একজন বোনের ইসলামের আলো চিনে নেয়ার সত্যি ঘটনা
তখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। নতুন ভার্সিটিতে উঠেছি,অন্য রকম এক অনুভূতি! নিজেকে অনেক বড় লাগা শুরু হলো।ইন্টারের স্টুডেন্টদেরও মন হতো বাচ্চা! ভর্তি হয়েছি প্রাণরসায়নে,পছন্দের বিষয়। খুব আগ্রহ নিয়ে ক্লাস করতাম। ওভার স্মার্ট ছিলাম না কখনোই তবে ফ্যাশনেবল ছিলাম। চুল স্টাইল করে কাটা থাকতো। ড্রেসের সাথে ম্যাচিং কানের দুল,মাথার ক্লিপ পরতাম। নেল পলিশ দেয়া আমার খুব প্রিয় ছিল। ক্লাসে ছেলে মেয়ে সবাইকে তুই করে বলতাম। কারণ তুই এর সম্পর্ককে অন্যদিকে নেয়া এতো সোজা না যতোটা তুমি এর সম্পর্ককে অন্য কিছুতে কনভার্ট করা সোজা।ক্লাসে আমি আর একটা ছেলে মাত্র খ্রীস্টান ছিলাম।ধর্ম নিয়ে আমার তেমন মাথা ব্যথা ছিলনা। মাঝে মাঝে চার্চেও যেতাম, রেগুলার না। ভার্সিটিতে আমাদের ক্লাসেরই এক ছেলে একদিন হটাত আমাকে ইসলামের উপর একটা বই পড়তে দেয়।মওলানা তারিক জামিলের একটি ঊর্দু বই এর বাংলা ট্রান্সলেশন ছিল ওটা। আমি বইটা বাসায় আনি কিন্তু দুই তিন পাতার বেশি পড়িনি।এমনি ফেলে রেখেছিলাম বইটা। তখনো জানতাম না যে আমার বোন অলরেডি ইসলামের দিকে হাটা শুরু করেছে। ওকে দেখতাম বাইবেল পড়তো,বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করতো। তবে এগুলা নিছক আগ্রহ হিসেবেই দেখতাম। বইটা আমি পড়িনি কিন্তু সিহিন্তা ঠিকই পড়েছে। এবং ওই বইটা পড়ে ওর সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে ধারনা জন্মে এবং ওকে ইসলামের দিকে আরো আগ্রহী করে তোলে। সম্ভবত আল্লাহ বইটা ওর হাতে পৌছানোর জন্যই আমার মাধ্যমে ব্যবস্থা করেন। আমার জীবনে ওই বইএর কয়েক পাতা পড়া দিয়েই ইসলামের সূচনা হয় আলহামদুলিল্লাহ!
.আমার বোন প্রায়ই বলতো যে একটা না একটা ধর্ম তো সত্যি হবেই। সব ধর্ম তো একসাথে সত্যি হতে পারেনা। আমি জানতাম ও বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করছে। বাসায় অনেক বই দেখতাম। বাংলা কুরআন ছিলো,বুখারী শরীফ ছিলো,আরো অনেক বই ওকে কিনতে দেখেছি। আমি ক্লাস, পড়া, টিউশনি নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। এসব বই কোনোটাই পড়ে দেখতাম না। ও পড়তো আর আমাকে বলতো যে ইসলাম ধর্মই সত্য। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা।কুরআনের কিছু মিরাকেল এর কথা বলতো। ও যা যা জানতে পারতো অনেক কিছুই আমার সাথে আলোচনা করতো। আমি জানতাম সিহিন্তা আমাকে মিথ্যা বলবেনা এবং ও যদি বলে কিছু একটা সত্য তাহলে অবশ্যই জেনে শুনেই বলবে। তাই ও যা বলতো তাই এক বাক্যে মেনে নিতাম। যেহেতু খ্রীস্টান ধর্মের প্রতিও আমার খুব একটা আগ্রহ ছিলোনা তাই আমি প্রশ্নও কম করতাম। আমিও মেনে নিলাম আল্লাহই সত্য এবং একমাত্র তার কাছেই দুআ করতে হবে। তবে তখনো আমি সত্যিকার অর্থে ইসলাম কি, রাসূল (সা) এর সুন্নত, কি কি করা যাবে, কি করা যাবেনা, কেনো যাবেনা, কবীরা গুনাহ কোনগুলা ভালো মতো জানতামও না। শুধু মেনে নিলাম আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ! আমরা আসলে আমাদের আসে পাশের মানুষকে দেখে ইসলাম কি শিখতে পারিনা। আমার কিন্তু মুসলিম ফ্রেন্ডই বেশি ছিলো। কিন্তু আমি আল্লাহ বা ইসলাম সম্পর্কে ওদের থেকে কখনো কোনো ধারনা পাইনি। ওরা পুরাপুরি ইসলাম না মানলেও আল্লাহকে যে অনেক ভালোবাসতো তা ঠিকই বুঝতে পারতাম।
