খ্রিস্টান অপকৌশল থেকে সাবধান
ইহুদি
খৃষ্টানরা মুসলমানদের প্রকাশ্য দুশমন। আমাদের
প্রিয় নবী থেকে এযাবতকাল
তারা আমাদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার
গোপনীয় ও প্রকাশ্য দুশমনি
করে আসছে। এ দুশমনি
থেকে আমাদের েএবং আমাদের পরবর্তী প্রজম্মকে রক্ষার সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালাতে হবে,
কৌশলী হতে হবে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলআমিনের কাছে সাহায্য চেয়ে যেতে হবে। এব্যপারে বিজ্ঞ
আলেম এবং ইসলামপ্রিয় কিছু ভাইয়ের সুপারিশ নিম্মে তুলে ধরা হল।
ভূমিকা
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহীম
সকল প্রশংসা
আল্লাহ তা‘আলার জন্য,
যিনি সৃষ্টিকুলের রব, আর সালাত
ও সালাম বর্ষিত হোক
আমাদের নবী ও রাসূল
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর;
যিনি প্রেরিত হয়েছিলেন সকল মানুষের কাছে
রহমতস্বরূপ, সকল নবী-রাসূলদের
ধারার পরিসমাপ্তি। অনুরূপ
তাঁর সকল পরিবার-পরিজন,
সঙ্গী-সাথীগণ এবং কিয়ামত
পর্যন্ত যারা যথার্থভাবে তাদের
অনুসরণ করবে তাদেরও ওপর।
অতঃপর, মুসলিমদের
মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা
অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা আলোকিত করেছেন
তাদের কাছে এটা অস্পষ্ট
নয় যে, ইয়াহূদী, খ্রিস্টান
ও অন্যান্য সকল কাফির অপশক্তি
মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুতার উদ্দেশ্যে জোটবদ্ধ হয়েছে; তাদেরকে ধর্মচ্যুত
করতে এবং নিজ ধর্মের
প্রতি সন্দিহান করার উদ্দেশ্যে; অথচ
আল্লাহ তা‘আলা এ
সত্য দীন ইসলামকে প্রচারের
জন্যই সকল নবী রাসূলদের
ধারা পরিসমাপ্তকারী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সকল
মানুষের নিকট প্রেরণ করেছেন।
জনসাধারণকে ইসলাম
থেকে বাধা প্রদান, মুসলিমদেরকে
পথভ্রষ্ট ও তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে
করায়ত্ব করা এবং তাদের
বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অনেক অপকৌশল কাফিরদের
নিকট রয়েছে। তাদের
ধর্মপ্রচার সংস্থাগুলো উক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকল্পে
ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং
বর্তমানে তাদের অপতৎপরতা মারাত্মক
আকার ধারণ করেছে।
তাদের অপকৌশল ও পথভ্রষ্টকারী
প্রচার মাধ্যমের অন্যতম হলো, “আহলে
কিতাব মিশন দক্ষিণ আফ্রিকা”
নামক প্রচার পত্র।
তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিল
সংকলিত বিভিন্ন প্রকার শিক্ষা প্রোগ্রাম
সম্বলিত এই প্রচার পত্রটি
ইসলামের মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে আরব ভূখণ্ডে ব্যক্তিগত
বা সংস্থা ও সংগঠনের
নামে বিনা মূল্যে ডাকযোগে
বা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বিতরণ
করা হয়।
অতএব, বিধর্মীদের
এসব সুসংগঠিত কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও এগুলোর ব্যাপারে
