে কিছু উর্বর মস্তিষ্কের উপর ভর করতে দেখা যায়। মুসলিম উম্মাহর মূল স্রোতধারা বিগত দেড় হাজার বৎসর ধরে বিষয়ে কোন শোবাসন্দেহের শিকার হয়নি বরং সকল আক্বীদার কিতাবে এটিকে ইসলামী আক্বীদার অন্যতম বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সে ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। তাহলে এমন একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়ে নতুন করে কলম ধরার দরকার কি? আসা স্বাভাবিক।
সম্প্রতি এক ভাই এসে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন জনৈক লেখকেরক্ববর আযাবশিরোনামে এক লেখার প্রতি। যা ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিকীতে প্রকাশিত হয়েছে। সাপ্তাহিকীটির ইসলামী পরিচিতি থাকলে সম্ভবত সম্পাদক খেয়াল না করার কারণেই এমনটি ঘটে গেছে। পত্রিকাটি ব্যাপকভাবে ইসলামী মহলে পঠিত বিধায় আশঙ্কা রয়েছে হয়তো বা কেউ অযথা বিষয়ে সংশয়ের শিকার হয়ে যেতে পারেন। অনুভূতি থেকেই কলম দরার প্রয়াস। অবশ্য বিষয়ে আমি নতুন কোন গবেষণা শুরু করছিনা। ইমাম আবু হানীফা থেকে শুরু করে সম্মানিত ইমামগণ বিষয়ে যথেষ্ট লেখালেখি করে গেছেন। যে সমস্ত মৌলিক গ্রন্থ বক্ষ্যমান নিবন্ধের মূল রসদ যুগিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- আল ফিকহুল আকবার, মূল ইমাম আবু হানীফা (মৃত্যু ১৫০ হিঃ), ব্যাখ্যা আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (মৃত্যু ১০১৪ হিঃ), আল আক্বীদাহ আল তাহাওয়ীয়াহ, মূল ইমাম তাহাওয়ী, (মৃত্যু ৩২১ হিঃ) ব্যাখ্যা- ইমাম আবুল ইয্য্ আল হানাফী (মৃত্যু ৭৯২ হি.) আল ইবানাহ আন উছুল আদ্দীয়ানাহ, রচনা- ইমাম আবুল হাসান আল আশয়ারী (মৃত্যু ৩২৪ হিঃ) এবং মিনহাজুল মুসলিম, রচনা- শায়খ আবু বকর জাবের আল জাযায়েরী।
প্রথমেই দেখা যাক পবিত্র কুরআনে বিষয়ে কি আছে। আল্লাহ তায়ালা ফিরআউনের ব্যাপারে বলেছেন, ‘‘ফিরাউন তার অনুচরদেরকে শোচনীয় আযাব গ্রাস করে ফেলল। সকাল সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয়। আর যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফেরআউন তার দলবলকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর।’’-(সূরা আল মুমিনঃ ৪৫-৪৬)
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে কঠিনভাবে আযাব বলতে হাশরের ময়দানে চূড়ান্ত ফায়সালার পর জাহান্নামে নিক্ষেপ বুঝানো হয়েছে। আর সকাল সন্ধ্যায় আগুনের সামনে পেশ করার ব্যাপারটা বরযখের (কবরের) জিন্দেগীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মুফাসসেরীনে কেরাম বলেছেন, কবরের আযাব যে সত্য উপরোক্ত আয়াত তার প্রমাণ (দেখুন : তাফসীরে কুরতুবী, ইবন কাছীর, সূরা : আল মুমিন : ৪৫-৪৬)
আল্লাহ তাআলা আরও এরশাদ করেছেন, “তাদেরকে ছেড়ে দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদের মাথায় বজ্রাঘাত পতিত হবে। সেদিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। গুনাহগারদের জন্য ছাড়াও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।”-(সূরা আত্তুর : ৪৫-৪৭)
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে ‘‘এছাড়াও শাস্তি রয়েছেবলে কবরের আযাবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (দেখুন-আক্বীদা তাহাবিয়া, পৃ: ১৩৩, শরহু আল ফিকহুল আকবার, পৃ: ১৭১) আর কবরে সওয়াল জওয়াবের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, “আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা দুনিয়া আখেরাতের মজবুত রাখেন এবং যালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আর আল্লাহ যা চান তা করেন।” -(সূরা ইবরাহীম: ২৭) বুখারী মুসলিমের হাদীসে এসেছে আয়াতে আখেরাত বলতে বরযখ অর্থাৎ কবরের জগৎ বুঝানো হয়েছে (দেখুন- মাআরেফুল