Monday, March 30, 2015

নিকট ভবিষ্যতে ইসলামের নিশ্চিত বিজয় প্রসঙ্গে

নিকট ভবিষ্যতে ইসলামের নিশ্চিত বিজয় প্রসঙ্গে

উবায়দুর রহমান খান নদভী :

আজ থেকে ৮৫৭ বছর আগে অর্থাৎ ১১৫৮ সালে উপমহাদেশের বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) একটি কাসিদা বা কবিতা রচনা করেন। সাধকসুলভ দিব্যদৃষ্টি নিয়ে গভীর ধ্যান  অভিনিবেশসহ রচিত ফার্সি ভাষায়  কবিতা পুরোটাই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক। অদৃশ্যের পর্দা উন্মোচন করেঅনাগত দিনের যনবিকা ফাঁক করে যে রহস্য উদ্ঘাটিত হয় তাকে বলা হয় ‘কাশ্ফ মনের দোদুল্যমান অবস্থায় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ মনোসংযোগ করে সঠিক সিদ্ধান্ত চাইলে অর্থাৎ ‘ইসতিখারা’ করলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হয়। নিষ্কলুষ অন্তরে যে ভাব আল্লাহর পক্ষ থেকে উদিত হয়তার নাম ‘ইলহাম শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) ‘কাশ্ফ’  ‘ইলহাম মাধ্যমে প্রাপ্ত এসব অদৃশ্য ইশারা তথা ভবিষ্যবার্তা লাভ করেন। যা তার ঐতিহাসিক সাড়াজাগানো কবিতায় বিবৃত হয়। ইংরেজ আমলে ব্রিটিশ শাসকরা এটি নিষিদ্ধ করে। এর দ্বারা যুগে যুগে মুসলমানেরা উজ্জীবিত হয়েছেন। বর্তমানেও এর আবেদন  প্রভাব ভারতবর্ষে সমভাবে কার্যকর
শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) ভবিষ্যদ্বাণীতে বর্ণিত বহু বিষয় সংঘটিত হয়ে গেছে। অল্প কিছু বিষয় সামনে রয়েও গেছে। অতীতে সংঘটিত বিষয়াদির সাথে ভবিষ্যদ্বাণীর অসাধারণ মিল দেখতে পেয়েবিশ্ববাসী অবাক। পাশ্চাত্যের অনেক গবেষক শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.)-এর কাশ্ফে প্রাপ্ত ইলহামী  কবিতা নিয়ে অতীতে যেমন গবেষণা করেছেনবর্তমানেও এটি নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। এখানে ৫৮ লাইন বিশিষ্ট কবিতার বিষয়বস্তুসংঘটিত ঘটনাবলীভবিষ্যৎ ইশারা ইত্যাদি নিয়ে সামান্য আলোকপাত করা হল। কবিতার শুরুতে শাহ সাহেব বলেনভারতবর্ষের অতীত পেছনে রেখে এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। মুসলিম বিজয়ের পর প্রথম পর্বের শাসন শেষে দ্বিতীয় পর্বে শুরু হবে মোগল শাসন। ইংরেজরা এসে  শাসনের সমাপ্তি ঘটাবে। শাহাবুদ্দিন মুহাম্মদ ঘোরীর (১১৭৫সময় থেকে সুলতান ইবরাহীম লোদীর (১৫২৬সময় পর্যন্ত প্রথম পর্ব আর সম্রাট জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর (১৫২৬)-এর পর থেকে (১৭৫৭পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্ব ধরা হয়েছে। কবিতায় তিনি যেসব কথা বলেছিলেন শত শত বছর পর সেসব বিষয় অত্যাশ্চর্যভাবে বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। বাস্তবায়িত ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেপাঠানদের পতনমোগলদের উত্থানবিলাসিতা  দুঃশাসনের সূচনা ইংরেজদের অভ্যুদয় ভারতবাসীর উপর নির্যাতন পাশ্চাত্য সভ্যতার