Monday, October 5, 2015

মসজিদ কি উচ্ছেদ করা যায়

মসজিদ কি উচ্ছেদ করা যায়


স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি সরকারী জায়গায় নির্মিত মসজিদ উচ্ছেদ ও স্থানান্তর বিষয়ে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে শোনা গেছে। বাংলাদেশের চার লাখেরও বেশি মসজিদের মধ্যে অনেক মসজিদই সরকারী নানা সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও খাস জমিতে স্থাপিত। এসব মসজিদের বিষয়ে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে শরীয়তের নির্দেশনা কী, এ নিয়ে দেশের শীর্ষ ফতোয়া প্রতিষ্ঠানের ইসলামী ফিকাহবিদদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, মসজিদ কখনই উচ্ছেদ করা যায় না। স্থানান্তর করার ক্ষেত্রেও রয়েছে কঠোর বিধি-নিষেধ। যে স্থানে একবার মসজিদ হয়ে যায় কিয়ামত পর্যন্তই এটি মসজিদ হিসেবেই গণ্য হবে। শরীয়তসম্মত প্রয়োজনে তা স্থানান্তর করা হলেও পূর্ববর্তী জায়গাটি মসজিদ রূপেই সম্মান ও পবিত্রতা সহকারে সুরক্ষিত রাখতে হবে।রাজধানীর খ্যাতনামা ইসলামী আইন গবেষক, মারকাজুল ফিকাইল ইসলামীর পরিচালক আল্লামা মুফতি নূরুল আমিন এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পবিত্র কোরআনের ভাষায়, তারাই মসজিদ আবাদ করে যারা আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী। আর যারা মসজিদের কাজে বাধা দেয়, তারা সৃষ্টির নিকৃষ্ট শ্রেণী। নবী করীম (সা.) বলেছেন, গোটা পৃথিবীর সমস্ত জমিনকে আমার জন্য পবিত্র ও মসজিদ স্বরূপ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং মসজিদ বানানোর ক্ষেত্রে জমিনের পবিত্রতা ও প্রকৃত মালিকানার শর্তসাপেক্ষে কোন বাধা নেই। কোন ব্যক্তির জায়গা অন্যায়ভাবে দখল করে মসজিদ নির্মাণ শরীয়তে অনুমোদিত নয়। মসজিদ হতে হবে ক্রয়কৃত নিষ্কণ্টক বা দানকৃত নির্ঝঞ্ঝাট স্থানে। পূর্ণাঙ্গ মসজিদ হওয়ার জন্য ওয়াকফ বা দানকৃত হওয়া জরুরী।কোন রাষ্ট্রে নাগরিকদের ধর্মীয় কাজকর্ম পালনের জন্য সকল ব্যবস্থা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ইসলামী ব্যবস্থায় নাগরিকদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ নির্মাণ করা সরকারের প্রধানতম দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যদি সরকার তা না করে তবে মুসলিম জনসাধারণের উপর এ দায়িত্ব বর্তায়। বাংলাদেশের প্রায় সব মসজিদই জনসাধারণের উদ্যোগে নির্মিত। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগে ক্রয়কৃত কিংবা দানে পাওয়া জায়গা যেমন রয়েছে সরকারী খাস জমি এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী জমিতেও মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদই বৈধ এবং অনুমোদিত। সরকারের উপর প্রদত্ত দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট নামাজিরা কিছুটা হলেও আদায় করেছেন বলেই এসব মসজিদ তারা গড়ে তুলেছেন। শরীয়তসম্মত কারণ ছাড়া এ ধরনের মসজিদ স্থানান্তর করা বৈধ হবে না। উচ্ছেদের তো প্রশ্নই ওঠেনা। কোন বৃহত্তর স্বার্থে মসজিদ স্থানান্তর করতে হলে ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে উপযুক্ত স্থানে নতুন মসজিদ নির্মাণ করে দিতে হবে এবং পূর্ববর্তী মসজিদের শরীয়াভিত্তিক আইনগত অবস্থান বিবেচনা করে ওই জায়গাটির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ওয়াকফকৃত মসজিদ হলে ওখানে আর কোনকিছু নির্মাণ করা বৈধ হবে না। মসজিদের মতই এর সুরক্ষা, সম্মান ও পবিত্রতা নিশ্চিত করতে হবে।বাংলাদেশে সড়ক ও জনপথ, রেলওয়ে, নৌ-পরিবহন, বিভিন্ন কর্পোরেশন ইত্যাদির যত জায়গায় সাধারণ জনগণ নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ নির্মাণ করেছেন সরকারের কর্তব্য সেসব জায়গা স্থায়ীভাবে নামাজের জন্য বরাদ্দ দেয়া। উচ্ছেদ করার চিন্তা যৌক্তিক বা শরীয়তসম্মত নয়।একটি কথা স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, কোন মসজিদই উচ্ছেদ করা যায় না। যদি সম্পূর্র্ণ অন্যায়ভাবে কোন ব্যক্তির জায়গা দখল করে কেউ মসজিদ নির্মাণ করে তাহলে সে মসজিদ নির্মাণই বৈধ হয়নি। এটি মূল মালিককে ফিরিয়ে দেয়া মসজিদ উচ্ছেদ বলে বিবেচিত হবে না। শরীয়তসম্মত কারণে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ স্থানান্তরের মাসআলাও অত্যন্ত জটিল ও সতর্কতাপূর্ণ। হেলাফেলা করে মসজিদ স্থানান্তর শরীয়তে অনুমোদিত নয়। একবার মসজিদ চালু হলে তা বন্ধ বা উচ্ছেদ করা জায়েজ নয়। জমির মালিক যদি রাষ্ট্র, সরকার বা জনসাধারণ হয় তাহলে এতে মসজিদ নির্মাণে কোন বাধা নেই। কারিগরি কোন বাধা থাকলে তা দূর করে মসজিদকে নিষ্কণ্টক ও নির্বিঘœ করাই সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব। কোন বড় পরিকল্পনা বা জাতীয় কাজে যদি অগত্যা মসজিদ স্থানান্তর করতে হয় তাহলে তা হতে হবে শরীয়া বিশেষজ্ঞ আলেম, মুফতি ও ফিকাহবিদদের পরামর্শ সাপেক্ষে। একবার মসজিদ হয়ে গেলে শরীয়তসম্মত কারণ ছাড়া এর স্থানান্তর জায়েজ নয়। উচ্ছেদ তো কোনক্রমেই বৈধ হতে পারে না।   

Copyright Daily Inqilab

0 comments:

Post a Comment