Sunday, January 19, 2014

তাবলিগের ৬ নম্বর কিএবং কেন ?

তাবলিগের  ৬ নম্বর কি ?

৬টি বিষয়ের উপর মেহনত করে সে অনুযায়ী আমল করতে পারলে দ্বীনের পথে চলা সহজ হয়। বিষয় ৬টি হল:
  1. কালেমা
  2. নামায
  3. এলেম ও যিকির
  4. একরামুল মুসলিমীন
  5. তাসায়ি/সহিহ নিয়ত
  6. দাওয়াত ও তাবলিগ

১. কালেমা

لَآ اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِؕ
(লা– ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ।)
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) তাঁর প্রেরিত রাসুল।
এই কালেমার হাকীকত অর্থ হল, আমরা দু’চোখে যা কিছু দেখি বা না দেখি, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সবই হল আল্লাহ্‌র সৃষ্টি মাখলুক। মাখলুক কিছুই করতে পারে না আল্লাহ্‌র হুকুম ছাড়া, আর আল্লাহ্‌ সব করতে পারেন মাখলুকের সাহায্য ছাড়া। এই বিশ্বাস দিলের মাঝে পয়দা করার নামই ঈমান।
যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার এই কালেমা পাঠ করবে, কাল কেয়ামতের দিন আল্লাহ্‌পাক তাকে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল করে উঠাবেন।
যে ব্যক্তি একিন ও এখলাসের সাথে এই কালেমা পাঠ করবে, আল্লাহ্‌পাক তার বিগত দিনের সকল গুনাহ্‌ মাফ করে দিবেন এবং গুনাহ্‌গুলো নেকীর দ্বারা বদলাইয়া দিবেন।
যে ব্যক্তির প্রথম কথা হবে ‘লা– ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌’, এবং শেষ কথা হবে ‘লা– ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌’, সে ব্যক্তি হাজার বছর দুনিয়াতে বেঁচে থাকলেও তার কোন হিসাব নেয়া হবে না।
আমরা বেশি বেশি এই কালেমা পাঠ করব এবং অপর ভাইকে এর হাকীকত জানাইয়া দাওয়াত দিব এবং দুয়া করব, “হে আল্লাহ্‌! এই কালেমার হাকীকত আমার মধ্যে, আমার পরিবারের মধ্যে এবং সারা উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে দান করুন।”

২. নামায

হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) যেভাবে নাময পড়েছেন এবং সাহবীদের যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে নামায পড়ার যোগ্যত অর্জনের চেষ্টা করা।
আল্লাহ্‌ তায়ালা কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথমে নামাযের হিসাব নিবেন।
ওযু নামাযের চাবি, আর নামায বেহেশ্তের চাবি।
যে ব্যক্তি একিন ও এখলাসের সাথে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায় করে, আল্লাহ্‌ তাকে ৫টি পুরস্কার দান করবেন।
  1. রিযিকের পেরেশানী দূর করে দিবেন
  2. কবরের আযাব মাফ করে দিবেন
  3. ডানহাতে আমলনামা দিবেন
  4. পুলসিরাত বিজলির মত পার করাবেন এবং
  5. বিনা হিসাবে জান্নাত দিবেন
৫ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্‌।
আমরা ফরয নামাযগুলো জামাতে আদায় করব, ওয়াজাব ও সুন্নতের পাবন্দি করব, বেশি বেশি নফল নামায পড়ব, আর উমরী ক্বাজাগুলো খুঁজে খুঁজে আদায় করব এবং নামাযের লাভ জানিয়ে অপর ভাইকে দাওয়াত দিব।

৩. এলেম ও যিকির

এলেম:

আল্লাহ্‌র কখন কী আদেশ-নিষেধ তা জেনে আমল করার নাম হল এলেম।
যে ব্যক্তি এলেম অর্জনের জন্য ঘর থেকে বের হয়, গর্তের পিপড়া থেকে সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তার জন্য মাগফেরাতের দুয়া করতে থাকে।
এলেম হাসিলের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি যে পথ দিয়ে হেটে যায়, ফেরেশতারা সে পথে নূরের পর (পাখা) বিছিয়ে দেয়।
এলেম কয়েকভাবে শিখা যায়।
ফাযায়েল এলেম: তালিমের হালকায় বসে।
মাসায়েল এলেম: হক্কানী আলেম-উলামাদের কাছ থেকে।
তরবিয়তি এলেম: সাহাবীদের জীবনী (হায়াতুস সাহাবাহ্‌) থেকে।
আমরা বেশি বেশি এলেম অর্জনের চেষ্টা করব এবং এর লাভ জানিয়ে অপর ভাইকে দাওয়াত দিব।