ক্ষতিকর প্রভাব বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে রাশিয়া  জাপানের যুদ্ধঅবশেষে চুক্তি স্বাক্ষর ১৮৯৮ থেকে ১৯০৮ পর্যন্ত ভারতবর্ষে প্লেগের প্রাদুর্ভাব। অন্তত  লাখ লোকের প্রাণহানি। ১৭৭০ সালে ভারতে সংঘটিত মহাদুর্ভিক্ষ। বাংলা অঞ্চলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। বাংলা সন ১১৭৬- সংঘটিত  ঘটনায়  অঞ্চলের প্রায় এক-তৃতীয় মানুষ মারা যায়। ইতিহাসে  দুর্ভিক্ষ ৭৬ মন্বন্তর নামে খ্যাত। ১০১৯৪৪ সালে জাপানের টোকিও  ইয়াকোহামায় প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। ১১১৯১৪ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত চার বছর ইউরোপে প্রথম মহাযুদ্ধ সংঘটিত। জার্মানী  ইংল্যান্ডের মধ্যকার যুদ্ধ। ১২বিশ্বযুদ্ধে  কোটি ৩১ লাখ মানুষের মৃত্যু। ১৩১৯১৯ সালের প্যারিসের ভার্সাই শহরে প্রথম মহাযুদ্ধ বন্ধে সন্ধি চুক্তি এবং পরবর্তীতে তা ভেঙ্গে যাওয়া। ১৪২১ বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সূচনা। প্রথম মহাযুদ্ধের সমাপ্তি ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর। ১৯৩৯ সালের  সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শুরু। ১৫আণবিক বোমার ব্যবহার। হিরোশিমা  নাগাসাকিতে মার্কিনীদের বোমা হামলা। ১৬রেডিও-টিভি  উন্নত যোগাযোগ মাধ্যম আবিষ্কারের কথা। ১৭ইংল্যান্ডআমেরিকাইটালীজার্মানী  জাপানের নানা ঘটনা। ১৮১৯৪৭ সালের ইংরেজ বিদায়  কূটকৌশলপূর্ণ ভারত বিভক্তি। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে তিনটি পাক-ভারত যুদ্ধ। সাম্প্রদায়িক হানাহানি  জাতি-গোষ্ঠীগত অশান্তির বহিঃপ্রকাশ। ১৯পশ্চিমা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সূচনা  অপেক্ষাকৃত অযোগ্য লোকদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা। অন্যায়-অশ্লীলতাদুর্নীতি-পাপাচার  নৈরাজ্যের ব্যাপক প্রসার। ২০বড় একটি মুসলিম অঞ্চলের বিপর্যয়। ২১মুসলিম নামধারী হিন্দুবান্ধব নেতৃত্ব কায়েম। নামের শুরুতে ‘’  শেষে ‘’ বিশিষ্ট ব্যক্তির দ্বারা মুসলিমদের প্রভূত ক্ষতি। ২২নামের শুরুতে ‘’ এমন একটি প্রভাবশালী হিন্দুর ইসলামগ্রহণ  মুসলমানদের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি। ২৩মধ্যপ্রাচ্যআফগানিস্তান  ভারতীয় মুসলিমবাহিনীর সম্মিলিত বিজয়াভিযান এবং ভারতবর্ষ হতে অধর্মঅশ্লীলতা  যাবতীয় অপকর্মের অবসান। ২৪মধ্যপ্রাচ্য থেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা। ২৫অত্যাচারজুলুমঅন্যায়-আগ্রাসন  মানবতা বিরোধী বিশ্বসন্ত্রাসের ফলে একটি পরাশক্তির পরিণতি হবে চরম শোচনীয়। প্রভাব প্রতিপত্তি শেষ হয়ে সেটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়বে। সে পরাশক্তিটির নামের আদ্যাক্ষর ‘আলিফ’ ২৬ভারতবর্ষের মহাপরিবর্তন  উগ্র পরাশক্তিটির পতনের পর আসবেন ইমাম মাহদী (.)
