Sunday, January 19, 2014

সারা বিশ্বে দ্বীন প্রচারের বিস্তৃত একটি উদ্যান বিশ্ব ইজতেমা

দ্বীন প্রচারের বিস্তৃত একটি উদ্যান বিশ্ব ইজতেমা


বিশ্বে দ্বীন প্রচারের বিস্তৃত একটি উদ্যান বিশ্ব ইজতেমা
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব। করুণাময় আল্লাহ তায়ালার সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে অনুপম গঠন,দামী মস্তিষ্ক ও বিবেকএখতিয়ার দিয়ে সুন্দর এ পৃথিবীতে  তাঁর প্রতিনিধি তথা খলিফার পদে সমাসিন করেছেন। রাব্বুল আলামীন মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। দুনিয়াতে যত নবী-রাসূল আগমন করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই আল্লাহর দেয়া দ্বীনি দায়িত্ব সঠিকভাবে আদায় করে পার্থিব জগত থেকে বিদায় নিয়েছেন। তারা মানবজাতিকে দাওয়াত-তাবলীগতাওহীদ-রিসালাতঈমান-ইহসানসহ সফলতার খাঁটি রাস্তা তথা সীরাতে মুসতাকীম দেখিয়েছেন
নবী-রাসূলগণের অনুপস্থিতিতে এ দ্বীনি দায়িত্ব তথা দাওয়াত তাবলীগ এর যিম্মাদারী অর্পিত হয়েছে উম্মতে মুহাম্মদির উপর। এ দ্বীনি যিম্মাদারী আঞ্জাম দেওয়ার উদ্দেশ্যই আজ থেকে প্রায় ৪৭ বছর আগে ভারতের দেওবন্দে প্রসিদ্ব আলেম মাওলানা ইলিয়াস (রাহ.) মুবাল্লিগে ইসলাম হয়ে মেওয়াত অঞ্চলে দাওয়াত ও তাবলীগ এর কাজ শুরু করেন