.আমি ও আমার বোন একসাথে পড়াশোনা করতাম। কয়েকদিন ধরে দেখছিলাম ওর পড়ার ভঙ্গিটা খুব অদ্ভুত। একদম সোজা হয়ে বসে কোলের উপর বই রেখে বির বির করে পড়তে থাকতো। ওর এই পড়ার স্টাইল নিয়ে আমি ফান করতাম ওর সাথে। ততোদিনে আল্লাহ যে সত্যি এবং ইসলামই যে আসল ধর্ম তা পুরাপুরি বিশ্বাস করতাম আমরা দুজন। সিহিন্তা বিভিন্ন বই পড়ে আরো অনেক যুক্তি দেখাতো। যদিও আমি নিজে তেমন বই পড়তাম না। ও যা বলতো তাই মানতাম। এখন বিশ্বাস তো করলাম,কিন্তু মুসলিম হবার প্রথম ধাপ সালাত আদায় করা, যেহেতু আমরা মুসলিম আমাদেরও সালাত আদায় করতে হবে কিন্তু আমরা তো আরবি জানিনা। কারো থেকে যে শিখবো সে উপায়ও নাই। তখন ইন্টারনেটে একটা ওয়েব সাইটের কথা জানলাম সিহিন্তার থেকে। .মাউন্টহিরা! সেখান থেকে সুরা শিখা যায় সহজে। সময় পেলে হেডফোনে ওই পেইজ থেকে সূরা শিখতে লাগলাম। যেহেতু তখন ধারনা ছিলোনা,আমি আয়াতুল কুরসি প্রথমে শিখা শুরু করলাম। এটাকেই নামাযের সূরা ভেবেছিলাম।যখন প্রায় অর্ধেক শিখেছি তখন সিহিন্তা বললো এটা না আগে সূরা ফাতিহা শিখতে! এতো কষ্ট করে এতোখানি শিখলাম এখন বলে এটা না!! আয়াতুল কুর্সি বাদ দিয়ে এবার শুরু করলাম সূরা ফাতিহা শিখা। দিনেবেলা যেহেতু আমার ক্লাস,টিউশনি ইত্যাদি থাকতো তাই রাত ছাড়া আমার সময় ছিলনা শিখার্। কিন্তু রাতে সবাই বাসায় থাকে। তাই সবাই ঘুমায় যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। ঘুমায় গেলে পিসিতে সূরা নিয়ে বসতাম। ফলে ধীরে ধীরে আগাতে লাগলো। এদিকে সিহিন্তার কতোদূর আগালো আমি জানিনা।
.একদিন আবার ওর পড়ার স্টাইল নিয়ে হাসছিলাম তখন সে বললো সে এভাবে আসলে ইশারায় সালাত পড়ে! আমি সূরা শিখা শুরু করার আগেই তার সব শিখা শেষ এবং সালাতের পদ্ধতি ও দুআ ও শিখা শেষ! এবং সে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ছাড়াও তাহাজ্জুতের সালাতও পড়ে!! আমি সূরা শিখা শুরু ঠিকই করেছিলাম কিন্তু স্ট্রং ঈমান তখনও ছিলোনা। কিন্তু সিহিন্তার প্রগ্রেস থেকে বুঝলাম ও ইসলামের ব্যপারে আসলে কতোটা সিরিয়াস। নামায পড়া শিখতে আমার অনেক সময় লেগেছে। যেহেতু আমি খুব বেশি কিছু জানতাম না ইসলামের ব্যপারে,তাই খুব বেশি আগ্রহ দিয়ে শিখতামও না। কিন্তু আমার বোন নামায পড়ে আমি পড়িনা,কেমন জানি লাগতো। এক সময় আমিও নামাযের জন্য প্রয়োজনীয় সূরা,দুআ শিখে ফেল্লাম। সারাদিন বাসায় কেও না কেও থাকে। লুকিয়ে নামায পড়ার উপায় নাই। তাই প্রায়ই দেখা যেতো সবাই ঘুমায় গেলে রাতের বেলা পাঁচ ওয়াক্তের নামায এক সাথে পড়তে হতো। তাও আবার ইশারায়। কারন রুমের দরজা খোলা থাকে,কেও বাথরুমে যেতে উঠলে নামায পড়তে দেখে ফেলতে পারে। কতোদিন এমন হয়েছে যে নামায পড়তে থাকতাম রাতে,কেও রুমে ঢুকতো আর লাফায় উঠে বই পড়ার ভান করতে থাকতাম। আমি রাতে পড়ি সব সময়,তাই কেও সন্দেহ করেনি। তাছাড়া ঘুমের ঘোরে থাকতো তাই খেয়ালও করতো না।
.আমার নখ বড় ছিলো। আগেই বলেছিলাম নেইল পালিশের হবি ছিলো আমার্। ওজু হবেনা তাই নখ কেটে ফেললাম। সবাইকে বললাম সামনে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা,নখের পিছে সময় নষ্ট হয় অনেক তাই কেটে ফেলেছি। পরীক্ষার পর আবার রাখবো। তবে পরীক্ষার পর আর রাখিনি।তখন কেও কিছু বললে বলতাম মনে থাকেনা,ভুলে দাঁত দিয়ে নখ কেটে ফেলি! মজার ব্যপার হচ্ছে নামায পড়তাম,সখের নখ কেটে ফেললাম কিন্তু তখনো আমি কুরআন পড়িনি,তেমন হাদিস জানতাম না। রাসূল (সা) সম্পর্কে ভালো ধারনাও ছিলোনা। ততটুকুই জানতাম যা সিহিন্তা বলতো। ও বার বার না বললে মনেহয়না নামায,ওজু এগুলাও এতো তারাতারি শিখা হতো না। আমরা দুই বোন ছোট বেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছি। একজন আরেকজনের উপর অন্ধ বিশ্বাস করতাম,এখনো করি। ও যা বলতো তার সত্যতা নিয়ে তাই মাথায় কখনো প্রশ্ন আসতোনা। তাই আল্লাহ যে সত্য,ইসলামই যে আসল ধর্ম মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম। হিজাব কেনো করতে হবে,পর্দা না করার কুফল কি,কেনো চুল ঢাকতে হবে এগুলা সবই বুঝতাম সিহিন্তার বদৌলতে।