 ছাব্বিশটি পয়েন্টের মধ্যে ২৩২৪২৫  ২৬ নিয়ে গবেষণা করলে দেখা যাবে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনাপর্ব এখন চলছে। ইংল্যান্ড-এর অবস্থা এখন কী বৃটিশ সাম্রাজ্যের সীমানায় একসময় সূর্য ডুবত নাবর্তমানে এর সীমানা কতটুকুমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী কতটুকু জনপ্রিয়আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এখন কেমনইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের নৈতিক অবস্থান  সভ্য পৃথিবীর সমর্থন এখন কোন পর্যায়ে রয়েছেলিবিয়াতিউনিসিয়ামিসরইয়েমেনজর্দানসিরিয়া পরিস্থিতি কতটুকু পাশ্চাত্য-বান্ধবইরাক সিরিয়া  জর্দান পরিস্থিতিতে মিত্রশক্তির পথ কতটুকু নিষ্কণ্টকসউদী আরবকুয়েতকাতারবাহরাইনআরব আমিরাত কোন পথে এগুচ্ছেইরান কোন পরিচয়ে উদ্ভাসিত হচ্ছে১০খেলাফতের শেষ নিদর্শন তুরস্ক কোন দিকে মোড় নিচ্ছে১১আফগানিস্তানে আগ্রাসন শেষে ১৩ বছর পর ন্যাটো কী নিয়ে বিদায় হলোআফগান জাতি কি তার মিশন  লক্ষ্যচ্যুত হয়ে গেছেপাকিস্তানের ভবিষ্যত কীভারত কোন্্ পথেবাংলাদেশ কেমন ভবিষ্যতের মুখোমুখি হবে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে দেখলে বিশ্লেষণটি কেমন দাঁড়ায়।
কবিতার শেষে শাহ্্ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) বলেছেনচুপ হয়ে যাও ওহে নেয়ামতমোটেও এগিয়ো না আর। আল্লাহর রহস্য আর ফাঁস করো না। যতুটুকু বলেছতাই প্রেরণা হিসাবে মুসলিমদের জন্য যথেষ্ট হবে। মুসলমানরা বিধর্মীদের শিক্ষাআদর্শ  সংস্কৃতি ছেড়ে দাও। পশ্চিমাদের অন্ধ অনুসরণ বাদ দাও। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর পথে মানবতার মুক্তির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা-সংগ্রাম- সাধনা চালিয়ে যাও। বিজয় তোমাদের সুনিশ্চিত। সহসাই ইরাকশামতুকিও হিজাজ ভূমি হবে ইমাম মাহদী (.)-এর সৈন্যদের লীলাভূমি। খোরাসানী বাহিনী হবে তাদের বড় সহায়ক। কোন এক হজের সময় কাবা গৃহ তওয়াফরত অবস্থায় মহান ইমামকে মুসলিম জনগণ প্রথম খুঁজে পাবে। মুজাহিদরা সারা পৃথিবী থেকে ছুটে গিয়ে তার অভিযানে যোগ দেবে। বিশ্বব্যাপী সকল শক্তি মুজাহিদদের হাতে পরাজিত হবে
বিশ্বজুড়ে উড্ডীন হবে ইসলামের বিজয় নিশান। বর্তমান সময়ে আল্লাহর পথে দৃঢ়পদ সংগ্রামী মুসলমানরা ইমাম মাহদী (.)-এরই অগ্রবর্তী বাহিনী। যখনই তিনি আবির্ভূত হবেনসমকালীন সব বিপ্লবী মুসলমান তার পতাকাতলে সমবেত হয়ে বিজয় অর্জনও উদযাপন করবে। বিজয় মুসলমানদেরই হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘ঈমানদারদের সাহায্য করা আমি নিজের উপর অবধারিত করে নিয়েছি।’ ‘তোমরা হীনবল হয়োনাউদ্বিগ্ন হয়োনাবিজয় তোমাদেরই হবেযদি প্রকৃত ঈমানদার হতে পার।’ খোদাদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে ঈমানদার মানুষের সংগ্রাম অবশ্যই সফল হবে। মুসলিমরাই বিজয়ী হবে পরীক্ষার সময় শেষ হতে আর বেশি দেরি নেই
দৈনিক ইনকিলাব ( ০২/০১/২০১৫)

0 comments:

Post a Comment