যিকির:

সর্বাবস্থায় আল্লাহ্‌র ধ্যান-খেয়াল দিলের মাঝে পয়দা করা।
যে ব্যক্তি যিকিরের দ্বরা জিহ্বাকে তরুতাজা রাখবে, কাল-কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
যিকিরকারী দিল জিন্দি, আর যিকিরবিহীন দিল মুর্দা।
যিকির হল আত্মার খোরাক।
সর্বোত্তম যিকির ‘লা– ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌’, আফজাল (أفضل) যিকির হল কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা।
আমরা বেশি বেশি যিকির করব এবং এর লাভ জানিয়ে অপর ভাইকে দাওয়াত দিব।

৪. একরামুল মুসলিমীন

আপর মুসলমান ভাইয়ের কিম্মত (গুরুত্ব) বুঝে কদর করা।
যে ব্যক্তি অপর মুসলমান ভাইয়ের একটি হাজত পুরা করার নিয়ত করে, আল্লাহ্‌পাক তাকে ১০ বছর নফল এতেকাফ করার সওয়াব দিবেন।
আর যে ব্যক্তি অপর মুসলমান ভাইয়ের একটি হাজত পুরা করে, আল্লাহ্‌পাক তার ৭৩টি হাজত পুরা করবেন, যার ১টিই দুনিয়ার সব প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট।
যে ব্যক্তি আগে সালাম দিল, সে অহংকার মুক্ত থাকল।
আমরা বড়দের সম্মান করব, ছোটদের স্নেহ করব, আলেমদের তাজিম করব।

৫. তাসায়ি/সহিহ্‌ নিয়ত

আমরা যা করব সব আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্যই করব।
নিয়ত সহিহ্‌ হলে কোন ব্যক্তি খোরমা পরিমাণ দান করলেও আল্লাহ্‌পাক তাকে বাড়িয়ে ওহোদ পাহাড়ের চাইতেও উত্তম বদলা দান করবেন।
নিয়ত সহিহ্‌ না হলে, ওহোদ পাহাড় পরিমাণ দান করলেও আল্লহ্‌পাক খুরমা পরিমাণ সওয়াবও তার আমলনামায় দিবেন না।
কোন কাজ করার সময় কমপক্ষে তিনবার নিয়তকে যাচাই করে নিতে হবে। ১. কাজের শুরুতে, ২. কাজের মাঝে এবং ৩. কাজের শেষে। নিয়তে কোনরকম গরমিল লক্ষ্য করা গেলে সাথে সাথে তা ঠিক করে নিতে হবে।

৬. দাওয়াত ও তাবলিগ

আল্লাহ্‌র দেয়া জান, আল্লাহ্‌র দেয়া মাল, আল্লাহ্‌র দেয়া সময় হাতে নিয়ে, জান, মাল, সময়ের সঠিক/সহিহ্‌ ব্যবহার শিক্ষা করাই হল দাওয়াত ও তাবলিগ।
আল্লাহ্‌কে রাজীখুশি করার জন্য যে আল্লাহ্‌র রাস্তায় বের হয়, আল্লাহ্‌ তার জান্নাতের পথকে সহজ করে দেন।
আল্লাহ্‌র রাস্তায় বের হয়ে একটা ভাল কাজ করলে, আল্লহ্‌পাক তাকে ৪৯ (ঊনপঞ্চাশ) কোটিগুণ বাড়িয়ে তার আমলনামায় দান করবেন।
আল্লাহ্‌র রাস্তায় বের হয়ে কেউ নিজ প্রয়োজনে ১ টাকা খরচ করলে, আল্লাহ্‌পাক তাকে ৭ (সাত) লক্ষ টাকা সদকা করার চেয়েও উত্তম বদলা দান করবেন।
জীবনের শুরুতে তিন চিল্লা বা চারমাস সময় লাগিয়ে জান, মাল, সময়ের সহিহ্‌ ব্যবহার শিক্ষা করা এবং মৃত্যু পর্যন্ত এর সাথে লেগে থাকা।
সূত্র -  ইন্টারনেট

0 comments:

Post a Comment