কেন উচ্চশিক্ষিতা তাদের সন্তানদের কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি করাচ্ছে
বাবা বুয়েটের প্রফেসর, পাচ ছেলে দুই মেয়ে।
পাচ
ছেলেই
কওমী
মাদ্রাসা
হতে
কোরআনের
হাফেজ
এবং
আলেম
এবং
প্রত্যেকেই
কোন
না
কোন
কওমী
মাদ্রাসায়
খেদমতে
নিয়োজিত। দুই মেয়ে কোরআনের হাফেজা।
প্রফেসর সাহেব ছেলেমেয়েদের ডাক্তার ইন্জিনিয়ার না বানিয়ে কি ভুল করলেন??
দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় কওমী মাদরাসা নিয়ে একটি দারুন রিপোর্ট করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ দেশের অনেক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার উচ্চ শিক্ষিতরা তাদের সন্তানদের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় না পড়িয়ে বরং কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন। এমনকি এসব উচ্চ শিক্ষিতরা অন্যদেরও নিজেদের সন্তানকে
কওমি মাদ্রাসায় দেয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।
তাদের
এমন
চেষ্টার
কারণ
হিসেবে
তারা
বেশ
কিছু
কারণ
সামনে
আনছে। তারা বলছেন, পশ্চিমাদের আদলে তৈরি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই নৈতিকতার সারসত্তা শূন্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া এ শিক্ষা মানুষকে অতি বস্তুবাদি করে তোলার পাশাপাশি সমাজের প্রতি তরুণদের দ্বায়িত্ববোধ, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হ্রাস করাসহ নানা অবক্ষয়ের জন্ম দিয়েছে।
এ
কারণে
তারা
নিজেরা
সাধারণ
শিক্ষা
ব্যবস্থার
সর্বোচ্চ
স্তরে
পদার্পণ
করেও
নিজেদের
সন্তান
বা
পরিবারের
অন্য
সদস্যদের
কওমি
মাদ্রাসায়
পড়াচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর লিয়াকত সিদ্দিকী যায়যায়দিনকে বলেন, 'আমার মাত্র একটি সন্তান (ছেলে)। তাকে আমরা সাধারণ শিক্ষায় না পড়িয়ে কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করাচ্ছি।
এর
ফলে
আমি
নিশ্চিত
থাকতে
পারছি
যে
আমার
সন্তান
এমন
কোনো
ব্যক্তির
সঙ্গে
মিশে
যাচ্ছে
না
যেখান
থেকে
তার
চরিত্র
নষ্ট
হতে
পারে। সে অত্যন্ত নিরাপদে থাকছে ও বেড়ে উঠছে।'
শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে ও মৃত্যুর পরের জীবনে জান্নাতের আশায় সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় পড়াচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইন বিভাগের সিনিয়র এ শিক্ষক বলেন, 'জান্নাত তো পরকালের বিষয়, এ কালেই আমরা আমাদের সন্তানদের যেসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়াতে দেখছি তা থেকেও তো সাধারণ শিক্ষার প্রতি আস্থা রাখতে পারছি না।
চারপাশে
এমন
কোনো
খারাপ
কাজ
নেই
যাতে
বর্তমান
প্রজন্ম
যুক্ত
হচ্ছে
না। এর বিপরীতে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই আদর্শ চরিত্রবান হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে। উচ্চ নৈতিক মান ধারণ করছে।
এ
কারণেই
ছেলেমেয়েদের
কওমি
শিক্ষায়
শিক্ষিত
করছি।'
তবে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে ভয় ও আশাও যে এর পেছনে কাজ করছে তাও অস্বীকার করেননি এ শিক্ষক।
তিনি
জানান,
তার
জানামতে
দেশের
অনেক
সচিব,
অতিরিক্ত
সচিব,
উপসচিবসহ
শিক্ষক,
ডাক্তার,
ইঞ্জিনিয়ারও
তাদের
সন্তানদের
কওমি
মাদ্রাসায়
পড়াচ্ছেন,
এবং
এ
প্রবণতা
দিনে
দিনে
আরও
বাড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ বিভাগের আরেক শিক্ষক ড. মো. গোলাম রব্বানী যায়যায়দিনকে বলেন, তার দুই সন্তানের ছোটজনের বয়স চার বছর।
এবং
বড়জন
এবার
নাজেরানা
পর্যায়ে
পড়াশোনা
করছে। তিনি তার ছেলের কথা বলতে গিয়ে বলেন, তার ছেলের মাদ্রাসার খতমে বুখারির (সমাবর্তন) অনুষ্ঠানের হাদিসের সনদ বলার সময়ে শিক্ষকের নাম বলতে গিয়ে শ্রদ্ধায় শিক্ষার্থীদের
তিনি
কাঁদতে
দেখেছেন। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা পত্রিকা খুললেই দেখা যায় শিক্ষক, ভিসি, প্রো-ভিসি, রেজিস্ট্রার, অন্য ছাত্র সংগঠনের ওপর, অনেক সময় নিজেরা নিজেরা মারামারি করছে। পড়াশোনা করতে এসে একজন অন্যজনকে আঘাত করার মতো জঘন্য পথেও পা বাড়াতে দ্বিধাবোধ করছে না।
তারা
একবারও
সহপাঠীর
মা-বাবার কথা ভাবছে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ শিক্ষক।
তিনি হতাশার সঙ্গে বলেন, 'আমরা শিক্ষক হিসেবে আদর্শ মানুষ তৈরিতে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হচ্ছি।
আমরা
আমাদের
শিক্ষার্থীদের
আদর্শ
মানুষ
হিসেবে
গড়ে
তুলতে
পারছি
না।' এ কারণে নিজের সন্তানকেও আধুনিক শিক্ষায় না পড়িয়ে কওমি মাদ্রাসায় পড়াচ্ছেন বলে জানান বিজ্ঞান অনুষদের এ শিক্ষক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে
অনার্স
শেষ
করে
সরকারি-বেসরকারি চাকরি না খুঁজে যোগদান করেন ময়মনসিংহের এক কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে। সেখানে বাংলা, ইংরেজি ও অংকের ক্লাস নিয়ে থাকেন তিনি।
অসাধারণ কণ্ঠের অধিকারী এ বক্তির কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, অতীতে এক সময় বড় গায়ক হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তিনি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
এর
কারণ
হিসেবে
তিনি
কওমি
ব্যবস্থার
সঙ্গে
জড়িতদের
সহজ
সরল,
কলুষমুক্ত
ও
আনাড়ম্বর
জীবনই
তার
পছন্দ
বলে
জানান।
শুধু প্রফেসর লিয়াকত সিদ্দিকী, ড. মো. গোলাম রব্বানী বা সংগীত বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করা মুহাম্মদ হোসেনই শুধু নয়, দেশের অসংখ্য সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি ক্রমেই কওমিয়া শিক্ষার প্রতি ঝুঁকছে।
সরকারের
সচিব
থেকে
শুরু
করে
রাজনীতিবিদসহ
বিভিন্ন
পর্যায়ের
লোকেরা
এ
শিক্ষার
প্রতি
আগ্রহী
হচ্ছে। ফলে শিক্ষাবিদরা এ শিক্ষাকে আধুনিক করার জন্যও তাদের দাবি জোরদার করছে।
কওমী মাদ্রাসা সম্পর্কে জানুন এই লিঙ্কে
কওমী মাদ্রাসা সম্পর্কে আরও জানুন এই লিঙ্কে
0 comments:
Post a Comment