দেন মোহর।
বিবাহ এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। স্বামী - স্ত্রী উভয়েই একে অন্যের কাছে উপকৃত ও পরিতৃপ্ত। কিন্তু স্বামীর অধিকার বেশী।তাই স্ত্রীর কর্তব্য অধিক। স্ত্রী তার দেহ - যৌবন সহ স্বামীর বাড়িতে এসে বা সদা ছায়ার ন্যায় স্বামী- পাশে থেকে তার অনুসরণ ও সেবা করে।
তাই তো এই চুক্তিতে তাকে এমন কিছু পারিতোষিক প্রদান করতে হয় যাতে সে সন্তুষ্ট হয়ে স্বামীর বন্ধনে আস্তে রাজী হয়ে যায়।সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং মানুষকে এ বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেন,
"উল্লেখিত ( অবৈধ) নারীগণ ব্যতীত অন্যান্য নারীগণকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে,শর্ত এই যে, তোমারা তোমাদের স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তাদের কে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, ব্যভিচারের জন্য নয়। তাদের মধ্যে যাদের কে তোমরা উপভোগ করবে তাদের কে নির্ধারিত মোহরঅর্পণ করবে। ৯কু;৪/২৪)
তিনি অন্যত্র বলেন, এবং তোমরা নারীদের কে তাদের মোহর সন্তুষ্ট মনে দিয়ে দাও। (কুঃ ৪/৪)
আর প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, সবচেয়ে অধিক গুরুত্ব পূর্ণ শর্ত যা পূরণ করা জরুরী, তা হল সেই বস্ত যার দ্বারা তোমরা (স্ত্রীদের) গুপ্তাঙ্গ হালাল করে থাক।(সজাঃ ১৫৪৭ নং)
সুতরাং স্ত্রীকে তার ঐ প্রদেয় মোহর প্রদান করা ফরয। জমি, জায়গা, অর্থ, অলঙ্কার, কাপড়- চোপড় ইত্যাদি মোহরেদেওয়া চলে। বরং প্রয়োজনে ( পাত্রীপক্ষ রাজী হলে) কুরআন শিক্ষাদান,ইস্লাম গ্রহনও মোহর হতে পারে। (বুঃ, মুঃ মিঃ ৩২০২-৩২০৯ নং)
মোহর কম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তবে স্বেচ্ছায় বেশী দেওয়া নিন্দনীয় নয়। মহানবী (সাঃ) তার কোন স্ত্রী ও কন্যার মোহর ৪৮০দিরহাম ( ১৪২৮ গ্রাম ওজনের রৌপ্যমুদ্রা) এর অধিক ছিল না।( ইরঃ ১৯২৭ নং)
হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর মোহর ছিল একটি লৌহবর্ম। ( সঃআদাঃ ১৮৬৫ নং, নাঃ আঃ, ১/৮০)
হযরত আয়েশা বলেন, তার মোহর ছিল ৫০০ দিরহাম(১৪৮৭,৫ গ্রাম ওজনের রৌপ্য মুদ্রা)।(সঃআদা,১৮৫১ নং)
তবে কেবল উম্মে হাবীবার মোহর ছিল ৪০০০ দিরহাম( ১১৯০০ গ্রাম রৌপ্য মুদ্রা)। অবশ্য এই মোহর বাদশাহ নাজাশী মহানবী (সাঃ) এর তরফ থেকে আদায় করেছিলেন। ( সঃআদাঃ ১৮৫৩) তাছাড়া তিনিবলেন, নারীর বরকতের মধ্যে; তাকে পয়গাম দেওয়া সহজ তার মোহর স্বল্প হওয়া এবং তার গর্ভাশয়ে সহজে সন্তান ধরা অন্যতম।( সঃজাঃ ২২৩৫ নং)
হযরত মূসা (আঃ) তার প্রদেয় মোহরের বিনিময়ে শ্বশুরের ৮ অথবা ১০ বছর মজুরী করেছিলেন। ( কুঃ ২৮/২৭)
মোহর হাল্কা হলে বিবাহ সহজ সাধ্য হবে; এবং সেটাই বাঞ্ছিত। পক্ষান্তরে পণ প্রথার মত মোহর অতিরিক্ত বেশি চাওয়ার প্রথাও এক কুপ্রথা।
মোহরের অর্থ কেবল মাত্র স্ত্রীর প্রাপ্য হোক; অভিভাবকের নয়। এতে বিবাহের পরে স্বামীরও কোন অধিকার নেই। স্ত্রী বৈধভাবে যেখানে ইচ্ছা সেখানে খরচ করতে পারে। ( ফমঃ ১০৫-১০৯ পৃষ্ঠা) অবশ্য স্ত্রী সন্তুষ্ট চিত্তে স্বেচ্ছায় স্বামীকে দিলেতা উভয়ের জন্য বৈধ। (কুঃ ৪/৪)
স্ত্রীকে মোহর না দিয়ে বিবাহ করলে অনেকের নিকট বিবাহ বাতিল।(ফিসু; ২/১৪৯)
আকদের সময় মোহর নির্ধারিত না করলেও বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু স্বামী - স্ত্রীর মিলনের পর স্ত্রী সেই মহিলার সমপরিমাণ চলতি মোহরের অধিকারিণী হবে, যে সর্বদিক দিয়ে তারই অনুরূপ। মিলনের পূর্বে স্বামী মারা গেলেও ঐরূপ চলতি মোহর ও মীরাসের হকদার হবে। (ফিসুঃ২/১৪৯-১৫০)
