মিলাদুন্নাবি ও বড়দিন — মুফতি তাকি উসমানি
কুসংস্কার থেকে আলোর পথে
ইসলামের
ইতিহাসে
অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ মাস রাবি’উল-আওয়াল।
কারণ,
মানবজাতির প্রতি আশীর্বাদস্বরূপ এ মাসেই জন্ম
নিয়েছিলেন প্রিয় নাবি
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম)।
তাঁর
জন্মের
আগে
শুধু
আরব
উপদ্বীপের বাসিন্দারাই নয়,
রোম
ও
পারস্যের
তৎকালীন
কথিত
সভ্য
জাতিগুলোও নিমজ্জিত ছিল
অজ্ঞতা,
কুসংস্কার, অত্যাচার ও
বিশৃঙ্খলার অন্ধকারে। তাওহীদ
বা
আল্লাহর
একত্বের
শাশ্বত
বাণী
নিয়ে
এ
মাসেই
আগমনে
করেন
প্রিয়
নাবি
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম)।
তাওহীদ
এমন
এক
বিশ্বাস
যেটা
জ্ঞানের
সত্যিকার
ধারণা
দেয়,
গড়ে
দেয়
পারস্পরিক সাম্য ও
শান্তির
মজবুত
ভিত।
এটাই
সেই
বিশ্বাস
যা
মানবজাতিকে অজ্ঞতা ও
কুসংস্কার থেকে আলোতে
নিয়ে
আসে।
সত্যজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে
দেয়
সারা
পৃথিবীতে।
ইসলামি উদ্যাপন
উপরোক্ত
কারণে
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
জন্ম
মানব
ইতিহাসে
এক
গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষ্যণীয় দিক।
ইসলামে
যদি
জন্মদিন
ও
বার্ষিকী
উদ্যাপনের
কোনো
রীতি
থাকত,
তাহলে
নিঃসন্দেহে অন্য যেকারও
জন্মদিনের চাইতে নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
জন্মদিন
উদ্যাপন
বেশি
উপযুক্ত
হতো।
কিন্তু
এটা
ইসলামি
শিক্ষার
বিপরীত।
আর
তাই,
ইহুদিবাদ,
খ্রিষ্টবাদ ও হিন্দুত্ববাদের তুলনায়
ইসলামে
উৎসবের
সংখ্যা
অনেক
কম।
ইসলাামি
উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম
‘ঈদুল-ফিত্র
ও
‘ঈদুল-আদহা।
তবে
এগুলোর
দিনক্ষণও
এমন
কোনো
দিনে
নয়
যে,
সেদিন
ইসলামের
ইতিহাসের
বিশিষ্ট
কোনো
ব্যক্তি
জন্ম
নিয়েছিলেন অথবা এদিনে
নির্দিষ্ট কোনো ঐতিহাসিক
ঘটনা
ঘটেছিল।
প্রতিবছর
আনন্দের
এই
দিনগুলোতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা
আদায়ের
জন্য
এই
উৎসবগুলোর নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে।
আপনারা
জানেন,
এর
প্রথমটি
হচ্ছে
দীর্ঘ
একমাস
রামাদানের সিয়াম পালনের
পর।
আরেকটি
হচ্ছে
হাজ্জ
সম্পূর্ণ
করার
পর।
কীভাবে
‘ঈদের
দিনগুলো
উদ্যাপন
করতে
হবে
সেটাও
অমুসলিমদের উৎসব পালনের
রীতি
থেকে
ভিন্ন।
এদিনে
কোনো
আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রা করা
হয়
না,
আলোকসজ্জা করা হয়
না,
কিংবা
এমন
কোনো
কাজ
করা
হয়
না,
যা
