বিশ্বনবীর (স.) যুগে তাবলিগ
প্রিয়নবীর (স.)
আদর্শ
ও
আহ্বান:
‘বাল্লিগু
আন্নি
ওয়ালাউ
আয়াত’
অর্থাৎ
“একটি
কথা
হলেও
তা
আমার
পক্ষ
থেকে
প্রচার
করো”
(বুখারি)।
জানা
যায়
নবুওয়াতের সূচনালগ্নেই সর্বপ্রথম মুসলমান হন
বিবি
খাদিজা
(রা.),
পুরুষদের
মধ্যে
হযরত
আবু
বকর
(রা.),
যুবকদের
মধ্যে
হযরত
আলী
(রা.)।
পবিত্র কোরআনের
ষাট-বাষট্টিটি আয়াতে সরাসরি
তাবলিগের
কথা
আছে। মহান আল্লাহ্
প্রিয়নবীকে (স.) বলেছেন: “আপনি
মানুষকে
আপনার
প্রতিপালকের দিকে ডাকুন
প্রজ্ঞা
ও
সদোপদেশের সঙ্গে....” (নাহল:
১২৫)।
প্রথম
তিন
বছর
প্রিয়নবী
(স.)
অপ্রকাশ্য তাবলিগি তৎপরতায়
খুব
বেশি
আশাবাদী
হতে
পারেননি।
তখনই
মহান
আল্লাহ্র
নির্দেশ:
“হে
চাদর
আবৃত
! উঠুন!
সতর্ক
করুন
এবং
আপনার
পালনকর্তার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা
করুন”
(মুদ্দাসির: ০১- ০৩)।
মহান
আল্লাহ্
বলেন:
“তোমাকে
যা
আদেশ
করা
হয়েছে
তা
প্রকাশ
করো...”।
প্রিয়নবী (স.)
সাফা
পাহাড়ের
পাদদেশে
সর্বদলীয়
সম্মেলনে
“লা
ইলাহা
ইল্লাল্লাহ্......” ধ্বনিতে তাওহিদ
প্রচার
করলেন।
সাফা
পাহাড়ে
প্রকাশ্যে তাবলিগের সূচনা
ও
তাওহিদের
আহ্বান
স্বার্থান্বেষী কুচক্রী পৌত্তলিক
গোষ্ঠী
প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু প্রিয়নবীর (স.) অব্যাহত তাবলিগে
তাঁর
প্রিয়
চাচা
বীর
কেশরী
হযরত
হামজা,
হাবশি
কৃতদাস
বিলাল
(রা.)সহ অনেকেই তাওহিদের
আহ্বানে
সাড়া
দিলেন।
প্রাথমিক
পর্যায়ে
প্রিয়নবী
(স.)
মক্কার
নিরিবিলি
স্থানে
অবস্থিত
সাহাবি
হযরত
আরকামের
(রা.)
বাড়ি
‘দারুল
আরকামে’
নিয়মিত
তা’লিমের
ব্যবস্থা
করেন।
অন্যদিকে
প্রিয়নবী
(স.)
অভিজ্ঞ
সাহাবিগণকে বিভিন্ন গোত্রের
মধ্যে
তাবলিগি
কাজে
পাঠিয়ে
দিতেন।
প্রিয়নবীর (স.)
তাবলিগের
কারণে
তিনি
ও
তাঁর
সমর্থকদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে
গেলে
তিনি
৬১৫
খ্রি.
প্রথমে
দশটি
এবং
পরে
আরো
তিরাশিটি
পরিবারকে
আবিসিনিয়ায় পাঠিয়ে দেন। প্রথম দলের
নেতৃত্বে
ছিলেন
হযরত
জাফর
ইবনু
আবু
তালিব
(রা.)
দ্বিতীয়
দলের
নেতৃত্বে
হযরত
ওসমানের
(রা.)