সচেতনতা সৃষ্টি এবং তাদের
সমস্ত অপতৎপরতা থেকে সতর্ক করার
বিষয়টি মুসলিমদের জন্য আগাম সুসংবাদ
হিসেবে বিবেচিত। তাদের
এ সব ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে
সৌদী আরবের ফাতওয়া বিভাগের
স্থায়ী কমিটির নিকট বারবার
পত্র ও টেলিফোনে দৃষ্টি
আকর্ষণ করাও একটি প্রশংসিত
উদ্দোগ হিসেবে গণ্য।
যারা এসব চিঠি লিখেছেন
তারা এমন কিছু দীনী
আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, যারা চেয়েছেন এর
মাধ্যমে উক্ত দীনী গবেষণা
ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী
কমিটি কর্তৃক খ্রিস্টানদের এসব
প্রকাশনার ভয়াবহতা ও মারাত্মক কুফুরী
দাওয়াতের ব্যাপারে মুসলিমদের সতর্ক করার।
সুতরাং আমরা
আল্লাহর সাহায্য কামনা করে বলব,
“পৃথিবীর বুকে ইসলামের আলো
প্রজ্জ্বলিত হওয়ার উষালগ্ন থেকেই
ইসলামের শত্রুরা নিজ নিজ জাতি-ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে
ইসলামের বিরুদ্ধে দিবা-রাত্রি চক্রান্তে
লিপ্ত রয়েছে। সুযোগ
পাওয়া মাত্রই তারা ইসলামের
অনুসারীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে,
যাতে তাদেরকে হিদায়াতের আলো থেকে বের
করে ভ্রষ্টতার গভীর অন্ধকারে নিয়ে
যেতে পারে। চায়
ইসলামী রাষ্ট্রগুলোকে উপনিবেশে পরিণত করতে এবং
ইসলামী শক্তির প্রভাব মানুষের
অন্তরে দুর্বল করে দিতে। তাদের
ষড়যন্ত্রের স্বরূপ তুলে ধরে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّا يَوَدُّ
ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ
وَلَا ٱلۡمُشۡرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيۡكُم
مِّنۡ خَيۡرٖ مِّن رَّبِّكُمۡ﴾
[البقرة: ١٠٥]
“আহলে কিতাবদের
(ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান) মধ্যে
যারা কুফুরী করেছে তারা
এবং মুশরিকরা এটা চায় না
যে, তোমাদের রবের নিকট থেকে
তোমাদের প্রতি কোনো কল্যাণ
অবতীর্ণ হোক।” [সূরা
আল-বাকারাহ, আয়াত: ১০৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَدَّ كَثِيرٞ
مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ لَوۡ
يَرُدُّونَكُم مِّنۢ بَعۡدِ إِيمَٰنِكُمۡ
كُفَّارًا حَسَدٗا مِّنۡ عِندِ
أَنفُسِهِم مِّنۢ بَعۡدِ مَا
تَبَيَّنَ لَهُمُ ٱلۡحَقُّ﴾ [البقرة:
١٠٩]
“তাদের নিকট
সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও আহলে
কিতাবদের (ইয়াহূদী-খ্রিস্টান) অনেকেই তোমাদের ঈমান
আনার পর ঈর্ষামূলক মনোভাববশতঃ
আবার তোমাদেরকে কাফিররূপে ফিরিয়ে পাওয়ার আকাঙ্খা
করে।” [সূরা
আল-বাকারাহ, আয়াত: ১০৯]
তিনি আরো
বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُوٓاْ إِن تُطِيعُواْ فَرِيقٗا
مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ يَرُدُّوكُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡ كَٰفِرِينَ
١٠٠﴾ [ال عمران: ١٠٠]
“হো মুমিনগণ!
যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে,
তোমরা যদি তাদের দল
বিশেষের আনুগত্য কর, তবে তারা
তোমাদেরকে ঈমান আনার পর
আবার কাফির বানিয়ে ছাড়বে।” [সূরা
আলে ইমরান, আয়াত: ১০০]
ইসলামের প্রধান
শত্রুদের মধ্যে অন্যতম হলো
মুসলিম বিদ্বেষী খ্রিস্টান জাতি। তারা
সারা বিশ্বে ইসলামের প্রচার
ও প্রসার প্রতিরোধের জন্য
তাদের সমস্ত শক্তি ব্যয়
করে চলেছে। বরং
তারা মুসলিম দেশে গিয়ে
মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত, বিশেষ করে
মুসলিম বিশ্বের বর্তমান দুর্বল অবস্থাসমূহকে পুঁজি
করে অগ্রসর হচ্ছে।
এটা সুস্পষ্ট
যে, তাদের এ আকস্মিক
আক্রমণের উদ্দেশ্য হলো, মুসলিমদের আক্বীদা-বিশ্বাসকে দুর্বল করা এবং
দীন ইসলামের প্রতি সন্দেহ জাগিয়ে
দেওয়া, এসবের মাধ্যমে তারা
মুসলিমদেরকে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন
করে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার
দুরভিসন্ধিতে লিপ্ত। তাদের
এসব মিশনারী কার্যক্রমকে তারা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে
‘তাবশীর’ বা সুসংবাদ’ নামকরণ
করেছে। বস্তুত
তাদের এসব কার্যক্রম তো
মূর্তিপূজার প্রতিই আহ্বান, যা
বিকৃত খ্রিস্টবাদ। যার
ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার
পক্ষ থেকে কোনো প্রমাণ
নেই। আর
আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস
সালাম তা থেকে সম্পূর্ণ
মুক্ত।
এ সব
খ্রিস্টান তাদের এসব দুঃস্বপ্নকে
বাস্তবায়নের লক্ষে অজস্র অর্থ
ও শ্রম ব্যয় করে
যাচ্ছে; এসব দ্বারা তাদের
উদ্দেশ্য হচ্ছে পুরো বিশ্বকে
খ্রিস্টান বানানো, বিশেষ করে মুসলিমদেরকে; কিন্তু তাদের অবস্থা
তো ঐরূপ যেমন আল্লাহ
তা‘আলা বর্ণনা করেন: ﴿إِنَّ
ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ لِيَصُدُّواْ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۚ
فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيۡهِمۡ
حَسۡرَةٗ ثُمَّ يُغۡلَبُونَۗ وَٱلَّذِينَ
كَفَرُوٓاْ إِلَىٰ جَهَنَّمَ يُحۡشَرُونَ
٣٦ ﴾ [الانفال: ٣٦]
“আল্লাহর পথ
থেকে লোকদেরকে বাধা দেওয়ার জন্য
কাফিরগণ তাদের ধন-সম্পদ
ব্যয় করে, তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতেই
থাকবে। অতঃপর
তা তাদের পরিতাপের কারণ
হবে, এরপর তারা পরাভূত
হবে এবং যারা কুফুরী
করে তাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে।” [সূরা
আল-আনফাল, আয়াত: ৩৬]
[ খিস্টান বানানোর অপকৌশলসমূহ ]
বহুকাল
থেকে তারা তাদের উদ্দেশ্য
বাস্তবায়নের জন্য আঞ্চলিক ও
আন্তর্জাতিক অনেক সম্মেলন করেছে। এমন