আনুষ্ঠানিকভাবে আনন্দের বহিপ্রকাশ ঘটায়। এগুলোর
পরিবর্তে
সমবেতভাবে (জামা‘আত)
সালাত
আদায়
করা
হয়।
অনানুষ্ঠানিকভাবে একে অন্যের
বাসায়
বেরাতে
যাওয়া
হয়।
কেবল
প্রতীকি
আনন্দের
বদলে
এগুলোই
সত্যিকার
আনন্দের
পরিচায়ক।
কোনো জন্মদিন নেই
কোনো
ব্যক্তি
যত
মহৎ
কিংবা
গুরুত্বপূর্ণই হোক না-কেন,
ইসলামে
সেজন্য
কোনো
জন্মদিন
উদ্যাপন
বা
উৎসব
আয়োজনের
নির্দেশ
দেয়নি।
যেকোনো
মানুষের
চেয়ে
আল্লাাহর
নাবিরা
মর্যাদায়
সবচেয়ে
উঁচু।
কিন্তু
তারপরও
নাবি
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
নিজে
যেমন
কোনো
জন্মদিন
উদ্যাপন
করেননি,
তাঁর
সঙ্গীরাও
(সাহাবি)
কোনো
জন্মদিন
বা
বার্ষিকী
পালন
করেননি।
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
জন্মদিন
গোটা
মানবজাতির জন্য নিঃসন্দেহে এক আনন্দের
দিন।
কিন্তু
তিনি
নিজে
তো
তা
পালন
করেনইনি,
তাঁর
সঙ্গীরাও
না।
প্রিয়
নবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
মৃত্যুর
পর
তাঁর
সঙ্গীরা
প্রায়
এক
শ
বছরের
মতো
জীবিত
ছিলেন।
নাবির
প্রতি
অতুলনীয়
ও
অগাধ
ভালোবাসা
থাকার
পরও
তাঁরা
কিন্তু
কখনোই
নাবির
জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেননি।
বরং
তাঁরা
তাঁদের
জীবনকে
নিবেদিত
করেছিলেন
ইসলাামের
শিক্ষা
তুলে
ধরের
জন্য,
নাবির
শিক্ষা
বাস্তবে
রূপ
দেওয়ার
জন্য,
গোটা
দুনিয়ায়
তাঁর
বার্তা
ছড়িয়ে
দেওয়ার
জন্য
এবং
জীবনের
প্রতিটি
ক্ষেত্রে
ইসলাামিক
অনুশাসন
প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
বড়দিনের উৎপত্তি
ঐশী
উৎস
থেকে
প্রত্যাদিষ্ট বলে দাবি
করা
কোনো
ধর্মেই
বিশিষ্ট
বা
সম্মানিত
কোনো
ব্যক্তির
জন্মোৎসব
পালনের
নির্দেশ
নেই।
এটা
মূলত
প্যাগান
বা
দেব-দেবীতে
বিশ্বাসী
গোষ্ঠীর
মধ্যে
প্রচলিত
রীতি।
বড়দিন
বা
যিশুখ্রিষ্টের জন্মোৎসব পালনের
কথা
বাইবেল
বা
কিংবা
আদি
খ্রিষ্টীয় লেখালেখির কোথাও
পাওয়া
যায়
না।
খ্রিষ্টধর্মে বড়দিন নিয়মিতভাবে উদ্যাপন
হওয়া
শুরু
হয়
যিশুখ্রিষ্টের ঊর্ধ্বারোহনের চার
শ
বছর
পরে।
“গসপেল
কিংবা
নির্ভরযোগ্য কোনো বর্ণনা
থেকে
যিশুর
জন্মের
নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ
করা
অসম্ভব।
খ্রিষ্টীয় প্রথম তিন
শতকে
জন্মোৎসব
পালনের
প্যাগান
রীতির
ব্যাপারে
গির্জাগুলোর মধ্যে যথেষ্ট
বিরোধিতা
ছিল।
তবে
কোনো
কোনো
উৎস
থেকে
এই
ইঙ্গিত
পাওয়া
যায়
যে,
এপিফেনির
উৎসবে
ধর্মীয়ভাবে যিশুর জন্মোৎসব
পালন
করা
হতো।
আলেক্সান্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ত উল্লেখ
করেছেন
যে,
২০০
সালের