 
তিনি যখন দাওয়াতী কার্যক্রম শুরু করেনতৎকালীন সময় ছিল অত্যন্ত নাজুক। সেই সময় ভারতের রাজধানী দিল্লির মেওয়াত এলাকায় শিরকবিদআতকুসংস্কার-কুপ্রথা এবং পাপাচার এর প্রতিযোগিতা চলছিল। সেখানকার মানুষ মদ,জুয়া চুরিডাকাতিখুন-খারাপীজুলুম-নিযাতন সহ সকল পাপ কাজের সাথে জড়িত ছিল। (১২৮৬-৮৯ খ্রীস্টাব্দ),সম্রাট গিয়াস উদ্দিন বাবর রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকারি আইন-কানুনজেল-জুলুম প্রয়োগ করেও বন্ধ করতে পারেননি এই সমস্ত কার্যকলাপ
মেওয়াত এলাকা ছিল গুন্ডা-মাস্তানদের কেন্দ্রবিন্দু। তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠছিল। আর এই এলাকাতেই বসবাস করতেন মাওলানা ইলিয়াস আলী (রাহ.)। তিনি তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা দেখে পেরেশান হয়ে উঠলেন এবং তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদেরকে আখেরাতের ভয়ঈমানজান্নাতজাহান্নাম ইত্যাদির কথা বলতে লাগলেন। ইলিয়াস (রাহ.) রাত্রের বেলা তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর দরবারে ঐ সমস্ত সন্ত্রাসীদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করতে লাগলেন এবং তাদেরকে বুঝিয়ে তাবলীগ জামাতে নিয়ে গেলেন
তিনি যখন তাবলীগের কাজ শুরু করেনতখন হাতে গোনা ক’জন মুসলমান তার ডাকে সাড়া দিল। ইলিয়াস (রাহ.) নিজের পকেটের টাকা খরচ করে মানুষকে দ্বীন বুঝানোর জন্য তাবলীগে পাঠাতেন। যারা তাবলীগ জামাতে গিয়েছিল,তাদের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। মেওয়াত অঞ্চলের অনেক সন্ত্রাসীরা তাবলীগে গিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছেড়ে দিয়ে তারা ও দ্বীনের দায়ী হয়ে গেল। এলাকার মধ্যে শান্তি নেমে আসল এবং দলে দলে মানুষ তাবলীগ জামাতে শরীক হতে লাগল
মেওয়াত এলাকাসহ এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ তাবলীগ জামাতের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলআলহামদুলিল্লাহ সময়ের ব্যবধানে দাওয়াত ও তাবলীগ আজ সারা বিশ্বের আনাচে-কানাছে সকল মানুষের কাছে পৌঁছেছে। বিশ্ব ইজতেমা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রায় ২০০টি দেশের অর্ধকোটি মানুষ বিশ্ব ইজতেমাতে অংশ গ্রহন করে। ইজতেমার এই বিশাল ব্যাবস্থাপনা করতে কারো কাছে টাকা-পয়সা চাইতে হয় না। মানুষ নিঃস্বার্থভাবে লিল্লাহিয়্যাতের মন-মানসিকতা নিয়ে এই ইজতেমার কাজে শ্রম দেয়
গতবারের ন্যায় এবারও ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে
দেশ-বিদেশের বিপুল মানুষের উপস্থিতি ইজতেমার মাঠ স্থান সংকুলান হয় না। মুসল্লিদের সুবিধার্তে কাকরাইলের মুরুব্বিরা এবারও দুই পর্বে ইজতেমা করার পরামর্শ নিয়েছেন। ইজতেমায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সর্বস্তরের লোকেরা শরীক হন
কারণইজতেমা হচ্ছে বিশ্ব-শান্তির একটি বিস্তৃত উদ্যান। এ উদ্যান থেকে মানুষ দ্বীন শিখতে পারেবিশুদ্ধ ইলম,কালিমানামাজমাসআলা-মাসাইল ইত্যাদি শিখতে পারে। কারণতাবলীগ জামাত হচ্ছে দ্বীন শিক্ষার অন্যতম একটি বলিষ্ঠ কেন্দ্র। এই জামাতে ধনীগরীবসাদা-কালোসবাই সমান। এক প্লেটে বসে সবাই খানা খায়। একে অপরের কাছ থেকে দ্বীন শিখে। ইজতেমায় এত মানুষের সমাগম কিন্তু নেই কোন প্রচারমাইকিংপোস্টারলিফলেট তার  পরেও এত মানুষ
সবাই ঈমানী দায়িত্ব মনে করে একে অন্যকে দাওয়াত দিয়ে দ্বীনি যিম্মা আদায় করে। তবে স্বেচ্ছায় কিছু প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া নিউজ সংগ্রহ করে সংবাদ ছাপেন। কিছু সংখ্যক মানুষ তাবলীগ ও ইজতেমার বিরোধিতা করেতাদেরকে অনুরোধ করব বিরোধিতা নয় আপনি নিজে গিয়ে সেখানে অংশগ্রহণ করুন। আশাকরি আপনার ভুল ভাঙ্গবে এবং আপনিও সঠিক দ্বীন বুঝতে পারবেন
একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যেযারা তাবলীগ জামাতে গিয়েছেতারা হিদায়াত নিয়েই ঘরে ফিরছেন। তাবলীগ জামাতের মেহনতের ফলে অগণিত মানুষ আলোর পথ তথা হিদায়াতের পথে এসেছেন। শুধু মেওয়াত আর ভারতই নয়ন বরং পাকিস্তানযুক্তরাজ্যযুক্তরাষ্টবৃটেনইংল্যান্ড ও আরব বিশ্বসহ দেশের প্রতন্ত অঞ্চল থেকে ল ল মানুষ টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় শরিক হন। তাবলীগের মেহনতে ইউরোপস্পেনআমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন মসজিদ ও দ্বীনের মারকাজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এর দ্বারা বিশ্বব্যাপী দ্বীনের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ছেতাবলীগের দাওয়াত পেয়ে অসংখ্য বেদ্বীন অন্ধকার পথ থেকে ফিরে কালিমা পড়ে হিদায়াত তথা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসতে লাগলেন। তাবলীগের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছেসারা বিশ্বের পথভুলা মানুষদেরকে সঠিক পথ তথা জান্নাতের পথ দেখানো
তাবলীগ জামাতে নেই কোন পদের মোহনেই কোন স্বার্থ। নিজ টাকা খরচ করে মানুষ দ্বীন শিক্ষার জন্য তাবলীগ জামাতের ৩ দিনএক চিল্লাতিন চিল্লাএক সাল লাগায়। এই তাবলীগি কার্যক্রমের একটি অংশ হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। বাংলাদেশের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে খোলা মাঠ (১৭০ একর) এলাকা জুড়ে নির্মান হয় ইজতেমার বিশাল পেন্ডাল। তাবলীগ হচ্ছে দ্বীন শিক্ষার একটি বলিষ্ট একটি দুর্গ। তাবলীগের পরশে অনেক বেনামাযি নামাযি হয়সন্ত্রাস-মাস্তানরা আল্লাহর ওলী হয়যারা এত দিন দাড়ি রাখতো নাতারা দাড়ি রাখেনদিকভ্রান্ত মানুষ সীরাতে মুসতাক্বিমের সন্ধান পায়
১৯৪৬ সালে ঢাকার কাকরাইল জামে মসজিদে শুরু হয় তাবলীগ জামাতের প্রথম ইজতেমা। পরবর্তীতে মসজীদে মানুষের স্থান দিতে না পারায় ১৯৬৭ সাল থেকে টংঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে হয়ে আসছে বিশ্ব ইজতেমা। আর সে বছর বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে মুসল্লিরা অংশ গ্রহণ করেন বিধায় তখন থেকেই বিশ্ব ইজতেমার নামকরণ হয়দেশের বিভিন্ন স্কুলকলেজ কওমীআলিয়া মাদরাসার ছাত্র শিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষেরা সেচ্ছা শ্রমে ইজতেমার বিশাল প্যান্ডেলের কাজে শরিক হন
আল্লাহর সন্তোষ হাসিলের আশায় এই মহতী কাজে বিভিন্ন ধরনের মালামাল বিনা টাকায় সরবরাহ করছে নানা শ্রেণীর মানুষ। আল্লাহর নেক বান্দাদের স্বতঃস্ফূর্ত জান মালের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে তৈরী হয় বিশাল ইজতেমাইজতেমা থেকে অনেক মানুষ দ্বীনের দাওয়াতের জন্য একচিল্লাতিনচিল্লাএকসালজীবনসাল  লাগানোর জন্য বিভিন্ন দেশে সফর করেন। দ্বীন প্রচারের বিস্তৃত  উদ্যান বিশ্ব ইজতেমার থেকে সারা বিশ্বের মানুষ সঠিক হিদায়াত লাভ করুক এবারের ইজতেমায় এই প্রত্যাশা
এহসান বিন মুজাহির,    খক: প্রাবন্ধিকতরুণ আলেম
সূত্র -  মাসিক মুমিনুল ইসলাম।

0 comments:

Post a Comment