কি বর্তমানেও তাদের মিশনে উক্ত
দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীগণ দূত হিসেবে তাদের
নিকট কৌশলসমূহের কার্যকারিতা, তাদের প্রভাব, তাদের
সফলতা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে
মত-বিনিময় ও প্রস্তাব
নিয়ে একত্রিত হয়। আর
এজন্য তারা সুদূর প্রসারী
পরিকল্পনা ও কর্মসূচী প্রণয়ন
করে সামনে অগ্রসর হচ্ছে।
তাদের অপকৌশলসমূহ নিম্নরূপ:
• মুসলিম
বিশ্বে খ্রিস্টান মিশনারী গোষ্ঠী প্রেরণ এবং
খ্রিস্টবাদের দিকে আহ্বান জানানো:
এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য
তারা নিম্নোক্ত কর্মসূচীসমূহ গ্রহণ করেছে:
- খ্রিস্টান
ধর্মের পরিচিতিমূলক বিভিন্ন বই, বিজ্ঞাপন ও
লিফলেট বিতরণ।
- বিকৃত
ইঞ্জিলের অনুবাদ প্রচার ও
প্রসার।
- ইসলামের
প্রতি সন্দেহ সৃষ্টিকারী ও
আক্রমণাত্মক প্রচারপত্র বিলি করা।
- এবং
বিশ্বের দরবারে ইসলামের বিকৃতিমূলক
নানা দিক তুলে ধরা।
• অতঃপর
তারা কতিপয় মোড়ক আবৃত
ও বক্র-কুটিল পদ্ধতির
আশ্রয় নিয়ে অতিসূক্ষ্ম পন্থায়
লোকদেরকে তাদের ধর্মে দীক্ষিত
করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের
এসব মারাত্মক কিছু পদ্ধতি নিম্নরূপ:
- চিকিৎসা
সেবা ও জনসাধারণকে স্বাস্থ্য
সেবা প্রদান: মুসলিম সমাজে ব্যাপকহারে
রোগ-ব্যাধি বিস্তার সত্ত্বেও
প্রয়োজনীয় মুসলিম ডাক্তারের স্বল্পতা
এমনকি কোনো কোনো স্থানে
না থাকার সুবাদে চিকিৎসার
চাহিদা তাদের এই পদ্ধতি
প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে।
- সাধারণ
শিক্ষার অন্তরালে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার: কোথাও
কোথোও সরাসরি খ্রিস্টান স্কুল,
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার
মাধ্যমে তাদের এই অপতৎপরতা
চলছে। আবার
কোথাও কোথাও বাহ্যিক দৃষ্টিতে
সবার জন্য সাধারণ শিক্ষা
নাম দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে, যার অন্তরালে
রয়েছে তাদেরকে খ্রিস্টান বানানোর গোপণ ষড়যন্ত্রের জাল
বিস্তার করা। আর
তাদের পাতানো উক্ত জালে
বড় অংকের মুসলিম জনগোষ্ঠী
পতিত হয়েছে, বিদেশী ভাষা
বা বিশেষ শিক্ষা গ্রহণের
লোভে ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের
প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করছে।
এর পরিণতিতে দেখা যায় এ
মুসলিম জাতি, তাদের তাজা
মস্তিষ্কসম্পন্ন, যাদের মগজ বর্তমানে
সব ধরনের জ্ঞানার্জনের জন্য
উন্মুক্ত, সে সব কলিজার
টুকরা শিশু কিশোরদেরকে খ্রিস্টানদের
হাতে হাদিয়া হিসেবে প্রদান
করেছে চলেছে!! আর খ্রিস্টানরা যা-ই তাদেরকে প্রদান
করছে এ বাচ্ছারা তা-ই নির্দ্বিধায় গ্রহণ
করছে!!