.সিহিন্তাকে দেখতাম বাসা থেকে নরমালি বের হতো,বাসা থেকে কিছুদূর গিয়ে মাথায় কাপর দিতো। আর ফুল হাতা কামিজ পরতো। আমিও থ্রি কোয়ার্টার হাতা বা ফুল হাতা জামা পরতাম। কিন্তু মাথায় কাপর দেয়ার ক্ষেত্রে শয়তান আমাকে আটকে ফেললো। আমি গরম সহ্য করতে পারতাম না। বেশি গরমে থাকলে অসুস্থ্য হয়ে যাই। ক্লাসে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার রেকর্ডও আছে আমার্।ফলে মাথায় কাপর দেয়াটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো আমার জন্য। কয়েকদিন চেষ্টাও করেছি কিন্তু গলা মাথা ঢেকে বেশিক্ষন থাকতেই পারতাম না। মাথা ব্যথা করতো নাহলে মাথা ঘুরাতো। তাই মাথায় কাপর দেয়া এক রকম ছেড়েই দিলাম। তবে আগের মতো ফ্যাশন করে চুল কাটা, ম্যাচিং চুরি, কানের দুল পরা,ইত্যাদি ছেড়ে দিলাম। মাথায় কাপর দেয়ার ব্যপারে যে শয়তান আমাকে আটকিয়ে দিলো তা তখন এতো ভালোভাবে উপলব্ধি করিনি। এভাবেই কাটতে লাগলো দিন।.তবে অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেছে ততোদিনে। নামায পড়তাম গুরুত্য নিয়ে। হিজাব করতেও চেষ্টা করতাম। সবই ছিল সিহিন্তার থেকে শিখা। আমি নিজে ইসলাম নিয়ে স্টাডি করা বলতে যা বুঝায় তা তেমন করতাম না। এরই মাঝে এসে পরলো পবিত্র রমাদান মাস! লুকিয়ে রোজা রাখাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। একই বাসায় থেকেও না খেয়ে থাকা এবং তা কাওকে বুঝতে দেয়াও যাবেনা! কিন্তু তাই বলে কি আর রোজা রাখবোনা? শুরু হলো আরেক নতুন যুদ্ধ! সবার সাথে থাকবো,রোজা রাখবো আবার তা বাকিদের বুঝতে দেয়া যাবেনা। নি:সন্দেহে কঠিন কাজ। তবুও এটা মুসলিম হবার পর প্রথম রমাদান মাস! রোজা রাখবোনা ভাবাই যায়না! প্রথম সমস্যা হলো সেহেরি করা নিয়ে। রান্নাঘরে যেতে হয় মা-পাপার রুমের মধ্যদিয়ে। সুতরাং ভাত তরকারি পাবার কোনো আশা নাই। পাউরুটি কিনে রাখলাম আমরা রুমে। রাতে সেহেরি তো হবে। এতেই আমরা খুশি। সকালে এমনিতেও আমি নাস্তা না করে ক্লাসে যাই। তাই সকালের ব্যপারে চিন্তা নাই। তাছাড়া মা চাকরী করে।বাসায় মা পাপা কেও থাকেনা সারাদিন। খেয়েছি কিনা দুপুরে দেখার কেও নাই। আর ভাই বাসায় থাকে কিন্তু ও খেয়ালও করবেনা না খেলে।.তো শুরু হলো রোজা রাখা। প্রথম রোজা রাখার অনুভূতি যে কি দারুন ছিলো,কখনোই ভুলবোনা। শুক্রবার মা পাপা বাসায় থাকতো,তাই ওইদিন রোজা রাখতে পারতাম না। দেখা যেতো সারাদিন রোজা রেখেছি,বিকালে টিউশনি করে আসার সময় নানীর বাসায় গেছি দেখা করতে,নানী চা এনে দিলো। খাবোনা বলতে পারিনা কারন নানীর চা অনেক মজার হয় ও আমার প্রিয় সে জানে। কষ্ট করে রোজা রেখে তা ভেঙ্গে ফেলতে হতো। কারো বাসায় যাওয়াই ছেড়ে দিলাম রমাদানে। সেহেরি যে রোজ করতে পারতাম তাও না। যেদিন কিছু থাকতোনা পানি খেয়ে রোজা রাখতাম। রাতে লাইট জ্বালানো যাবেনা তাই পিসির মনিটরের আলোতে আমরা সেহেরি করতাম। একদিন আমরা বনরুটি খাচ্ছি এমন সময় মা রুমে প্রবেশ করলো। সিহিন্তা পিসির সামনেই ছিলো। কি করবে বুঝতে না পেরে মনিটর বন্ধ করে দিলো! আর আমরা খাবার লুকায় ফেললাম। মা কি বুঝলো জানিনা। তেমন প্রশ্ন করেনি। ইফতারিতে খুব একটা সমস্যা হতোনা।