সন্তানের ওপর মায়ের অধিকার
আল্লাহ
তার রহমতের সুধা দিয়ে
প্রতিটি মাকে সৃষ্টি করেছেন। মা
শব্দটি মানুষ মাত্রেরই প্রিয়। তাদের
বানিয়েছেন করুণার আধার হিসেবে। সন্তানের
প্রতি মায়ের ভালোবাসা, করুণা
মমত্ববোধ আল্লাহর অশেষ কুদরতেরই নিদর্শন। এটি
শুধু মানুষ নয় প্রাণিজগতের
সব প্রাণীর জন্যও এক সাধারণ
সত্যি। এ
জন্য আল্লাহ এবং রসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর
মায়ের হক বেশি।
একাধিক হাদিসে এ বিষয়টি
স্পষ্ট করা হয়েছে।
হজরত
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত।
এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল 'ইয়া রসুলুল্লাহ!
আমি সর্বাগ্রে কার সঙ্গে সদাচরণ
করব? রসুল (সা.) বলেন,
তোমার মায়ের সঙ্গে।
লোকটি প্রশ্ন করল, তারপর?
উত্তর এলো তোমার মা। লোকটি
আবার জানতে চাইল অতঃপর
কে? রসুল (সা.) এবারও
জবাব দিলেন তোমার মা। ওই
লোক চতুর্থবার একই প্রশ্ন করলে
রসুল (সা.) বলেন, তোমার
পিতা।' (বোখারি
ও মুসলিম)
রসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৈশবে
তার জননীকে হারান।
জননীর প্রতি দায়িত্ব পালনের
সৌভাগ্য তার সেভাবে হয়নি। আবু
দাউদ শরিফের হাদিসে উল্লেখ
করা হয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন তার
দুধমা বিবি হালিমা আসতেন
তখন তিনি তাকে দেখামাত্রই
সম্মান জানিয়ে ওঠে দাঁড়াতেন। নিজের
পাগড়ি অথবা গায়ের চাদর
বিবি হালিমাকে বসার জন্য পেতে
দিতেন। মায়ের
প্রতি সদাচরণ সন্তানের জন্য
অবশ্য পালনীয়। আল্লাহর
কাছে মায়ের মর্যাদা কেমন
তা প্রকাশ পেয়েছে বায়হাকি
শরিফের হাদিসে। রসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন, মায়ের দোয়া অতি
দ্রুত আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। আল্লাহ
বান্দার সব গোনাহ ইচ্ছমতো
ক্ষমা করতে পারেন।
কিন্তু মাতা-পিতার অবাধ্যতার
গোনাহ আল্লাহ কখনো ক্ষমা
করবেন না। বরং
ওই অবাধ্য সন্তানকে এই
পার্থিব জীবনের মৃত্যুর আগে
শাস্তি দিয়ে থাকেন।
(বায়হাকি)।
মায়ের
পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। মায়ের
অবাধ্য সন্তানকে আখিরাতে কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন
হতে হবে। আলকামা
নামক এক সাহাবি মারা
যাচ্ছেন, এমন মুহূর্তে তার
জবান থেকে কালেমা বের
হচ্ছে না। খবর
পেয়ে রসুলুল্লাহ এলেন এবং তিনি
আলকামার মাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
আপনি কি পুত্রের ওপর
অখুশি? উত্তরে তিনি বললেন,
ইয়া রসুলুল্লাহ! আমার ছেলে আমার
চেয়ে তার স্ত্রীকে বেশি
গুরুত্ব দিত। এ
কারণে আমি তার প্রতি
নারাজ। তখন
রসুলুল্লাহ হুকুম দিলেন, আলকামাকে
আগুনে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে
দাও। আলকামার
মা এ কথা শুনে
গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বললেন,
ইয়া রসুলুল্লাহ! আমার চোখের সামনে
আমার সন্তানকে আগুনে জ্বালিয়ে দিলে
আমি মা হয়ে কেমন
করে তা সহ্য করব?
রসুলুল্লাহ তখন আলকামার মাকে
অনুরোধ করলেন, তাহলে আপনার
সন্তানকে ক্ষমা করে দিন। তা
না হলে অনন্তকাল ধরে
সে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।
তা আপনি কী করে
সহ্য করবেন? একথা শুনে
মায়ের মন নরম হয়ে
গেল, তিনি সঙ্গে সঙ্গে
ক্ষমা করে দিলেন।
তারপর আলকামার জবান থেকে কালেমা
তাইয়্যেবা জারি হয়ে গেল
এবং কালেমা পড়তে পড়তে
ইমানের সঙ্গে আলকামা মৃত্যুবরণ
করলেন।
সূত্র
– বাংলাদেশে প্রতিদিন, লেখক : মাওলানা
মুহাম্মদ আবদুল খালেক, ইসলামী গবেষক।
0 comments:
Post a Comment