সঙ্গে
ছিলেন
নবী
তনয়া
রোকেয়া
(রা.)।
প্রবাসী
এসব
মুসলমানদের তাবলিগের ফলে
মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে
দাঁড়ায়
শতাধিক।
নবুওয়াতের ষষ্ঠ
বর্ষে
প্রিয়নবীর (স.) দোয়া ও
দাওয়াতে
হযরত
ওমর
(রা.)
ইসলাম
ধর্ম
গ্রহণ
করেন।
এ
দিকে
নবুওয়াতের দশম বর্ষে
প্রিয়নবীর (স.) জীবন সঙ্গিণী
খাদিজা
(রা.)
ও
পিতৃব্য
আবু
তালিব
ইন্তেকাল
করলে
বিধর্মীরা তাদের অমানুষিক
নিপীড়নের
মাত্রা
আরো
বাড়িয়ে
দেয়। তখন প্রিয়নবী
(স.)
তাঁর
পালিত
পুত্র
জায়েদকে
(রা.)
নিয়ে
তায়েফ
যান। বিপথগামী তায়েফবাসী তাবলিগে সাড়া
না
দিয়ে
বরং
প্রিয়নবীকে (স.) পাথর নিক্ষেপ
করে
আহত
করে।
তায়েফ থেকে
ফেরবার
পর
প্রিয়নবী
(স.)
মক্কায়
আগত
বিদেশী-ব্যবসায়ী,
মুসাফির,
গোত্রপ্রধান বা তাদের
প্রতিনিধির কাছে তাবলিগ
শুরু
করেন।
তখন
মদীনার
আউস,
খাজরাজ
গোত্রের
কাছে
প্রিয়নবীর (স.) নবুওয়াত প্রাপ্তির সংবাদ পৌঁছে।
৬২০
খ্রি.এ
খাজরাজ
গোত্রের
০৬
জন,
পরের
বছর
খাজরাজ
গোত্রের
১০
জন
এবং
আউস
গোত্রের
০২
জন
ইসলাম
গ্রহণ
করেন।
এরাই
মদীনায়
তাবলিগের
সূচনা
করেন।
অন্যদিকে
প্রিয়নবী
(স.)
মুসাব
ইবনু
ওমায়িরকে
(রা.)
মদীনায়
তাবলিগের
জন্য
প্রেরণ
করেন।
পরবর্তী
বছর
পুরুষ
মহিলাসহ
৭৫
জন
মদীনাবাসী মক্কায় এসে
ইসলাম
গ্রহণ
করেন
এবং
প্রিয়নবীকে (স.) মদীনায় যাওয়ার
আমন্ত্রণ
জানান।
মদীনার
এ
সব
মানুষ
৬২০,
৬২১,
৬২২
খ্রি.এ
‘আকাবা’
পাহাড়ের
পাদদেশে
প্রিয়নবীর (স.) সাক্ষাতে ইসলাম
গ্রহণ
করেন
এবং
কতিপয়
মানবিক
বিষয়ে
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। ঘটনাটি ইতিহাসে
‘আকাবার
শপথ’
হিসেবে
খ্যাত।
ইসলাম
প্রতিষ্ঠার জন্য ৬২২
খ্রি.
২৪
সেপ্টেম্বর প্রিয়নবী (স.)
মদীনায়
‘হিজরত’
করেন।
হিজরতের পর
ঐতিহাসিক
মদীনা
সনদ
প্রণয়নের
ফলে
প্রিয়নবী
(স.)
রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বে তাবলিগের
সুযোগ
লাভ
করেন।
এরপরও
ষড়যন্ত্রকারীদের চাপিয়ে দেয়া
যুদ্ধে
৬২৪,
৬২৫,
৬২৭
খ্রি.
এ
বদর,
ওহুদ,
খন্দক
প্রভৃতি
যুদ্ধে
মুসলমানদের জান-মালের
ব্যাপক
ক্ষতি
হলেও
প্রিয়নবী
(স.)