ইফতারির আগে রাস্তায় জ্যাম থাকে বলে মা ইফতারির সময় অফিস থেকে বের হতো। তাই ইফতারিতে ভাত খেতে পারতাম। কিন্তু যেদিন আগে বের হতো অফিস থেকে সেদিন ইফতারি আর করা হতোনা। দুপুরে সিহিন্তা ইচ্ছা করে কম ভাত রাধতো যাতে হাড়ি দেখে মা ভাবে আমরা খেয়েছি তাই এতো অল্প ভাত রয়েছে। তখন দিন বড় ছিলো। তবুও রোজা রাখছি এই আনন্দের কাছে না খাওয়ার কষ্ট কষ্টই মনে হতোনা। রাতে একসাথে পাঁচ ওয়াক্তের সালাত পড়তাম,পানি বা পাইরুটি দিয়ে সেহেরি করতাম,ইফতারি পারলে করতান না পারলে পানি খেয়ে রোজা ভাংতাম। তাও সেই রমাদান মাসটা অনেক স্পেশাল ছিলো আমাদের জন্য। একেকটা রোজা রাখতাম আর অন্য এক ধরনের শান্তি অনুভব করতাম মনের মধ্যে! আলহামদুলিল্লাহ!! কিছু ছোট ছোট ঘটনা উল্লেখ করবো। সম্ভবত এই ঘটনা গুলো বাসায় সন্দেহ জাগাতে সাহায্য করে।.আমার বোন খ্রীস্টান ধর্মের ব্যপারে জানার জন্য গ্রানীকে প্রশ্ন করেছিলো কিছু যার উত্তর গ্র্যানী (নানী) দিতে পারেনি। আবার আমার এক দূর সম্পর্কের এক মামা জিহবায় বিশ্বাসি ছিলো। জীহবা হচ্ছে খ্রীস্টানদেরই একটা অংশ যারা বিশ্বাস করে দুনিয়াতেই সবার বিচার হবে,যে ভালো ভাবে চলবে সে ভালো ফল পাবে,যে খারাপ ভাবে চলবে দুনিয়াতেই তার শাস্তি সে পেয়ে যাবে। তারা খ্রীস্টান ধর্মের যে প্রচলিত ভুলগুলো আছে তা বাইবেল থেকে বের করে আলাপ করে কিন্তু এরপর যে আরেক নবী এসেছে ও আল্লাহ যে আখিরাতে বিচার করবেন তা বিশ্বাস করেনা। তো সেই মামা একদিন খ্রীস্টান ধর্মের ভুল গুলো আমার খালার সামনে বলছিলো। আমার বোন তখন সাথে তার কথাকে সাপোর্ট করে এটা নিয়ে পরে খালা মা,নানীর কাছে নিন্দা করে কথা বলে।.তখন ওয়েলকাম টুন নতুন নতুন চালু হয়েছে। আমার বোন মাইকেল জ্যাকসনের peace গানটা ওয়েলকাম টুনে দেয়। গান একটু হলেই কল রিসিভ করে ফেলতো তাই মা ধরতে পারেনি এটা ইসলামিক গান। কিন্তু আমার মামা একদিন সিহিন্তাকে কল করে পুরাটা শুনে এবং মাকে জানায় যে ও ইসলামিক গান দিয়ে রেখেছে। মা রাগারাগি করে তখনই ওকে দিয়ে গানটা ডিলেট করায়। আমি একটা ডায়রিতে কিছু সূরা আর দুআ লিখে রেখেছিলাম পরে মুখস্ত করবো বলে। কিন্তু ওটাও কিভাবে জানি মার হাতে পরে। মা কেন আমার রুমে ঢুকে আমার ডায়রি বের করে জানিনা। কিন্তু ওটা পড়ে ফেলার পর অনেক রাগারাগি করে। ওটা ছুড়ে বাইরে ফেলে দেয়। আমি তখন ক্লাসে ছিলাম। সিহিন্তা কল করে আমাকে জানায়। বাসায় আসতেও ভয় পাচ্ছিলাম। এবং বাসায় এসে অনেক বকা খাই ওটার জন্য। তাছাড়া আমাদের ফুলহাতা কাপর পরা, চার্চে যেতে না চাওয়া, আমাদের আচরণে, কথা বার্তায় পরিবর্তন ইত্যাদির কারনেও মার মনে সন্দেহ জাগতে থাকে। তবে তখনো সে বুঝেনি যে আমরা ততদিনে মুসলিম হয়ে গেছি। সিহিন্তাকেই সবাই বেশি সন্দেহ করতো। আমার ব্যপার তখনো তারা ধরতে পারেনি কারণ আমি তখনও ওর মতো জ্ঞান অর্জন করতে পারিনি ফলে ইসলামের ব্যপারে কথাই বলতাম না।