- তথ্য
ও প্রচার মাধ্যমে খ্রিস্টান
ধর্মপ্রচার: খ্রিস্টান মিশনারীদের খ্রিস্টান বানানোর অন্যতম
কৌশল হচ্ছে, তথ্য ও
প্রচার মাধ্যমের ব্যবহার। মুসলিম
বিশ্বের দিকে তাক করা
রয়েছে তাদের বহু রেডিও
চ্যানেল। তাছাড়া
পরবর্তী কয়েক বছরে তারা
শত শত টিভি চ্যানেলের
মাধ্যমে তুলে ধরছে তাদের
বিকৃত ধর্ম ও তার
প্রোগ্রামসমূহ।
- এছাড়া
সংবাদ পত্র, পত্র-পত্রিকা
এবং তাদের অসংখ্য প্রকাশনা,
প্রচারণাও এই পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত। তাদের
উক্ত দর্শনীয়, শ্রুত ও পঠিতব্য
সম্প্রচার মাধ্যমগুলো খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের চাকাকে
বিভিন্ন ভাবে সামনে এগিয়ে
দিয়েছে, যেমন:
(ক) তারা
ঐসব সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর দ্বারা খ্রিস্টান ধর্মের
তথাকথিত বানানো বৈশিষ্ট্যের প্রচার
করছে। তারা
বিশ্বের সকলের জন্য খ্রিস্টান
ধর্মে দয়া, ভালোবাসা ইত্যাদি
রয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য
প্রচার-প্রসার করে তাদের
ধর্মের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
(খ) মুসলিমদের
আকীদা-বিশ্বাস, তাদের ধর্মীয় নিদর্শন
এবং তাদের পরস্পরের দীনী
সম্পর্কে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি
করার মাধ্যমে তাদের বিকৃত খ্রিস্টান
ধর্মের প্রতি আহ্বান করছে।
(গ) নগ্নতা,
যৌনতা, প্রবৃত্তি উত্তেজক বিবিধ অশ্লীলতা সম্প্রচার
করে দর্শকদের নৈতিক চরিত্র ও
পবিত্রতা বিনষ্ট করা, লজ্জাহীন
বানানো। তাদেরকে
প্রবৃত্তি পূজারী ও ক্ষণস্থায়ী
আনন্দের মোহে নিপতিত করে
ভোগের দাসে পরিণত করা। কেননা
তারা এ ধরনের হয়ে
গেলে তাদের যে কোনো
দাওয়াত বা মিশন তাদের
মাঝে সফল হবে।
এমনকি মুরতাদ-কাফির হওয়ার
ব্যাপারেও তাদের কোনো দ্বিধা
থাকবে না। (আল্লাহ
আমাদের এ পরিস্থিতি থেকে
রক্ষা করুন) তাদের উক্ত
মিশন সফল হওয়ার ভিত্তিতে
মুসলিমের অন্তর থেকে যখন
ঈমানের মূলোৎপাটন হবে এবং আত্মা
থেকে ধর্মীয় চেতনার বাঁধ
ধ্বংস হয়ে যাবে তখন
সহজেই উক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি
হবে।
• উল্লিখিত
খ্রিস্টান তৈরির অপকৌশল ব্যতীত
তাদের আরো বহু অপকৌশল
রয়েছে, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি মাত্রই মুসলিম বিশ্বের
বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে
তা যথার্থভাবে অনুভব করতে পারবেন। আলোচনা
সংক্ষেপ করার জন্য সেগুলো
বাদ রাখা হয়েছে।
কেননা এই অল্প পরিসরে
তাদের সবগুলো অপকৌশল বর্ণনা
উদ্দেশ্য নয়, বরং তাদের
থেকে সতর্ক করাই মূল
উদ্দেশ্য। বস্তুত
তাদের প্রকৃত অবস্থা তো
তা-ই যা মহান
আল্লাহ তাঁর কিতাবে বিধৃত
করেছেন এ বলে যে,
﴿وَيَمۡكُرُونَ وَيَمۡكُرُ
ٱللَّهُۖ وَٱللَّهُ خَيۡرُ ٱلۡمَٰكِرِينَ ٣٠﴾
[الانفال: ٣٠]
“আর তারা
ষড়যন্ত্র করে, আল্লাহও (তাদের
ষড়যন্ত্রের বিপরীতে) কৌশল করেন।
বস্তুতঃ আল্লাহর কৌশল অতি উত্তম।” [সূরা
আল-আনফাল, আয়াত: ৩০]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿يُرِيدُونَ أَن يُطۡفُِٔواْ
نُورَ ٱللَّهِ بِأَفۡوَٰهِهِمۡ وَيَأۡبَى
ٱللَّهُ إِلَّآ أَن يُتِمَّ
نُورَهُۥ وَلَوۡ كَرِهَ ٱلۡكَٰفِرُونَ
٣٢﴾ [التوبة: ٣٢]
“তারা তাদের
মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতি নির্বাপিত করতে
চায়। কাফিরগণ
অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ
তাঁর জ্যোতির পূর্ণতা বিধান করা ব্যতীত
অন্য কিছু চান না।” [সূরা
আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩২]
[খ্রিস্টানদের এ
অপতৎপরতার বিপরীতে মুসলিমদের করণীয়]
খ্রিস্টান মিশনারিদের
এগুলো হলো মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্ট
করার ষড়যন্ত্র ও অপকৌশলের বাস্তব
নমুনা।
কিন্তু তাদের
এই সব অপকৌশলের বিরুদ্ধে
মুসলিমদের করণীয় কী? আর
কীভাবে ইসলাম ও মুসলিমদের
বিরুদ্ধে তাদের এই মারাত্মক
চক্রান্তের মুকাবিলা করা যাবে?
