Saturday, April 23, 2016

গাট্টিওয়ালারা কেন মসজিদে পড়ে থকে

গাট্টিওয়ালারা কেন মসজিদে পড়ে থকে ?

এই গাট্টিওয়ালাদের মসজিদে পড়ে খাওয়া ঘুম ছাড়া আর কোন কাজ নাই আল্লাহ্বলেছেন নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হয়ে রুজির তালাশ কর আর এরা শুধু মসজিদে পড়ে থাকে
.
বন্ধু, আল্লাহ্তায়ালা কোন সুরার কত নম্বর আয়াতে এই হুকুম দিয়েছেন? এবং উক্ত আয়াতের হুবহু বাংলা অর্থ, শানে নুযুল ব্যাখ্যা একটু বল প্লিজ

.
আরে এতসব কি জানি? আমাদের পীর সাহেবের কাছ থেকে শুনেছি, নামায পড়ে মসজিদে পড়ে থাকতে নেই, রুজির তালাশ করতে
.


বন্ধু, তোর পীর সাহেব কি আস্হাবে সুফ্ফার সেই সব সাহাবিদের কথা জানেননা, যারা রাসুলুল্লাহ (:)-এর মসজিদে নববীতে রাত দিন পড়ে থেকে রাসুলুল্লাহ (:)-এর কাছ থেকে হাদিস শিক্ষা করতেন আর কোথা হতে কোন হাদিয়া আসলে সেটা দিয়েই ক্ষুধ-পিপাসা নিবারণ করতেন যাদের না কোন ক্ষেত ছিল, না ছিল কোন ব্যবসা, না চাকরী

আর তোর এলাকার মসজিদে যে গাট্টিওয়ালাদের দেখতেছিস, ওরা তো মাত্র চল্লিশ দিনের জন্য মসজিদে মসজিদে থাকবে তারপর তারা ফিরে যাবে তাদের এলাকায়, আগের মত ব্যবসা, চাকরী, ক্ষেত-কৃষিতে লিপ্ত হবে পার্থক্য এতটুকু হবে যে, আগে তারা ব্যবসা, চাকরী, ক্ষেত-কৃষি করতো শুধু পার্থিব লাভের আশায় আর এখান থেকে ফিরে গিয়ে পার্থিব লাভের পাশাপাশি আখেরাতের লাভের আশায়ও এসব করবে 

.
বন্ধু তুই এই গাট্টিওয়ালাদের খাওয়া-ঘুমই দেখলি?!  দেখলিনা এই খাওয়া-ঘুমের সেই আলো, যেটা দিয়ে তারা তাদের জীবনের ছোট-বড় সব গুনাহ দেখতে পায়, আর সেগুলো থেকে তাওবা করে ফিরে আসে রব্বে করিমের পদতলে দেখলিনা সূর্যকিরণের সাথে প্রতিযোগিতা করে সজাগ হওয়া সেই চোখ দুটুকে, যেগুলো আগে শুধু তপ্ত রোদ্দুরে সজাগ হত
.
দেখেছিস বন্ধু,
এই খাওয়া আর ঘুমের মধ্যে কী এক প্রভাব, চার মাস আগের অহংকারী চার মাস পরে বিনয়ী হয়ে যায়! যার কিনা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস আগে মাথায় টুপি দিতে লজ্জাবোধ করত, তার কি হয়ে গেল যে, এখন তার আপাদমস্তক সুরতে নববী!  কী আশ্চর্য ধরণের এই খাওয়া-ঘুম, তুই খেয়াল করেছিস!? 
.
ওহ,, দুঃখিত,
এতো সব দেখার আর খেয়াল করার তোর সময় কোথায় পীর সাহেবের যে নিষেধ আছে
.
তারপরও তোকে কিছু দলিল শুনাই আমার কথা মানার দরকার নেই তোর পিরের ধোকার প্রাচীর ভেঙে এই কথাগুলো মানতে পারিস কিনা দেখ...
.
ইমাম বুখারী (রহঃ) বোখারী গ্রন্থে একটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন,
পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো 

অধ্যায়ে দলিল হিসেবে তিনটি হাদীস বর্ণনা করেছেন
- সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. নিজের সম্পর্কে বলেন,
,তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক স্ত্রী-পুত্র কেউ ছিল না তখন তিনি মসজিদে নববীতেই (রাতে দিনে) ঘুমাতেন [সহীহ বুখারী]

-
জামে তিরমিযী (তিরমিযী শরীফ) ইবনে আবী শাইবার বর্ণনায় বক্তব্যটি তুলে ধরা হয়েছে এভাবে, ‘আমারা একদল যুবক রাতে দিনে মসজিদে শয়ন করতাম হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ আইনী (রহ.) বলেন,
এতে স্থানীয় লোকদের জন্যও (যারা মুসাফির নয়) মসজিদে ঘুমানো জায়েয বলে প্রমাণিত হয় (উমদাতুল কারী)

-
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন,
পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয এটাই অধিকাংশের মত [ফাতহুল বারী]
::
- হযরত সাহল ইবনে সা রা. বলেন,
একদিন রাসূলুল্লাহ সা. হযরত ফাতেমার ঘরে এসে আলীকে (রা.) পাননি জিজ্ঞেস করলেন, আলী কোথায়? ফাতেমা বললেন, আমাদের দুজনে মধ্যে কিছু রাগারাগি হয়েছে ফলে তিনি রাগ করে বাইরে চলে গেছেন রাসূলুল্লাহ সা. একজনকে বললেন: তাকে একটু খুঁজে দেখ, কোথায়? লোকটি এসে জানাল, আলী মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন রাসূলুল্লাহ সা. গিয়ে দেখলেন আলী শুয়ে আছেন শরীরের এক পাশ থেকে চাদর পড়ে গেছে আর গায়ে ধুলো-বালি লেগে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর গায়ের বালি ঝেঁড়ে দিচ্ছেন আর (রসিকতার স্বরে) বললেনআবু তোরাব’ (মাটির পিতা) উঠ উঠ!
[সহীহ বুখারী]

::
- হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বলেন,
হযরত আবু যর (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর খেদমত করতেন অবসর হলেই মসজিদে চলে যেতেন মসজিদই ছিল তাঁর ঘর সেখানেই ঘুমাতেন
-
একদিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে গিয়ে দেখলেন, আবু যর মসজিদে শুয়ে আছেন তিনি তাকে পা দিয়ে স্পর্শ করলেন আবু যর (রা.) উঠে বসলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখানে ঘুমিয়ে কেন? আবু যর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোথায় ঘুমাব আর ? ছাড়া কি আমার আর কোন ঘর আছে?
[ মুসনাদে আহমদ হা.২৬৯২৮, মাজমাউয যাওয়াইদ হা. ২০২৩]

-
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমত করতেন যখনই অবসর হতেন, মসজিদে এসে শুয়ে আরাম করতেন
[ আল মুজামুল আওসাত, তাবারানী, মাজমাউয যাওয়াইদ হা. ২০২৪]

-
মোট কথা হযরত আবু যর (রা.)- এর থাকার মত কোন ঘরই ছিল না তিনি সব সময়ই মসজিদে থাকতেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দিনই তাঁকে মসজিদে ঘুমাতে নিষেধ করেননি

0 comments:

Post a Comment