.এরপর থেকে আমরা আরো সাবধান হয়ে যাই। সিহিন্তা ইসলামিক বই গুলো,যেমন কুরআনের অনুবাদ গুলো,বুখারী শরীফ ইত্যাদি বই এর উপর মলাট লাগিয়ে রাখতো যাতে কেও না বুঝে। দুআ বা সূরা লেখা শিট গুলো ভার্সিটির লেকচার শিটের মাঝে রাখতাম যাতে কেও খুলে না দেখে। ইসলাম চর্চা থেমে থাকেনি কোনো কারণেও আলহামদুলিল্লাহ। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে বই পড়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট ও পিস টিভি থেকে অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারি আমরা। বই এর ক্ষেত্রে মরিস বুখাইলির বাইবেল,কুরআন ও বিজ্ঞান বইটার কথা আমার বেশি মনে আছে। বইটা থেকে কুরআনের মিরাকাল সম্পর্কে একটা ধারনা পাই। কিছু বিদা'তি বইও আমরা পড়েছিলাম তবে আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ পথভ্রষ্ট হতে দেয়নি। সিহিন্তা পিস টিভিতে ইউসুফ এসটেস, হুসেইন য়ে, আসিম আলহাকিম, জাকির নায়েক এদের লেকচার রেগুলার দেখতো। আমি বিকালের আগে ফ্রি হতে পারতাম না তাই পিস টিভি দেখার সুজোগ পেতাম না খুব একটা। আমার ভাই একদিন মাকে বলে দিয়েছিলো যে সিহিন্তা পিস টিভি দেখে। এরপর থেকে বাসায় কেও থাকলে ও-ও পিস টিভিতে লেকচার দেখতে পারতোনা। অনেক বেশি সাবধানে থাকতে হতো।
.আমরা youtube এ বাবা আলী ও ইউসুফ এস্টেস এর লেকচার দেখতাম। ইউসুফ এস্টেসের ইসলামে আসার কাহিনী অনেক ইনফ্লুয়েন্স করে আমাকে। উনার প্রতিটা লেকচার খুব খুব ভালো লাগতো। বাবা আলীর লেকচারও তখন খুব ভালো লাগতো,মজা পেতাম দেখে। যদিও এখন আর আগের মতো ভালোলাগেনা। তবে অনেক কিছুই যে জানতে পারি এখান থেকে এতে সন্দেহ নাই। সিহিন্তা নেট থেকে সার্চ দিয়ে ইউসুফ এস্টেসের ইসলাম টুমরো ওয়েবসাইট টা পেয়েছিলো। ওটা ও রেগুলার ব্রাউজ করতো। ওখান থেকেই ও ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটির সন্ধান পায়। এরাবিক রিডিং রাইটিং এর কোর্সটাতে এনরোলও করেছিলো। এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে ইসলাম চর্চা চলতে লাগলো। সিহিন্তার প্রতি সবার সন্দেহ ছিলো। তাই আমার চেয়ে বেশি ওকে সাবধানে চলতে হতো। তখন সুজোগ ছিলোনা কিন্তু ইসলাম চর্চা থেমে থাকেনি। আর এখন এতো সুজোগ তাও আগের মতো পড়িনা বা লেকচার শুনিনা। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিক। লিখতে গিয়ে আবার সেই ঈমানের স্বাদ পেতে ইচ্ছা করছে। কতো কষ্ট করেছি তাও কতো মানসিক শান্তি ছিলো,অন্য রকম এক ভালোলাগা যা লিখে বুঝানো যাবেনা! আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের বাবার জন্ম মুসলিম পরিবারে হলেও অন্যান্য সাধারন মুসলিম নামধারী তরুনদের মত তিনিও সেকুলার ছিলেন।ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে কোন ধর্মই মানতেন না উনি। "বরং যার যার ধর্ম তার তার" এ বিশ্বাসী ছিলেন (আলহামদুলিল্লাহ আমরা মুসলিম হবার অনেক পরে বাবাও তাওবা করে ইসলাম গ্রহন করেন এবং এখন তিনি একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম)।
.বাবা প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন আমার খ্রিস্টান মাকে। ফলে আমারা জন্মের পর থেকে খ্রিস্টান হিসেবে বেড়ে উঠি আমাদের খ্রিস্টান আত্বিয়দের সাথে। মুসলিম আত্বিয়দের সাথে তেমন যোগাযোগ ছিলনা।হয়তো ঈদে দাদীমার বাসায় যেতাম। এছাড়া সারা বছরে দেখাও হতোনা। বাবাও ইসলাম সম্পর্কে আমাদের সাথে আলাপ করতেন না। সিহিন্তা দাদীর বাসার কাছে এক কোচিং এ পড়াতো। ও দাদীর বাসায় যাওয়া শুরু করলো ইসলাম সম্পর্কে আরো জানতে। দাদীর থেকে কিছু বই আনে ও যেগুলা বিদ'আত আর বানোয়াট কাহিনীতে ভরা। তবুও ও খুব আগ্রহ নিয়ে বইগুলো পড়তো। আমি যে মুসলিম হয়েছি তা দাদী জানতোনা তবে তিনি সিহিন্তার ইসলামের আসার কথা শুনে খুব খুশি হন।দাদীর একটা ব্যপার আমার খুব ভালো লাগতো। উনি অনেক অসুস্থ্য ছিলেন। কিডনি প্রায় ৯০% ড্যামেজ। হার্টে ৪/৫টা ব্লক ধরা পরে। বিছানা থেকে উঠতে পারতেন না। তাও উনি সালাত বাদ দিতেন না।.