নিশ্চয় এ
দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক
বড় আর তা সকল
মুসলিমের উপর সমভাব আবর্তিত;
এককভাবে হোক কিংবা সংঘবদ্ধভাবে,
রাষ্ট্রীয়ভাবে হোক কিংবা গোষ্ঠীগতভাবে
হোক। তাদের
সবার উপরই এ দায়িত্ব
আপতিত। কেননা
প্রতিটি মুসলিম ছোট-বড়,
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই
তাদের এ বিষাক্ত টার্গেটের
অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহই
আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং
তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।
খ্রিস্টান মিশনারী তৎপরতা প্রতিরোধের উপায়সমূহ:
এ পরিস্থিতিতে
আমাদের যা করণীয় বা
বাস্তবতার ভিত্তিতে যে উপযোগী কৌশল
ও শর‘ঈ পদক্ষেপ
নেওয়া প্রয়োজন, তা নিম্নে সংক্ষেপে
উল্লেখ করা হলো:
(১) সকল
মুসলিম, বিশেষ করে নতুন
প্রজন্মের সন্তানদের অন্তরে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস মৌলিকভাবে গেঁথে দেওয়া।
আর তা করতে হবে
শিক্ষা ব্যবস্থা ও সাধারণ শিক্ষামূলক
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, সকল প্রতিষ্ঠান ও
শিক্ষাগারে সরকারী ও জাতীয়
ভিত্তিতে।
(২) মুসলিম
জাতির সর্বস্তরে দীনের বাস্তব জ্ঞানের
সম্প্রচার এবং হৃদয়ে দীনী
আত্মমর্যাদা, পবিত্রতা ও মর্যাদাবোধ পুরোপুরি
জাগ্রত করা।
(৩) খ্রিস্টান
ধর্ম প্রচারের যাবতীয় উপকরণ: ফিল্ম,
পত্র-পত্রিকা, প্রকাশনা-প্রচারণা ইত্যাদির প্রবেশ পথ চিহ্নিত
করতঃ এগুলোর অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ
করা এবং এর অবাধ্যতায়
দমনমূলক শাস্তিবিধান করা।
(৪) জনসাধারণকে
তাদের পাতানো ফাঁদ থেকে
বাঁচানো ও সাবধান করার
জন্য খ্রিস্টানদের মিশনের ভয়াবহতা, অপকৌশল
ও পন্থাবলী সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত থাকা ও
সচেতনতা সৃষ্টি করা।
(৫) মুসলিমের
জীবনের সকল মৌলিক দিকগুলোর
প্রতি গুরুত্বারোপ করা, বিশেষ করে
স্বাস্থ্যগত দিক ও শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে যত্নবান থাকা, কেননা বাস্তবে
যা ঘটছে তা হলো
খ্রিস্টানরা এ দুটি মারাত্মক
পথেই মানুষের অন্তরে ও মগজে
ঢুকে পড়েছে।
(৬) প্রত্যেক
মুসলিমের উচিৎ, সে পৃথিবীর
যে কোনো প্রান্তে যে
কোনো পরিস্থিতির শিকার হোক না
কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে তার দীন ও
আকীদাকে মজবুতভাবে ধারণ করা এবং
সে ব্যক্তিগত ও তার অধীনস্থদের
জীবনে ইসলামী নিয়ম-নীতি
ও নির্দেশাবলীকে যতদূর সম্ভব সু-প্রতিষ্ঠিত করা, যার ফলে
