কুরআন-সুন্নায় কবরের আজাব
কুরআন ও হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ার কারণে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ইজমা হচ্ছে- কবর আযাব এবং মুনকার নকীর কর্তৃক কবরে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার প্রক্রিয়া হক। এর প্রতি ঈমান আনা জরুরি। ইমাম আবু হানীফা থেকে শুরু করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সকল ইমামগণের এটাই সর্বসম্মত আক্বীদা।
কবর আযাবের প্রতি ঈমান আনতে সর্বপ্রথম অস্বীকার করে যে বাতিল ফিরকা, তারা হচ্ছে খারেজী সম্প্রদায়। পরবর্তী পর্যায়ে আরেকটি বাতিল ফিরকহা মু’তাযিলা সম্প্রদায় এ বিষয়ে বিভিন্ন মনগড়া যুক্তির অবতারণা করে কুরআন-হাদীসের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করার দুঃসাহস দেখায়। মু’তাযিলা সম্প্রদায়ের দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল যুক্তি। তথাকথিত যুক্তিতে না টিকলে কুরআন হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করা বা অর্থ বিকৃত করতে তাদের আপত্তি ছিল না। অপরপক্ষে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা হচ্ছে যেখানে কুরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে, তা কোন যুক্তির মোকাবেলায় প্রত্যাখ্যান করার প্রশ্নই আসে না। যুক্তি বড় না কুরআন সুন্নাহ বড়। যুক্তিই যদি চূড়ান্ত ফায়সালাকারী হতো, তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূল বা ওয়াহী প্রেরণ করার কি প্রয়োজন ছিল? বিভিন্ন বাতিল ও গোমরাহ ফিরকা যুগে যুগে এসব বিতর্ক ও ফিৎনা সৃষ্টি করে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হলেও মাঝে মধ্যেই তাদের প্রেতাত্মাকে কিছু উর্বর মস্তিষ্কের উপর ভর করতে দেখা যায়। মুসলিম উম্মাহর মূল স্রোতধারা বিগত দেড় হাজার বৎসর ধরে এ বিষয়ে কোন শোবাসন্দেহের শিকার হয়নি বরং সকল আক্বীদার কিতাবে এটিকে ইসলামী আক্বীদার অন্যতম বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সে ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। তাহলে এমন একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়ে নতুন করে কলম ধরার দরকার কি? আসা স্বাভাবিক।
সম্প্রতি এক ভাই এসে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন জনৈক লেখকের ‘ক্ববর আযাব’ শিরোনামে এক লেখার প্রতি। যা ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিকীতে প্রকাশিত হয়েছে। সাপ্তাহিকীটির ইসলামী পরিচিতি থাকলে সম্ভবত সম্পাদক খেয়াল না করার কারণেই এমনটি ঘটে গেছে। পত্রিকাটি ব্যাপকভাবে ইসলামী মহলে পঠিত বিধায় আশঙ্কা রয়েছে হয়তো বা কেউ অযথা এ বিষয়ে সংশয়ের শিকার হয়ে যেতে পারেন। এ অনুভূতি থেকেই কলম দরার এ প্রয়াস। অবশ্য এ বিষয়ে আমি নতুন কোন গবেষণা শুরু করছিনা। ইমাম আবু হানীফা থেকে শুরু করে সম্মানিত ইমামগণ এ বিষয়ে যথেষ্ট লেখালেখি করে গেছেন। যে সমস্ত মৌলিক গ্রন্থ বক্ষ্যমান এ নিবন্ধের মূল রসদ যুগিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- আল ফিকহুল আকবার, মূল ইমাম আবু হানীফা (মৃত্যু ১৫০ হিঃ), ব্যাখ্যা আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (মৃত্যু ১০১৪ হিঃ), আল আক্বীদাহ আল তাহাওয়ীয়াহ, মূল ইমাম তাহাওয়ী, (মৃত্যু ৩২১ হিঃ) ব্যাখ্যা- ইমাম আবুল ইয্য্ আল হানাফী (মৃত্যু ৭৯২ হি.) আল ইবানাহ আন উছুল আদ্দীয়ানাহ, রচনা- ইমাম আবুল হাসান আল আশয়ারী (মৃত্যু ৩২৪ হিঃ) এবং মিনহাজুল মুসলিম, রচনা- শায়খ আবু বকর জাবের আল জাযায়েরী।
প্রথমেই দেখা যাক পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে কি আছে। আল্লাহ তা’য়ালা ফিরআউনের ব্যাপারে বলেছেন, ‘‘ফিরাউন ও তার অনুচরদেরকে শোচনীয় আযাব গ্রাস করে ফেলল। সকাল সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয়। আর যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফেরআউন ও তার দলবলকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর।’’-(সূরা আল মু’মিনঃ ৪৫-৪৬)