সিহিন্তা দাদীর সাথে সময় কাটাতো জেনে মা খুশিই হয়। অসুস্থ্য দাদীর সাথে নাতী নাতনিরা দেখা করতে গেলে উনার ভালো লাগবে জানতেন। তাই মা কিছু বলতেন না।অবশ্য মা কখনো বাবার পরিবারের সাথে মিশতে বাধা দিতনা। তারা যে আমাদের মুসলিম বানাতে চেষ্টা করবেনা তা মা জানতো। কিন্তু বাবা খ্রীস্টান বিয়ে করাতে এবং আমরা খ্রীস্টান থাকাতে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। উনারা কেও আসতোনা তেমন আমাদের বাসায়,আমরাও যেতাম না। সবাই নিজেদের জীবন নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। আমরা আমাদের খ্রীস্টান আত্মিয়দের সাথেই সব সময় মিশতাম। সিহিন্তা দাদীর থেকে বই আনতো,দাদীর সাথে গল্প করতো,আমিও মাঝে মাঝে যেতাম। এভাবেই দিন চলতে লাগলো। আমরা কোনো নির্দিষ্ট মানুষের কাছ থেকে ইসলাম শিখিনি। আমরা নিজেরাই বই সংগ্রহ করে,পিস টিভি দেখে,নেট থেকে ইসলাম শিক্ষা পাই। একমাত্র আল্লাহই আমাদের গাইড করেছেন। ফলে আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাইনি আলহামদুলিল্লাহ। বই ও পিস টিভি ছাড়াও আমরা ইসলামিক ফোরাম, islamqa, islamhouse, islami online university ইত্যাদে ওয়েব সাইডে রেগুলার ব্রাউজ করতাম। নেটে ব্রাউজ করতে গিয়ে শিয়া ও অন্যান্য ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা সৃষ্টিকারী ওয়েব সাইটের পোস্টও আমরা রেগুলার পড়তাম। কিন্তু পরে যখন বুঝতে পারলাম এসব ওয়েবসাইট authentic না তখন সেসব পড়া বাদ দিয়ে দিলাম।.আল্লাহ নিজে আমাদের গাইড করার কারনে প্রথম থেকেই আমরা সঠিক ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করতে পারি। প্রথম থেকেই আমরা বুঝেছিলাম যে বাংলাদেশে সঠিক ইসলাম পালন করা হয়না। বাংলাদেশে যে এমনও মানুষ আছে যারা সঠিক ইসলামিক পদ্ধতিতে চলতে চেষ্টা করে সে ধারনাও আমাদের ছিলোনা। আমাদের খ্রীস্টান নামে id ছিল ফেসবুকে।সিহিন্তা একদিন অন্য নাম দিয়ে ফেসবুকে একটা নতুন আইডি খুলে। ওই আইডি দিয়ে ও বিভিন্ন ইসলামিক গ্রুপ সার্চ দিয়ে বের করে ফেসবুকে। তখন fb তে গ্রুপ গুলোতে discussion board খুব চালু ছিলো। তেমন একটা Discussion board থেকে সিহিন্তার আমাদেরই সমবয়সি সোহানা আপুর সাথে পরিচয় হয়। সোহানার পোস্ট পড়ে ও বুঝতে পারে যে সোহানাও সঠিক ইসলাম পালন করে এবং ও বাংলাদেশে,ঢাকাতেই থাকে দেখে খুবই অবাক হয়। সিহিন্তা সোহানাকে fb তে এ্যাড করে। সোহানা ওর কথা জানতে পেরে ওর থেকে ফোন নাম্বার নেয়। একদিন কল করে দেখা করার ব্যবস্থাও করে। আমি দেখা করতে যেতে পারিনি। সিহিন্তা একাই যায় দেখা করতে। বসুন্ধরা সিটির চার তালায় মেয়েদের নামায পড়ার স্থানে ওরা দেখা করে। প্রথমে আমরা বই পড়ে সালাত পড়া,অজু করা শিখেছিলাম। ফলে অনেক ভুল ছিলো আমাদের সালাত আর অজুতে।সেদিন সোহানাই প্রথম সিহিন্তাকে হাতে কলমে সালাত,অজুর সঠিক পদ্ধতি শিখায়। পরবর্তীতে সিহিন্তা নেট থেকে একটি ফ্ল্যাশ নামায় যেটা থেকে সঠিক পদ্ধতিতে নামায পড়ার পদ্ধতি আরো ভালোমতো শিখতে পারি আমরা। সোহানার মাধ্যমে nsu এর আরো কিছু আপুর সাথে আমাদের পরিচয়। তাদের মাধ্যমে ঢাকায় সঙ্গঠিত ইসলামিক কনফারেন্স গুলোর খোঁজ পাই। সেখান থেকেও অনেক আপুর সাথে পরিচয় হয়। [সিহিন্তার কাহিনী আমি লিখতে গেলে অনেক কিছুই বাদ পরে যায়। তাছাড়া ওর সাথে আলাপ করার সময়ও পাচ্ছিনা। ইন শা আল্লাহ এখন থেকে আমার কাহিনীটাই আগে শেষ করবো]