কুরআন, পৃ: ৭১৭, শারহুল ফিকহুল আকবর, পৃ: ১৭০) আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের শাস্তির ব্যাপারে আরও এরশাদ করেছেন, “আমি তাদেরকে দুবার আযাব প্রদান করবো। তারপর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে বৃহত্তম আযাবের দিকে।” -(সূরা তাওবা: ১০১) এখানে বৃহত্তম আযাব বলতে হিসাব-নিকাশের পর জাহান্নামের আযাব, আর প্রথম দুবারের আযাব বলতে মুমিনদের হাতে নিহত হওয়া এবং বরযখ অর্থাৎ কবরের আযাবের কথা বুজানো হয়েছে। (দেখুন- আল ইবানাহ, পৃ: ৮৮)
কুরআনের পর আমরা দেখি এবার হাদীসে বিষয়ে কি এসেছে। কবরের আযাবের বিষয়ে এত সংখ্যক হাদীস এসেছে যে, শব্দের ঈষৎ তারতম্যের কারণে শব্দের দিক থেকে মুতাওয়াতির না হলেও মূল বক্তব্যের দিক থেকে তা মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ফলে বিষয়ে ঈমান আনা ওয়াজিব (দেখুন-আক্বীদা তাহাওয়ীয়া, পৃ: ১৩৬ শারহ্ আল ফিকহুল আকবার, পৃ: ১৭১) তন্মধ্য থেকে নিম্নে কতিপয় হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে-
বারা বিন আযেব (রা.) কর্তৃক বর্ণিত একটি বিশাল হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বাকী আল গারকাদ অর্থাৎ জান্নাতুল বাকীতে আমরা একটি জানাযায় এসেছিলাম। নবী করীম (সা.) আমাদের কাছে এসে বসলেন। আমরা তাকে ঘিরে বসলাম। সবাই এত চুপ যে মনে হয় মাথার উপর পাখী বসে আছে। কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। তিনি তিনবার করে বলে উঠলেন, আমি আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই”---(আহমাদ/ আবু দাউদ/ ইবনে মাযাহ/ হাকেম/ ইবনে হাব্বান/ আবু আওয়ানা)
ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা.) দুটো কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় বলছিলেন, তাদের কবর আযাব চলছে। তবে তেমন কোন বিরাট কারণে তাদের আযাব হচ্ছে না। একজন প্রশ্রাব করার পর ভাল করে পবিত্র হতেন না। আর দ্বিতীয়জন চোগলখুরী করে বেড়াতেন। তারপর একটা তাজা ডাল নিয়ে দুভাগ করে দুকবরে গ্রোথিত করে বললেন, আশা করছি দুটো ডাল না শুকানো পর্যন্ত তাদের আযাব কিছু লঘু করা হবে। -(বুখারী, মুসলিম)
আনাস বিন মালেক (রা.) (বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, যদি তোমরা দাফন-কাফন ছেড়ে না দিতে, তাহলে আল্লাহর কাছে চাইতাম, তিনি যেন তোমাদেরকে সরাসরি কবর আযাব শুনার ব্যবস্থা করে দেন। যা আমাকে শুনানো হয়েছে। -(মুসলিম, নাসাঈ, আহমদ)
নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার সাথীরা বিদায় নিয়ে চলে যায়, সে তাদের পায়ের জুতা/স্যান্ডেলের আওয়াজও শুনতে পায়। সময়েই দুজন ফিরিশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন। জিজ্ঞেস করেন, “ লোকটি অর্থাৎ মোহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? মুমিন ব্যক্তি তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি আল্লাহর বান্দা রাসূল। তখন তাকে বলা হয়, তাকিয়ে দেখ, যে জাহান্নামে তোমার আসনটা, সেটার পরিবর্তে আল্লাহ তোমাকে জান্নাতের আসন বরাদ্ধ করে দিয়েছেন। উভয় আসনই সে দেখতে পাবে। মুনাফিক বা কাফিরকে যখন প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি বলতে পারো লোকটা সম্পর্কে? সে বলবে, আমি তো কিছু জানি না। লোকেরা যা বলতো, আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি তো জানতে চাওনি, অনুসরণও করনি। আর মুহূর্তেই বিশাল এক লৌহ হাতুড়ি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হবে। আঘাতের ফলে সে বিকট স্বরে আর্তচিৎকার করে উঠবে, যা তার আশেপাশে জিন, ইনসান দুসৃষ্টি চাড়া আর সবাই শুনতে পাবে। -(বুখারী)

সূত্র – মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান, দৈনিক ইনকিলাব