তাঁর
তাবলিগ
অব্যাহত
রাখেন।
পরবর্তীতে ৬২৮ খ্রি.
হুদাইবিয়ার সন্ধি বা
‘শান্তি
সনদে’র
ফলে
প্রিয়নবীর (স.) তাবলিগ আন্তর্জাতিক পরিম-লে
বিস্তৃত
হয়।
হুদাইবিয়ার সন্ধি
বা
শান্তি
চুক্তির
সুযোগে
হিজরি
সপ্তম
সালে
প্রিয়নবী
(স.)
দেশে-দেশে
পত্র
প্রেরণের
মাধ্যমে
সমসাময়িক
রাষ্ট্রপ্রধানবর্গের কাছে দাওয়াত-ও
তাবলিগের
বার্তা
পৌঁছে
দেন। এজন্য হিজরি
সপ্তম
সালকে
‘পত্র
প্রেরণের
বর্ষ’
বলা
হয়। মিশরীয় গবেষক
ড.
হামিদুল্লাহ্র মতে প্রিয়নবীর (স.) প্রেরিত এ
সব
পত্রের
সংখ্যা
আড়াই
শতাধিক।
প্রিয়নবীর (স.)
নবুওয়াতি
জীবনের
বিরাট
অংশজুড়ে
রয়েছে
বৈদেশিক
যোগাযোগের সোনালি অধ্যায়।
ইসলাম
প্রচার
ও
প্রতিষ্ঠায় তাঁর (স.)
আদর্শের
বার্তা
নিয়ে
মুসলিম
দূতগণ
পৌঁছে
গেছেন
দেশ-দেশান্তরের বিভিন্ন রাজেন্যবর্গের দরবারে। ইসলামের দাওয়াৎ
নিয়ে
প্রিয়নবীর (স.) প্রতিনিধিগণ দেশে-দেশে
পৌঁছে
ছিলেন।
তাঁদের
কয়েকজনের
নাম
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যথা:
ইয়ামামার গর্ভনর
হাওয়া
বিন
আলী,
বাহরাইনের গর্ভনর মুনযির
বিন
সাওয়া,
ওমানের
গর্ভনর
জাফর
বিন
জুলান্দি,
দামেশকের
গর্ভনর
হারিস
বিন
আবি
শমর
গাসসানি,
আবিসিনিয়া বা হাবশার
বাদশাহ্-
নাজ্জাশি
আসহাম,
মিশররাজ
মাকাওকাস,
ইরানের
শাহানশাহ্ কিসরা পারভেজ,
রোমান
কায়সার
হিরাক্লিয়াস প্রমুখ।
প্রিয়নবী (স.)
তাঁর
সমসাময়িক
রাজন্যবর্গের মধ্যে সবচেয়ে
প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর শাসক
রোম
স¤্রাট
হিরাক্লিয়াসের কাছে দ্বীনের
দাওয়াৎ
পৌঁছে
দেন। প্রিয়নবী (স.)
শ্রুতি
লেখকের
মাধ্যমে
লিখিয়ে
পাঠান:
“আমি
আপনাকে
ইসলামের
প্রতি
আহ্বান
জানাচ্ছি।
যদি
শান্তি
লাভ
করতে
চান
তবে
ইসলামে
দীক্ষিত
হোন। প্রিয়নবীর (স.)
পত্রের
প্রতিক্রিয়ায় হিরাক্লিয়াস বলেছিলেন,
‘হায়
! আমি
যদি
তাঁর
কাছে
পৌঁছতে
পারতাম
তবে
আমি
তাঁর
কদম
মোবারক
ধুয়ে
দিতাম’...”
(বুখারি)।
প্রিয়নবীর (স.)