তার বাড়ীর প্রতিটি সদস্য
যেন ব্যক্তিগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত
ঈমান, আকীদা ও চরিত্র
বিনষ্টকারী সংগ্রামের মুকাবিলায় সুরক্ষিত থাকতে পারে।
(৭) বিশেষ
জরুরি প্রয়োজন, যেমন চিকিৎসা বা
এমন প্রয়োজনীয় শিক্ষা যা মুসলিম
রাষ্ট্রসমূহে অবর্তমান, এমন উদ্দেশ্য ব্যতীত
কোনো ব্যক্তি ও পরিবারের কাফির
রাষ্ট্রে ভ্রমণ করা থেকে
সাবধান থাকা। আর
উক্ত প্রয়োজনে যদি ভ্রমণ করতে
হয় তবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে
পরিচালিত ধর্মীয় ফিতনা
ও সংশয় প্রতিহত করার
প্রস্তুতি সাথে থাকতে হবে।
(৮) মুসলিমদের
মধ্যে সামাজিক সহযোগিতা, সৌহার্দ্য ও সংহতি গড়ে
তুলতে হবে; যার ফলে
মানবাধিকার রক্ষিত হবে এবং
মুসলিমদের যাবতীয় অভাব দূরীকরণে
সমবায়ভিত্তিক জনকল্যাণমুখী দাতব্য প্রকল্প বাস্তবায়ন
করতে হবে, এর ফলে
তাদের অভাব ও দারিদ্র
বিমোচনের নামে খ্রিস্টানদের কালো
থাবা তাদের ওপর প্রসারিত
হবে না।
পরিশেষে আল্লাহর
দরবারে তাঁর সুন্দর-সুন্দর
নাম ও উচ্চ গুণাবলীর
উসীলায় প্রার্থনা করি, তিনি যেন
মুসলিমদের বিক্ষিপ্ততাকে একত্রিত করে দেন, তাদের
পরস্পরের আন্তরিকতাকে সুদৃঢ় করেন, তাদেরকে
সংশোধন করেন এবং প্রশান্তির
পথে তাদেরকে পরিচালিত করেন, পক্ষান্তরে শত্রুদের
ষড়যন্ত্র থেকে তাদেরকে রক্ষা
করেন, তাদের অনিষ্ট থেকে
আশ্রয় প্রদান করেন, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতা ও
ফিতনা থেকে তাদেরকে রক্ষা
করেন। নিশ্চয়
তিনি অতিশয় দয়াবান।
হে আল্লাহ!
যে কেউ ইসলাম ও
মুসলিমদের অনিষ্ট সাধনের ইচ্ছা
পোষণ করে তাকে তার
নিজের ব্যাপারে ব্যস্ত রাখো, তার
ষড়যন্ত্র তার ঘাড়ে ফিরিয়ে
দাও এবং তার সকল
অনিষ্ট পোষণের গন্ডি তার
নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখ,
নিশ্চয় তুমি সব কিছুর
ওপর ক্ষমতাবান।
سبحان ربك رب العزة
عما يصفون، وسلام على
المرسلين ، والحمد لله
رب العالمين
ইয়াহূদী, খ্রিস্টান
ও অন্যান্য সকল কাফির অপশক্তি
শত্রুতাবশতঃ জোটবদ্ধ হয়েছে মুসলিমদেরকে ধর্মচ্যুত
ও নিজ ধর্মের প্রতি
সন্দিহান করার উদ্দেশ্যে।
তাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের এ অপতৎপরতা
থেকে সতর্ক করার জন্যই
এ লেখাটি একটি শুভ
পদক্ষেপ।
ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি
অনুবাদ: মুহাম্মাদ আব্দুর রবব আফ্ফান, সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
0 comments:
Post a Comment