Friday, January 15, 2016

তাবলিগের মেহনত চলুক জীবনভর

তাবলিগের মেহনত চলুক জীবনভর


তুরাগ তীরে বয়ে চলেছে মানব ঢেউ। এ ঢেউকে বলা যায় প্রশান্তির ঢেউ। মানব আত্মা যা উদ্্গিরণ করে তাই হয় প্রশান্তিময়। মানুষকে আত্মাওয়ালা বানানোর মেহনত করে তাবলিগ-জামাত। জিন্দা আত্মা মানুষের এই মিলন বিশ্ব ইজতেমা চলবে দুই দফায় ৬ দিন। কিন্তু এর দাওয়াতি কার্যক্রম চলবে কিয়ামততক। জেনে নেয়া যাক, তাবলিগের আদ্যোপান্ত।


তাবলিগ মানে প্রচার করা, প্রসার করা, পৌঁছে দেওয়া, দাওয়াত দেওয়া। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘বাল্লিগু আন্নি ওয়ালাও আয়াহ’Ñ ‘আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও প্রচার করো।’ (বুখারি।)


 এ হাদিসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা মোবারকপুরী (রহ.) লেখেনÑ ‘কোরআনের ছোট্ট আয়াত হলেও রাসুলের পক্ষ থেকে তাঁর উম্মতের কাছে পৌঁছে দাও। (তুহফাতুল আহওয়াজি)। হাদিস বিশেষজ্ঞরা বলেনÑ ‘বাল্লিগু’Ñ প্রচার করো এটি নির্দেশসূচক ক্রিয়া। নবীর পক্ষ থেকে আয়াত পৌঁছানো উম্মতের ওপর আবশ্যকীয় কর্তব্য। আল্লাহর বাণী কোরআনের আয়াত প্রচার-প্রসারের ওপর গুরুত্বারোপ করার কারণ হলোÑ কোরআন প্রচারের মাধ্যমে মানুষ অহির জ্ঞানে জ্ঞানী হবে। আল্লাহ বলেন, ‘ইন্নামা আখশাল্লাহা মিন ইবাদিহিল ওলামা’Ñ ‘নিশ্চয়ই! আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে।’ (সুরা ফাতের, ৩৫:২৫)। আর এমন আল্লাহভীরু-মোত্তাকি বান্দাদের জন্যই পবিত্র কোরআন পথনির্দেশক। আল্লাহ বলেন, ‘আলিফ-লাম-মিম, জালিকাল কিতাবু লা রাইবাফিহ, হুদাল্লিল মুত্তাকিন’Ñ এটি আল্লাহর কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি আল্লাহভীরুদের জন্য পথনির্দেশক। (সুরা বাকারাহ, ২ : ১-২)।

বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের অন্যতম সংগঠনের নাম তাবলিগ-জামাত। ১৯৬৭ থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। লোক সমাগমের কারণে ২০১১ থেকে দুই মেয়াদে ইজতেমা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেন মুরব্বিরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তাবলিগ জামাতের নিবেদিতপ্রাণ মুসলমান বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য হলো তাবলিগি কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং আগামী এক বছরের কর্মসূচি ঘোষণা করা। আমাদের দেশের অনেক মুসলমান বিশ্ব ইজতেমাকে দ্বিতীয় হজ বা হজের পরে বিশ্ব সম্মেলন বলে থাকেন। অনেকে আবার ইজতেমাকে গরিবের হজ বা ছোট হজও বলে থাকেন। বিশেষ করে টিভি রিপোর্টার ও সাংবাদিক এবং একশ্রেণির নামধারী আলেম একরকম বেশি বলেন। এসবই ধর্মবিরোধী কথা। আমাদের মনে রাখতে হবে, হজ ইসলামের অন্যতম একটি ফরজ রোকন। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের স্তম্ভ বা ভিত্তি ৫টি। ১. এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল, ২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, ৩. জাকাত আদায় করা, ৪. হজ করা ও ৫, রমজান মাসের রোজা রাখা। (বুখারি ও মুসলিম)। 