.সিহিন্তার সাথে fb থেকেই এক আপুর সাথে পরিচয় হয়। ফারিহা আপু। সেই আপুই আমাদের এনাম আঙ্কেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এনাম আঙ্কেল আমাদের মসজিদে শাহাদা নেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। শারিয়াত অনুযায়ী আসলে শাহাদা নেয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। মুসলিম হতে হলে আল্লাহতালাকে সাক্ষী রেখে একাকী মন থেকে পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে আল্লাহকে একমাত্র প্রকৃত ইলাহ মেনে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালামকে আল্লার নাবী মেনে সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে আরবীতে কালিমা-এ-শাহাদাহ মুখে উচ্চারণ করলেই হয়ে যায়। সেই মুহুর্ত থেকে সালাত, সিয়াম, হাজ্ব, যাকাত ওই ব্যক্তির উপর ফরয হয়ে যায়, এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেন। মাসজিদে শাহাদাহ নেয়া, গুসল ইত্যাদি হল নিছক আনুষ্ঠানিকতা। আমরা আগেই সেভাবে মুসলিম হয়েছিলাম, তবে গোপনে হওয়ায় অল্প কিছু মানুষ ছাড়া আর কেউ জানতোনা। ফারিয় সিহিন্তাকে বলেছিল আরেক নও- মুসলিম ভাইয়ের কথা যে হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছিল, আনুষ্ঠানিকভাবে শাহাদাহ না নেয়াতে, কোন সাক্ষী না থাকাতে মারা যাওয়ার পর তাকে হিন্দুদের শশ্বানে পোড়ানো হয়। আর সিহিন্তার ক্ষেত্রে যেহেতু খৃস্টানের সাথে বিয়ের চেষ্টা চলছিল, স্বাধীনভাবে ইসলাম পালন করা অসম্ভব ছিল... এমন অবস্থায় একটা মুসলিম কমিউনিটির সাথে যুক্ত হওয়াটা জরুরী ছিল।ওর নাম বদলানোরও প্রয়োজন ছিলনা, তারপরও এফিডেবিট করে নাম বদলাতে হয়েছে, কাগজে কলমে প্রমান রাখতে হয়েছে যে ও নিজের ইচ্ছায় মুসলিম হয়েছে - কারো মাধ্যমে ব্রেইনওয়াশের স্বীকার হয়নি। যাই হোক,আমরা কবে মসজিদে যেতে পারবো আঙ্কেলকে জানালাম। মনে আছে ওইদিন আমি প্রথম কামিজের সাথে মাথায় সুন্দর করে হিজাব পরেছিলাম। এনাম আঙ্কেল আর ফারিহা আমাদের গাড়িতে করে নিতে আসলো। আমার গাড়িতে খারাপ লাগে,তারুপর প্রথম হিজাব পরা,গাড়িতে আমার মাথা ঘুরানো শুরু হয়। মুহাম্মদপুর ইকবাল রোডের আল-আমীন মসজিদে আমরা শাহাদা নেই।.মসজিদে অনেক মানুষ এসেছিলো আমাদের শাহাদা উপলক্ষ্যে। আমরা মসজিদের দ্বিতীয় তালায় গিয়ে বসি। আমার মাথা ঘুরাচ্ছিলো তাই প্রথমে একপাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসি। যখন একটু সুস্থ্য হয়ে তাকাই এতো মানুষ দেখে লজ্জা লাগছিলো। সবার মাঝে একটা খুশি খুশি ভাব। শরীফুন্নেসা আন্টি আমাকে আর সিহিন্তাকে আইনে রাসূল বই দেন ও দুটা খিমার উপহার দেন। এরপর ঈমামের সাথে সাথে আমরা কালিমা পড়ি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা সবার সামনে ইসলাম গ্রহণ করি!! কেমন যে লাগছিলো বোঝাতে পারবোনা। মুসলিম হবার আনন্দ,বাসায় জানলে কি হবে তার ভয়,সামনের জীবনের কথা ভেবে উদ্বিগ্নতা,আবার অদ্ভূত এক শান্তির অনুভূতি ছিলো মনে।সব মিলিয়ে অন্য রকম মিস্র এক অনুভূতি। কালিমা পড়লাম সবার সামনে,এরপর গোসল করে দুই রাকাত সালাত আদায় করতে হবে। হুমায়রা আন্টি বলেছিলেন উনার বাসায় গিয়ে গোসল করে সালাত পড়ে নিতে। কিন্তু দেরি হয়ে যাবে বলে আমরা বাসায় চলে আসি। এসে দুজন গোসল করে নেই। এরপর একসাথে দুই রাকাত সালাত আদায় করে নেই। সেদিনের কথা কখনোই ভুলবনা। আমার তখনো অনেক জানা বাকি,বুঝা বাকি ইসলাম সম্পর্কে।সিহিন্তার মতো এতো পড়তাম না আমি ইসলাম নিয়ে। জানতাম সবাই জানতে পারলে মুসলিম হবার কথা সামনে অনেক বড় পরীক্ষায় পরতে হবে। