ঘুমানোর ইসলামী বিধান
মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
রসুল
(সা.) সব সময় ডান
পাশ হয়ে ডান হাতের
তালুর ওপর মুখমণ্ডলের অংশ
বিশেষ (গাল) রেখে কিবলামুখী
হয়ে শয়ন করতেন।
এর কারণ অজানা নয়। বুকের
বাম পাশে হৃৎপিণ্ডের অবস্থান। চিকিৎসকরা
সব সময় হৃৎপিণ্ডের ওপর
চাপ প্রয়োগে নিষেধ করেছেন।
সুতরাং কেউ বাম পাশ
হয়ে শয়ন করলে স্বাভাবিকভাবেই
তার হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ পড়বে। রসুল
(সা.) ঘুমানোর আগে এক খণ্ড
বস্ত্র দিয়ে তিনবার তার
বিছানা পরিষ্কার করে নিতেন যাতে
কোনো বিষাক্ত পোকামাকড় তাকে কামড়ানোর সুযোগ
না পায়। আমাদের
আজ ভাবতে অবাক লাগে
১৪০০ বছর আগে যখন
আধুনিক কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা
ছিল না তখনকার সময়ে
উম্মি নবী (সা.) আমাদের
ঘুমানোর আদর্শ পদ্ধতি বাতলে
গেছেন।
তাঁর
উপদেশ ছিল প্রজ্ঞাময় ও
রহমতস্বরূপ। রসুল
(সা.) এশার নামাজের পর
তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতেন এবং
রাতের শেষভাগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ
আদায় করতেন। আবু
হুরায়রা (রা)-এর মতে,
'রসুল (সা.) এশার নামাজের
পর ঘুমাতে পছন্দ করতেন। তিনি
এশার পর কথা বলা
পছন্দ করতেন না।'
দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের শহরের
লোকেরা গভীর রাত পর্যন্ত
টিভি দেখে ঘুমাতে যায়,
তাদের অনেকেই সূর্য ওঠার
আগে ফজরের নামাজই পড়তে
পারে না। এশার
নামাজ জামাতে পড়ার পর
ফজরের নামাজও জামাতে পড়া
হলে সারা রাতই নামাজে
কেটেছে ধরে নেওয়া হয়। রসুল
(সা.) সূর্য ওঠার পর
ঘুমানোকে রিজিকের জন্য ক্ষতিকর বলে
মনে করতেন। দিন
কাজের জন্য আর রাত
বিশ্রাম বা আরামের জন্য,
রাত নতুন করে শক্তি
সঞ্চয়ের জন্য। সময়
থাকা সাপেক্ষে দিনের বেলায় দুপুরের
আহারের পর একটু বিশ্রাম
(কায়লুলাহ) করে নেওয়া যায়। এটা
স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
এর ফলে রাতের বেলায়
আল্লাহর ইবাদতে যে কষ্ট
হয় তা লাঘব হয়। এর
জন্য গভীর ঘুমের প্রয়োজন
হয় না। এর
জন্য শুধু বিছানায় শুয়ে
একটু বিশ্রাম নিলেই চলে।
সাহল ইবন সা'দ
(রা) বলেন, 'আমরা কায়লুলাহ
করতাম আর জুমার নামাজের
পর আহার করতাম।'
আসলে যারা রাতে ঘুমায়
না তারা অজ্ঞ ছাড়া
কিছুই নয়। রসুল
(সা.) ঘুমাতে যাওয়ার আগে
দোয়া করতেন, 'হে আল্লাহ! আমাকে
তোমার শাস্তি হতে রক্ষা
কর যেদিন তুমি তোমার
বান্দাদের একসাথ করবে বা
তোমার বান্দাদের জীবিত করে উঠাবে।' চিকিৎসা
বিজ্ঞানও অতিরিক্ত রাত জাগার ব্যাপারে
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
তাই আসুন আমরা ইসলামী
বিধানের আলোকে ঘুমানোর অভ্যাস
করি।
লেখক
: খতিব, হাতিরপুল বায়তুল মোমিন জামে
মসজিদ, ধানমণ্ডি, ঢাকা।
দৈনিক
বাংলাদেশ প্রতিদিন।
0 comments:
Post a Comment