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে কঠিনভাবে আযাব বলতে হাশরের ময়দানে চূড়ান্ত ফায়সালার পর জাহান্নামে নিক্ষেপ বুঝানো হয়েছে। আর সকাল সন্ধ্যায় আগুনের সামনে পেশ করার ব্যাপারটা বরযখের (কবরের) জিন্দেগীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মুফাসসেরীনে কেরাম বলেছেন, কবরের আযাব যে সত্য উপরোক্ত আয়াত তার প্রমাণ (দেখুন : তাফসীরে কুরতুবী, ইবন কাছীর, সূরা : আল মু’মিন : ৪৫-৪৬)।
আল্লাহ তা’আলা আরও এরশাদ করেছেন, “তাদেরকে ছেড়ে দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদের মাথায় বজ্রাঘাত পতিত হবে। সেদিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। গুনাহগারদের জন্য এ ছাড়াও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।”-(সূরা আত্তুর : ৪৫-৪৭)
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে ‘‘এছাড়াও শাস্তি রয়েছে” বলে কবরের আযাবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (দেখুন-আক্বীদা তাহাবিয়া, পৃ: ১৩৩, শরহু আল ফিকহুল আকবার, পৃ: ১৭১)। আর কবরে সওয়াল জওয়াবের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, “আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের মজবুত রাখেন এবং যালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আর আল্লাহ যা চান তা করেন।” -(সূরা ইবরাহীম: ২৭)। বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে এসেছে এ আয়াতে আখেরাত বলতে বরযখ অর্থাৎ কবরের জগৎ বুঝানো হয়েছে (দেখুন- মাআ’রেফুল কুরআন, পৃ: ৭১৭, শারহুল ফিকহুল আকবর, পৃ: ১৭০)। আল্লাহ তা’আলা মুনাফিকদের শাস্তির ব্যাপারে আরও এরশাদ করেছেন, “আমি তাদেরকে দু’বার আযাব প্রদান করবো। তারপর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে বৃহত্তম আযাবের দিকে।” -(সূরা তাওবা: ১০১)। এখানে বৃহত্তম আযাব বলতে হিসাব-নিকাশের পর জাহান্নামের আযাব, আর প্রথম দু’বারের আযাব বলতে মু’মিনদের হাতে নিহত হওয়া এবং বরযখ অর্থাৎ কবরের আযাবের কথা বুজানো হয়েছে। (দেখুন- আল ইবানাহ, পৃ: ৮৮)
কুরআনের পর আমরা দেখি এবার হাদীসে এ বিষয়ে কি এসেছে। কবরের আযাবের বিষয়ে এত সংখ্যক হাদীস এসেছে যে, শব্দের ঈষৎ তারতম্যের কারণে শব্দের দিক থেকে মুতাওয়াতির না হলেও মূল বক্তব্যের দিক থেকে তা মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ফলে এ বিষয়ে ঈমান আনা ওয়াজিব (দেখুন-আক্বীদা তাহাওয়ীয়া, পৃ: ১৩৬ ও শারহ্ আল ফিকহুল আকবার, পৃ: ১৭১)। তন্মধ্য থেকে নিম্নে কতিপয় হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে-
বারা বিন আযেব (রা.) কর্তৃক বর্ণিত একটি বিশাল হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বাকী আল গারকাদ অর্থাৎ জান্নাতুল বাকীতে আমরা একটি জানাযায় এসেছিলাম। নবী করীম (সা.) আমাদের কাছে এসে বসলেন। আমরা তাকে ঘিরে বসলাম। সবাই এত চুপ যে মনে হয় মাথার উপর পাখী বসে আছে। কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। তিনি তিনবার করে বলে উঠলেন, আমি আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই”---(আহমাদ/ আবু দাউদ/ ইবনে মাযাহ/ হাকেম/ ইবনে হাব্বান/ আবু আওয়ানা)
ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা.) দুটো কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় বলছিলেন, তাদের কবর আযাব চলছে। তবে তেমন কোন বিরাট কারণে তাদের এ আযাব হচ্ছে না। একজন প্রশ্রাব করার পর ভাল করে পবিত্র হতেন না। আর দ্বিতীয়জন চোগলখুরী করে বেড়াতেন। তারপর একটা তাজা ডাল নিয়ে দু’ভাগ করে দু’কবরে গ্রোথিত করে বললেন, আশা করছি এ দুটো ডাল না শুকানো পর্যন্ত তাদের আযাব কিছু লঘু করা হবে। -(বুখারী, মুসলিম)
আনাস বিন মালেক (রা.) (বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, যদি তোমরা দাফন-কাফন ছেড়ে না দিতে, তাহলে আল্লাহর কাছে চাইতাম, তিনি যেন তোমাদেরকে সরাসরি কবর আযাব শুনার ব্যবস্থা করে দেন। যা আমাকে শুনানো হয়েছে। -(মুসলিম, নাসাঈ, আহমদ)
নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার সাথীরা বিদায় নিয়ে চলে যায়, সে তাদের পায়ের জুতা/স্যান্ডেলের আওয়াজও শুনতে পায়। ঐ সময়েই দু’জন ফিরিশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন। জিজ্ঞেস করেন, “এ লোকটি অর্থাৎ মোহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? মু’মিন ব্যক্তি তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তাকে বলা হয়, তাকিয়ে দেখ, ঐ যে জাহান্নামে তোমার আসনটা, সেটার পরিবর্তে আল্লাহ তোমাকে জান্নাতের আসন বরাদ্ধ করে দিয়েছেন। উভয় আসনই সে দেখতে পাবে। মুনাফিক বা কাফিরকে যখন প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি বলতে পারো এ লোকটা সম্পর্কে? সে বলবে, আমি তো কিছু জানি না। লোকেরা যা বলতো, আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি তো জানতে চাওনি, অনুসরণও করনি। আর ঐ মুহূর্তেই বিশাল এক লৌহ হাতুড়ি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হবে। আঘাতের ফলে সে বিকট স্বরে আর্তচিৎকার করে উঠবে, যা তার আশেপাশে জিন, ইনসান এ দু’সৃষ্টি চাড়া আর সবাই শুনতে পাবে। -(বুখারী)
সূত্র – মুহাম্মদ মনজুর
হোসেন খান, দৈনিক
ইনকিলাব
সকাল সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয়। আর যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফেরআউন ও তার দলবলকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর।’’-(সূরা আল মু’মিনঃ ৪৫-৪৬)
ReplyDeleteউপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে কঠিনভাবে আযাব বলতে হাশরের ময়দানে চূড়ান্ত ফায়সালার পর জাহান্নামে নিক্ষেপ বুঝানো হয়েছে। আর সকাল সন্ধ্যায় আগুনের সামনে পেশ করার ব্যাপারটা বরযখের (কবরের) জিন্দেগীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এখানে কবরের মানুষকে কোথায় বলা হল ? মানুষ মরে গেলে আত্মা চলে যায় আল্লাহর কাছে । বডি নিচে পড়ে থাকে । মৃত শরীরকে আগুনের সামনে নিয়ে যাওয়া হয় তা তো বলা হয় নি । আত্মা যেহেতু আল্লাহর কাছে থাকে সেহেতু আত্তাকে দেখানো হয় আজাবের নমুনা । তা ছাড়া ইস্পেসাল ভাবে কোরআনের কোন আয়াতে কবরের আজাবের উল্লেখ নাই ।
তাদেরকে ছেড়ে দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদের মাথায় বজ্রাঘাত পতিত হবে। সেদিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। গুনাহগারদের জন্য এ ছাড়াও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।”-(সূরা আত্তুর : ৪৫-৪৭)
ReplyDeleteউপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে ‘‘এছাড়াও শাস্তি রয়েছে” বলে কবরের আযাবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এটা আপনার মতে ,দয়া করে মানুষকে ভুল শিক্ষা দিবেন না
তাদেরকে ছেড়ে দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদের মাথায় বজ্রাঘাত পতিত হবে। সেদিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। গুনাহগারদের জন্য এ ছাড়াও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।”-(সূরা আত্তুর : ৪৫-৪৭)
ReplyDeleteউপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে ‘‘এছাড়াও শাস্তি রয়েছে” বলে কবরের আযাবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এটা আপনার মতে ,দয়া করে মানুষকে ভুল শিক্ষা দিবেন না
সকাল সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয়। আর যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফেরআউন ও তার দলবলকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর।’’-(সূরা আল মু’মিনঃ ৪৫-৪৬)
ReplyDeleteউপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে কঠিনভাবে আযাব বলতে হাশরের ময়দানে চূড়ান্ত ফায়সালার পর জাহান্নামে নিক্ষেপ বুঝানো হয়েছে। আর সকাল সন্ধ্যায় আগুনের সামনে পেশ করার ব্যাপারটা বরযখের (কবরের) জিন্দেগীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এখানে কবরের মানুষকে কোথায় বলা হল ? মানুষ মরে গেলে আত্মা চলে যায় আল্লাহর কাছে । বডি নিচে পড়ে থাকে । মৃত শরীরকে আগুনের সামনে নিয়ে যাওয়া হয় তা তো বলা হয় নি । আত্মা যেহেতু আল্লাহর কাছে থাকে সেহেতু আত্তাকে দেখানো হয় আজাবের নমুনা । তা ছাড়া ইস্পেসাল ভাবে কোরআনের কোন আয়াতে কবরের আজাবের উল্লেখ নাই ।