তা’লিম
ও
তাবলিগের
সার্বক্ষণিক সঙ্গী ও
সাক্ষী
মসজিদে
নব্বী
সংলগ্ন
সুফ্ফাবাসীগণ।
‘আসহাবে
সুফ্ফা’র
সবাই
প্রিয়নবীর (স.) সবকর্ম ও
বাণী
অত্যন্ত
সতর্কতার
সঙ্গে
আয়ত্ত
করতেন
এবং
অন্যদের
কাছে
পৌঁছে
দিতেন।
প্রিয়নবীর (স.) বাণী ও
আদর্শ
প্রচারের
জন্য
হযরত
সা’দ
বিন
আবি
ওয়াক্কাস
(রা.)
চীনে
পাড়ি
জমান
প্রিয়নবীর (স.) জীবদ্দশায়ই। হযরত মু’আজ
বিন
জাবালকে
(রা.)
প্রিয়নবী
(স.)
ইয়েমেনে
প্রেরণ
করেন।
এমনই
অসংখ্য
তৎপরতায়
প্রিয়নবীর (স.) তাবলিগ সম্মৃদ্ধ
ও
বিস্তৃত
ছিল।
ইসলাম প্রচার,
প্রতিষ্ঠায় তাবলিগ একটি
শান্তিময়
কৌশল
এবং
সার্বজনীন ও সার্বক্ষণিক প্রয়াস।
৬১৭
খ্রি.
১৪
রজব
বৃহস্পতিবার প্রিয়নবীর (স.)
আঙ্গুলের
ইশারায়
চাঁদ
দ্বিখ-িত
হবার
ঘটনায়
‘ভোজ’
নামক
জনৈক
রাজার
ইসলাম
গ্রহণ
এবং
আব্দুল্লাহ্ নাম ধারণের
মাধ্যমে
দক্ষিণ
এশিয়ায়
ইসলামের
সোনালি
আভা
রাজকীয়
আমেজে
ছড়িয়ে
পড়ে। সে আলোই
অল্প
অল্প
বাংলার
ঘরে
ঘরে
ছড়িয়ে
পড়ে। গবেষকগণের প্রবল
ধারণা,
হি.
৩য়
সালে
হযরত
সা’দ
ইবনু
আবু
ওয়াক্কাস
(রা.)
যখন
চীনে
ইসলাম
প্রচারের
জন্য
যান
তখন
পথিমধ্যে
তিনি
তাঁর
সঙ্গীদের
নিয়ে
কিছুদিন
রংপুর
এলাকায়
অবস্থান
করে
ইসলামের
দাওয়াতি
কাজ
করেন।
ইসলাম প্রতিষ্ঠায় শান্তিময় কৌশলের
নাম
তাবলিগ।
এজন্যই
দেখা
যায়
হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়
যেখানে
মুসলমানের সংখ্যা ছিল
১৪০০
জন
সেখানে
দু’বছরের
ব্যবধানে
মক্কা
বিজয়ের
সময়
মুসলমানের সংখ্যা দাঁড়ায়
দশ
হাজার।
আর
তার
দু’বছর
পর
শুধু
বিদায়
হজ্বে
অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল
কয়েক
লাখ। এতেই প্রমাণিত
হয়
ইসলাম
তরবারীর
জোড়ে
নয়
বরং
তাবলিগের
শান্তিময়
পন্থায়
বিশ্ববিজয়ী ধর্মের মর্যাদা
লাভ
করে। তাই তো
বিদায়
হজ্বের
ভাষণেও
প্রিয়নবী
(স.)
তাবলিগের
শিক্ষা
দিয়ে
সবশেষে
বলে
ছিলেন
“উপস্থিতগণ যেন আমার
বাণী
অনুপস্থিতগণের কাছে পৌঁছে
দেয়”
(মুওয়াত্তা, মেশকাত)।
সূত্র ঃ
লী
এরশাদ
হোসেন
আজাদ,
দৈনিক
ইনকিলাব।
0 comments:
Post a Comment