জিলহজের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত
সপ্তাহের সাত দিনের মাঝে জুমাবারটি যেমন বিশেষ মর্যাদায়
পূর্ণ, বছরের ১২ মাসের মধ্যে রমজান মাসটি যেমন অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, রমজানের ভেতরেও
আবার শেষ দশকটি তুলনামূলক বেশি মর্যাদাপূর্ণ, ঠিক তেমনি জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন বিশেষ
ফজিলত ও মর্যাদায় ভাস্বর। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ মাসের প্রথম দশকের
রাতগুলোর নামে কসমও করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ প্রভাতের, শপথ দশ রাত্রির।’ [সূরা ফজর
: ১-২]। মহান প্রতিপালকের এ কসম করা থেকেই এ দশকের বিশেষত্ব স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে।
সাধারণভাবে কোনো দিন-মাস কিংবা কোনো সময়ের বিশেষ ফজিলতের কথা বর্ণিত হলে আমাদের উচিত- সে সময়টাকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া। বেশি বেশি ইবাদত করা। যদি সে বিশেষ সময়ের কোনো বিশেষ আমলের কথা কুরআনে বা হাদিসে বর্ণিত হয়ে থাকে, তাহলে তা মনোযোগসহ আদায় করা। অন্যথায় যেকোনো নফল ইবাদত যেমনÑ নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি বেশি বেশি করা এবং ফরজ আমলগুলো ঠিক ঠিক আদায় করা। মহিমান্বিত এ দশকের ইবাদত সম্পর্কে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে : ‘এ দশ দিনের কোনো নেক আমল আল্লাহর কাছে যত প্রিয়, অন্য কোনো সময়ের আমল তাঁর কাছে এতটা প্রিয় নয়।’ [তিরমিজি শরিফ, হাদিস নম্বর ৭৫৭]।
এ দশকের আমলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হজ। ইসলামের পঞ্চভিত্তির অন্যতম এ মহান আমলটি সংঘটিত হয় এ মাসেই এবং এ দশকেই। হজের মাস তো শুরু হয়ে যায় রমজান-পরবর্তী শাওয়াল মাস থেকেই। সেটা হচ্ছে কেবল হজের নিয়ত বা ইহরাম করার সময়। শাওয়াল থেকে শুরু করে হজের আগপর্যন্ত যেকোনো সময়ই এ ইহরাম বাধা যায়। শাওয়াল মাস থেকেই পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে বায়তুল্লাহর উদ্দেশে মুসলমানগণ ছুটে আসতে শুরু করেন। কিন্তু হজের নির্ধারিত সময় সবার জন্যই এক। জিলহজের ৯ তারিখে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজের প্রধান ফরজ। পরদিন ১০ তারিখে তাওয়াফে জিয়ারত করতে হয় এবং এ তাওয়াফ করাও ফরজ। হজের কাজগুলো যদিও ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত, কিন্তু ৯ তারিখের এ আরাফার মাঠে অবস্থানই হজের মূল কাজ। সময়মতো এ আমল আদায় না হলে হজই আদায় হবে না।
কিন্তু বরকতময় এ হজের কাফেলায় তো সব মুসলমান শরিক হতে পারেন না। বরং ব্যয়বহুল ও কষ্টকর এ ইবাদতটি জীবনে মাত্র একবারই ফরজ। তাও যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জন্য। কেউ কেউ অবশ্য একাধিকবারও হজ পালন করতে যান। কেউ কেউ বারবার যান। তবে যারা এতে শরিক হতে পারছেন না তাদের জন্য রয়েছে কোরবানির বিধান। হাজীগণ ৯ জিলহজ আরাফার মাঠে অবস্থান শেষে রাতে রওনা হন মুজদালিফার দিকে। সেখানে সকাল পর্যন্ত থেকে চলে যান মিনায়। মিনায় গিয়ে জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয় এবং করতে হয় কোরবানি। আল্লাহর আদেশ ও ভালোবাসার সামনে হজরত ইব্রাহিম আ: আপন পুত্র হজরত ইসমাইল আ:-এর প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে তাকে যে কোরবানি করতে চেয়েছিলেন এবং সে জন্য চেষ্টাও করেছিলেন, এরই স্মৃতিবিজড়িত আমল হচ্ছে এ কোরবানি। হজের সাথে মিল রেখে অন্য মুসলমানদের জন্যও এ দিনে কোরবানির বিধান দেয়া হয়েছে। যেন এ মহান আমলটিতে শরিক হতে না পারলেও নিজ নিজ জায়গা থেকেই এর সাথে কিছুটা সাদৃশ্য কমপক্ষে অবলম্বন করা যায়।
ইহরাম বাঁধার পর থেকে হাজীগণ নখ, চুল কিছুই কাটতে পারেন না। ১০ তারিখে পাথর মেরে কোরবানি করার পর তারা চুল মুণ্ডিয়ে কিংবা ছেঁটে হালাল হন এবং নখ-চুল না কাটার বিধান থেকে বেরিয়ে আসেন। ঠিক একইভাবে যারা হজে না গিয়েও কোরবানি দেবেন, হাদিস শরিফে তাদেরকেও বলা হয়েছেÑ যেন জিলহজ মাস আসার পর নখ-চুল কিছুই না কাটে। কোরবানি আদায় করার পর তাদের নখ-চুল কাটবে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কেউ যদি কোরবানি দিতে চায়, তাহলে জিলহজ মাস আসার পর যেন সে আর তার নখ-চুল না কাটে।’ [মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ৫২৩৩]। হজপালনরত ভাগ্যবানদের জন্য ক্ষণে ক্ষণে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে যে রহমত নাজিল হতে থাকে, কোরবানি ও এর আগে ১০ দিন নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থেকে তাদের সাথে সামান্য সাদৃশ্য অবলম্বন করে আশা করা যায়Ñ সে রহমত কিছুটা হলেও আমাদের ভাগ্যে জুটবে।
এ দশকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য নফল ইবাদত হচ্ছে আরাফার দিনে অর্থাৎ ৯ জিলহজ রোজা রাখা। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা:’কে আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেছেন, ‘তাতে আগের ও পরের দুই বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ [মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ২৮০৪]।
সূত্র - নয়া দিগন্ত
0 comments:
Post a Comment