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। তবুও একবারো মনে হয়নি ভুল ডিসিশন নিয়েছি। আল্লাহর উপর এতো বেশি বিশ্বাস করেছি যে এই কথা কখনো মাথায়ই আসেনি। এখনো মনেহয় যে আল্লাহ যে আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন,এজন্য সারা জীবন সেজদায় পরে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলেও তা কম হবে। ইসলামের স্বাদ যে কি তা,যে পায়নি সে কখনোই বুঝবেনা। সিহিন্তার বিয়ের জন্য তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হল। ও বিয়ে করতে চাইতোনা বলে ওকে না জানিয়েই পাত্রী দেখানোর ব্যবস্থা করা হতো মাঝে মাঝে। কিন্তু খ্রীস্টান ছেলে তো ওর পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না।.ইসলাম গ্রহণের পর সবচেয়ে কঠিন যে পরীক্ষায় আমাদের পরতে হয়েছে তা হলো মাকে কষ্ট দেয়া। আমরা জানতাম মা অনেক কষ্ট পাবে,ভেঙ্গে পরবে। কিন্তু মাকেও তো আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন,সৃষ্ট জীবকে খুশি করতে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার থেকে তো আমরা দূরে যেতে পারিনা। ইসলামে মা বাবার গুরুত্ব অনেক। তাদের সকল কথা মান্য করতে বলেছেন আল্লাহ। তবে শুধু মাত্র আল্লাহর বিরুদ্ধে যায় বা আল্লাহর আদেশ কে অমান্য করা হবে এমন কথা মানা যাবেনা। তাই মা কষ্ট পাবে জেনেও আমাদের আর কোনো উপায় ছিলনা। প্রচুর মানসিক কষ্টের মধ্যে থাকতাম।যাকে আমরা অনেক ভালোবাসি তাকে এভাবে জেনে শুনে কষ্ট দেয়ার মানসিক যন্ত্রনা যে কি বুঝানো যাবেনা। সত্য একদিন সামনে আসবেই জানতাম কিন্তু সে সত্যর সম্মুখীন হবার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। সিহিন্তাকে এমন অবস্থায় দুজন মানুষ অনেক সাহস ও সাপোর্ট দিয়ে সহায়তা করেন। তারা হলেন রেহনুমা আপু ও তারিন আপু। প্রকৃত দ্বীনি বোনের মতোই এরা সকল কষ্টে পাশে ছিলেন আলহামদুলিল্লাহ!
.আমরা শাহাদা নেই ২০০৯ এর জুন মাসের ২১তারিখ,পরের মাসে মানে জুলাই মাসে শরীফুন্নেসা আন্টি তার ছেলে শরীফ আবু হায়াত অপুর জন্য সিহিন্তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। সে মাসেই এনাম আঙ্কেলের সহায়তায় ICD তে অপু ভাইয়া ও সিহিন্তা দেখা করে কথা বলে। সিহিন্তা বিয়ের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলোনা। মাকে কষ্ট দেয়ার কথা ভেবে খুবই মানসিক চাপ অনুভব করছিলো। তখন এনাম আঙ্কেল, হুমায়রা আন্টি, তারিন আপু, রেহনুমা আপু সিহিন্তাকে মানসিক সাহস ও সাপোর্ট দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সাহায্য করেন (আমিও সাথে সাপোর্ট করি tongue emoticon ) । সিহিন্তা বিয়ে করতে রাজী হয় কিন্তু মেয়েদের বিয়ের জন্য দরকার একজন ওয়ালি। বাবাকে তো বলা যাবেনা মুসলিম হবার কথা,তাই সিহিন্তা দাদীমার সাথে দেখা করে তাকে জানালো সব। সিহিন্তা বার বার নিষেধ করে দিয়েছিলো সবাইকে যেন কেও বাবা মা কে কিছু না জানায়। কিন্তু আমার ছোট চাচা হয়তো খুশি হয়েই বাবাকে ফোনে সব বলে দেন। কিন্তু আমরা যে ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো। বাবার মাধ্যমে মাও সব জেনে যায়। এরপর যে ভয় আমরা মুসলিম হওয়র পর থেকে করছিলাম তার সম্মুখীন হবার সময় আসলো।
শেষ অংশ এখান থেকে পড়ুন।
সূত্র ঃ - Naila Amatullah – ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
0 comments:
Post a Comment