শবে মেরাজের প্রকৃত শিক্ষা
শবেমেরাজ
সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই লিঙ্কে।
রাসূল সা: মেরাজ থেকে ফিরে আসার পর সূরা বনি
ইসরাইলের মাধ্যমে ১৪টি দফা জনগণের সামনে পেশ করেন-
১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক কোরো না, তাহলে তুমি
নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। আর তোমরা কেবল আল্লাহরই বন্দেগি করো (সূরা বনি
ইসরাইল-২২)।
২. বাবা-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। তাদের একজন বা
উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় যদি তোমাদের সামনে উপনীত হয় তাহলে তাদের সাথে উহ্ শব্দটি
পর্যন্ত কোরো না। তাদের ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না; বরং তাদের সাথে মর্যাদা
সহকারে কথা বলো। আর তাদের সামনে বিনয়ী থেকো আর দোয়া করতে থাকো- ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদেরকে তেমনিভাবে লালন-পালন
করো, যেমনি তারা শৈশবে আমাদের লালন-পালন করেছেন’ (সূরা বনি ইসরাইল ২৩-২৪)।
৩. তোমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা কর,
তাহলে আল্লাহ তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের মনের খবর
জানেন (সূরা বনি ইসরাইল-২৫)।
৪. আত্মীয়স্বজনকে তাদের অধিকার দাও আর মুসাফিরদের
হক আদায় কর (সূরা বনি ইসরাইল-২৬)।
৫. অপব্যয় কোরো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের
ভাই, আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ (সূরা বনি ইসরাইল-২৭)।
৬. হকদারদের হক আদায়ে তুমি যদি অপারগ (অসমর্থ) হও
তাহলে তাদের সাথে অত্যন্ত নম্রভাবে কথা বলো (সূরা বনি ইসরাইল-২৮)।
৭. ব্যয়ের ক্ষেত্রে বেহিসাবি হয়ো না, আবার কৃপণতাও
প্রদর্শন কর না। আল্লাহ যাকে চান রিজিক বাড়িয়ে দেন, যাকে চান কমিয়ে দেন (সূরা বনি
ইসরাইল : ২৯-৩০)।
৮. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই এটি
মহাপাপ (সূরা বনি ইসরাইল : ৩১)।
৯. জেনা-ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটি
নিকৃষ্ট ও গর্হিত কাজ (সূরা বনি ইসরাইল : ৩২)।
১০. কোনো জীবনকে অন্যায়ভাবে হত্যা কোরো না। কাউকে
অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীকে আমি এই অধিকার দিয়েছি (চাইলে রক্তের
বিনিময় চাইতে পারে), তবে প্রতিশোধের ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে (সূরা বনি
ইসরাইল : ৩৩)।
১১. এতিমের সম্পদের ধারেকাছেও যেও না। সম্পদের
ব্যাপারে তার বয়োপ্রাপ্তি পর্যন্ত অপো করো আর প্রতিশ্র“তি সম্পর্কে সচেতন থাক। নিশ্চয়ই প্রতিশ্র“তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে (সূরা বনি ইসরাইল
: ৩৪)।
১২. ওজনে কখনো কম দিয়ো না। দাঁড়িপাল্লা সোজা করে
ধরবে- এটিই উত্তম পন্থা (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৫)।
১৩. যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সেগুলোর পেছনে লেগো
না। নিশ্চয়ই চোখ, কান, অন্তর সব কিছুই জিজ্ঞাসিত হবে (সূরা বনি ইসরাইল :
৩৬)।
১৪. জমিনে দম্ভসহকারে চলো না। এগুলো সবই মন্দ ও
ঘৃণিত কাজ (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৭-৩৮)।
এই
১৪ দফাই শবে মেরাজের প্রকৃত শিক্ষা। শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং যে রাজনৈতিক
ব্যবস্থা রাসূল সা: মদিনায় গিয়ে কায়েম করেছিলেন, এগুলো তার বুনিয়াদি মূলনীতি।
পরবর্তীকালে এই দফাগুলো ইসলামি রাষ্ট্রের আইনে পরিণত হয় এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে
এগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-ব্যবস্থা রাসূল সা: প্রণয়ন করেন। ইসলামি
হুকুমাত প্রতিষ্ঠার পর মানুষের জীবনধারা সুন্দর ও শান্তিময় হয়ে ওঠে এবং পবিত্র
জীবনধারার এক সভ্যতার বিস্তৃতি লাভ করে। মসজিদ, মক্তব, মাদরাসাসহ সর্বোত্র
রমরাজের এই শিাকে গুরুত্বের সাথে আলোচনা করে এর আলোকে ব্যক্তি, সমাজ ও দেশ গড়ার
লক্ষ্যে কাজ করা আমাদের সবার ঈমানি দায়িত্ব। সব ধরনের অশান্তি, পাশবিকতা ও মানব
বিপর্যয় থেকে মুক্তির এটিই একমাত্র পথ।
অনেকে
২৭ রজব বিশেষ ইবাদত করা পুণ্য মনে করেন। কিন্তু আল্লাহর রাসূল সা: শবে মেরাজ উপলে
বিশেষ ইবাদত করেছেন বা করতে বলেছেন সহিহ হাদিসে এমন কোনো দলিল পাওয়া যায় না।
দ্বীনের ক্ষেত্রে নব আবিষ্কৃত সব বিষয়ই বিদআত।
আল্লাহর
রাসূল সা: বলেছেন, দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় সৃষ্টিকারী আমার অন্তর্ভুক্ত নয়, আর যে
ব্যক্তি এমন বিষয়ে আমল করবে তার অনুমোদনও আমার কাছে নেই (বুখারি ও মুসলিম)। তাই
মেরাজের প্রকৃত শিা সঠিকভাবে গ্রহণ করে ইসলামের পথে চলাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
0 comments:
Post a Comment