ইজতেমাকে কোনোভাবেই হজের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ নেই। সামর্থ্যবান কোনো মুসলমান পুরো জীবনে একবারও যদি ইজমেতার ময়দানে না যান তবে তার ব্যাপারে ধর্ম কোনো হুশিয়ারি উচ্চারণ করেনি। কিন্তু সামর্থ্য থাকার পরও কেউ হজ আদায় না করলে আল্লার কাছে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। কারণ এটি আল্লাহর হক। হজের ফরমান জারি করে মহান আল্লাহতাআলা  বলেন, ‘মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর তৈরি করা হয়েছে তা মক্কায় অবস্থিত। একে কল্যাণ ও বরকত দান করা হয়েছে এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়েতের কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং ইব্রাহিমের ইবাদতের স্থান। আর যে এই গৃহের মধ্যে প্রবেশ করবে সেই নিরাপত্তা লাভ করবে। মানুষের মধ্য থেকে যারা এই ঘরে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তারা যেন এই ঘরের হজ সম্পন্ন করেন। এটি তাদের ওপর আল্লাহর হক। আর যে ব্যক্তি এ নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ বিশ্ববাসীর প্রতি মুখাপেক্ষী নন। (সুরা আলে ইমরান, ২ : ৯৬-৬৭)।
তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ উন্নত বিশ্বে এখনো প্রযুক্তির ছোঁয়া পায়নি বিশ্ব ইজতেমা। অনলাইনভিত্তিক দাওয়াতি কার্যক্রম থেকে এখনো পিছিয়ে তাবলিগের দ্বীনি ভাইয়েরা। ইজতেমার বয়ানে দাওয়াতের কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়ে বয়ান হয় না। রাসুল (সা.) তাঁর যুগে প্রচলিত মিডিয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন। তখনকার সময় বহির্বিশ্বের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগের মোক্ষম সুযোগ ছিল হজ মৌসুম। রাসুল (সা.) এ সুযোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। হজে আগত মদিনার অধিবাসীর মাঝে দাওয়াতের কাজ করেন এবং এখান থেকেই মদিনা রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেন। এর ফলে রাসুল (সা.) সফল দায়ী, মুবাল্লিগ ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ইতিহাসের সোনালি পাতায় সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান দখল করেন। মদিনায় এসে রাসুল (সা.) বিশ্বব্যাপী কোরআনের দাওয়াত প্রসারের লক্ষ্যে সমকালীন যোগাযোগের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম দূত মারফত চিঠি প্রেরণ করেন। রাসুল (সা.) বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহর কাছে এত বেশি দূত প্রেরণ করেন যে, ইতিহাস ও সিরাতবিদরা ৬ষ্ঠ হিজরি দূত প্রেরণের বছর হিসেবে নামকরণ করেন।
একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দায়ী ডা. জাকির আবদুল করিম নায়েক বলেন, আজকের সময় রাসুল (সা.) থাকলে অবশ্যই তিনি দাওয়াতের কাজে মিডিয়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতেন। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটারভিত্তিক দাওয়াতি কাজে তাবলিগের ভাইদের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। বিশ্বের তরুণরা এখন সোশ্যাল নেটওয়ার্ককেন্দ্রিক হয়ে পড়েছেন। তাদের ধর্মের পথে আনতে হলে আমাদেরও তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়গুলো তাবলিগি ভাইদের আন্তরিকতার সঙ্গে ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
সূত্রঃ মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
(লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ), দৈনিক আমাদের সময়, 
তাবলিগ সর্ম্পকে আরও জানুন ঃ   
*   তাবলিগ জামাত কি এবং কেন ?  
*    কেন তাবলিগ করব - দাওয়াতে তাবলিগ ইসলামের অনন্য বৈশিষ্ট্য 
*     ইসলাম অনুশিলন ও প্রচারের উপায়    *     
আল কোরআনের আলোকে তাবলিগ
দ্বীন প্রচারের বিস্তৃত একটি উদ্যান বিশ্ব ইজতেমা
তাবলিগ ছয় নম্বর

তাবলীগের  চিল্লা নিয়ে ১টি প্রশ্ন 
   
 

0 comments:

Post a Comment