মোহরের নির্দিষ্ট না করে বিবাহ হয়ে মিলনের পূর্বেই স্বামী তালাক দিলে স্ত্রী মোহরের হকদার হয় না। তবে তাকে সাধ্যমত অর্থাদি খরচ- পত্র দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।( কুঃ ২/২৩৬)
বিবাহের সময় মোহর নির্ধারিত করে সম্পূর্ণ অথবা কিছু মোহর বাকী রাখা চলে। মিলনের পর স্ত্রী সে ঋণ মকুব করে দিতে পারে।নচেৎ ঋণ হয়ে তা স্বামীর ঘাড়ে থেকেই যাবে।
মোহর নির্ধারিত করে বা কিছু আদায়ের পর বিবাহ হয়ে মিলনের পূর্বে স্বামী মারা গেলেও স্ত্রী পূর্ণ মোহরের হকদার হবে।স্ত্রী মারা গেলে স্বামী মোহর ফেরৎ পাবে না। ( ফিসু; ২/১৪৮)
মোহর নির্দিষ্ট করে আদায় দিয়ে মিলন করার পর স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে মোহর ফেরৎ পাবে না।
মহান আল্লাহ বলেন, আর যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহন করা স্থির কর এবং তাদের এক জন কে প্রচুর অর্থও দিয়ে থাকতবুও তা থেকে কিছুই গ্রহন করো ন্স। তোমরা কি মিত্যা অপবাদ এবং প্রকাশ্য পাপাচারণ দ্বারা তা গ্রহন করবে? কিভাবে তোমরা তা গ্রহন করবে, অথচ তোমরা পরস্পর সহবাস করেছ এবং তারা তোমাদের কাছ থেকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়েছে? (কুঃ ৪/২০-২১)
মোহর ধার্য হয়ে আদায় না করে মিলনের পূর্বেই তালাক দিলে নির্দিষ্ট মোহরের অর্ধেক আদায় করতে হবে।
অবশ্য যদি স্ত্রী অথবা যার হাতে বিবাহ বন্ধন সে (স্বামী) মাফ করে দেয় তবে সে কথা ভিন্ন। তবে মাফ করে দেওয়াটাই আত্নসংযমের নিকটতর ।( কুঃ ২/২৩৭)
মিলনের পূর্বে যদি নিজের দোষ তালাক পায় অথবা খোলা তালাক নেয় তবে মোহর তো পাবেই না এবং কোন খরচ-পত্রও না।( ২/১৫১-১৫২) মোহর আদায় দিয়ে থাকলে মিলনের পরেও খোলা চায় , তাহলে স্বামীকে তার ঐ প্রদত্ত মোহর ফেরত দিতে হবে না।(বুঃমিঃ ৩২৭৪ নং)
কোন অবৈধ বা অগম্যা নারীর সহিত ভুলক্রমে বিবাহ হয়ে মিলনে পর তার অবৈধতা ( যেমন গর্ভ আছে বা দুধ বোন হয়ইত্যাদি ) জানা গেলে ঐ স্ত্রী পূর্ণ মোহরের হকদার হবে। তবে তাদের মাঝে বিচ্ছেদ( ওয়াজেব)। (ফিঃ ২/১৪৯ )
একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে সকল স্ত্রীর মোহর সমান হওয়া জরুরী নয়।( মবঃ" ৬/২৬২)
স্ত্রীর মোহরের অর্থ খরচ করে ফেলে স্বামী যদি তার বিনিময়ে স্ত্রীকে তার সমপরিণাম জবি বা জায়গা লিখে দেয় তবে তাও বৈধ।(মবঃ ২৫/৪৭)
পক্ষান্তরে অন্যান্য ওয়ারেসীনরা রাজী না হলে কোন স্ত্রী নামে ( বা কোন ওয়ারেছের মানে) অতিরিক্ত কিছু জমি -জায়গা উইল করা বৈধ নয়। কারণ, কোন ওয়ারেসের জন্য অসিয়ত নেই।( মিঃ ৩০৪৭নং,ইরল০১৬৫৫ নং)
পাত্রীর নিকট থেকে ৫০ হারাজ ( পণ) নিয়ে ১ বা ২০ হাজার তাকে মোহর অথবা নামে মাত্র মোহর বাধলে এবং আদায়েরনিয়ত না রাখলে ; অর্থাৎ স্ত্রীর ঐ প্রাপ্য হোক পূর্ণমাত্রায় আদায় দেওয়ার ইচ্ছা না থাকলে এই ধোঁকায় বিবাহ কি না সন্দেহ।অবশ্য একাজ যে আল্লাহর ফরয আইনের বিরুদ্ধাচরণ। তাতে কোন সঃন্দেহে নেই।
প্রকাশ যে, মোহর বিজোড় বাঁধা বা এতে কোন শুভলক্ষণ আছে মনে করা বিদআত।
(হে মানুষ) তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া ভিন্ন অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহন করে থাক।( কুঃ৭/৩
সূত্র - সংগৃহীত ফেসবুক থেকে
0 comments:
Post a Comment