দিকে
মিশরে
জন্মোৎসবের অস্তিত্ব পাওয়া
যায়।
আমরা
প্রমাণ
পাই
যে,
বিভিন্ন
অঞ্চলে
এটা
বিভিন্ন
তারিখে
পালিত
হতো।
কনসটেন্টাইন বিজয়ের পর
রোমের
গির্জা
২৫শে
ডিসেম্বরকে যিশুর জন্মোৎসব
পালনের
জন্য
নির্ধারণ
করে।
এটা
সম্ভবত
৩২০
কিংবা
৩৫৩
সালের
দিকে।
চতুর্থ
শতকের
শেষের
দিকে
গোটা
খ্রিষ্টীয় বিশ্ব সেই
দিনকে
বড়দিন
হিসেবে
পালন
শরু
করে।
তবে
পূর্বদিকের গির্জাগুলো ছিল
এর
ব্যতিক্রম। তারা ৬ই
জানুয়ারিতে তা পালন
করত।
২৫শে
ডিসেম্বরকে বাছাই করার
পেছেন
সম্ভবত
এটা
কাজ
করে
থাকবে
যে,
এই
দিন
রোমানরা
সূর্যদেবতার উদ্দেশ্যে মিথারিক
উৎসব
পালন
করত।
তাছাড়া
সাতুরনালিয়াও এই সময়ে
এসেছিল।”[১]
ব্রিটানিকা
এনসাইক্লোপিডিয়াতে বড়দিনের উৎপত্তি
সম্পর্কে
অনুরূপ
বর্ণনা
পাওয়া
যাবে,
তবে
সেটা
আরেকটু
বিস্তারিত:
“গির্জার
আদি
উৎসবগুলোর মধ্যে বড়দিন
উদ্যাপনের
কোনো
নজির
ছিল
না।
পঞ্চম
শতকের
আগে
এ
নিয়ে
তাদের
মধ্যে
কোনো
মতৈক্যও
ছিল
না
যে
এটা
কবে
উদ্যাপিত
হবে:
জানুয়ারির ৬, মার্চের ২৫
নাকি
ডিসেম্বেরর ২৫ তারিখ।
২৫শে
ডিসেম্বরে যিশুর জন্মোৎসব
পালনের
সবচেয়ে
আদি
নথি
পাওয়া
যায়
অ্যান্টিয়োকের ফিলোসের একটি
রচনাংশে।
যদিও
এটা
অজ্ঞাত
এবং
সম্ভবত
জাল।
এটা
সংরক্ষিত
আছে
লাতিন
ভাষায়
ম্যাগডিবার্গ সেনচুরিয়েটর (Magdeburyg
centuriator) দ্বারা (i, 3, 118)।
গলের
(Gaul) মতে
যেহেতু
তারা
২৫শে
ডিসেম্বরে প্রভুর জন্মদিন
পালন
করত,
সেহেতু
তারা
মার্চের
২৫
তারিখে
পুনরুত্থান পালনে বাধ্য
হয়েছিল।
ড্যানিয়েল ৪, ২৩ এর
‘হিপ্পেলেটস’ (Hippelates) ব্যাখ্যায়
বলা
হয়েছে
যে,
অগাস্তাসের ৪২তম বছরের
২৫শে
ডিসেম্বর
বুধবারে
বেথেলহেমে যিশু জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু
তিনি
কোনো
জন্মোৎসবের কথা উল্লেখ
করেননি।
আর
এ
ধরনের
উৎসব
তৎকালীন
বিশ্বাসের সঙ্গে ছিল
সাংঘর্ষিক। ২৪৫ সালের
দিকে
(হেম.
৮,
লেভিকটাস)
অরিজিন
(Origin) যিশুর জন্মদিন পালনের
ধারণাকে
প্রত্যাখ্যান করেন।” [২]
উপরের
দুটো
উদ্ধৃতি
থেকে
নিচের
পয়েন্টগুলো নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত
হয়:
১.
জন্মোৎসব
পালন
মূলত
একটি
পৌত্তলিক
রীতি।
কোনো
ধর্মগ্রন্থ বা নাবিদের
শিক্ষায়
এর
অস্তিত্ব
নেই।
২.
নাবি
‘ঈসার
(তাঁর
উপর
শান্তি
বর্ষিত
হোক)
নির্ভুল
জন্ম
তারিখ
জানা
নেই।
এবং
তা
নিশ্চিত
করাও
অসম্ভব।
৩.
খ্রিষ্টীয় ইতিহাসের প্রাথমিক
বছরগুলোতে যিশুর জন্মোৎসব
পালনের
কোনো
নজির
ছিল
না।
৪.
৪র্থ
কিংবা
৫ম
শতাব্দিতে ধর্মীয় উৎসব
হিসেবে
এর
পালন
শুরু
হয়।
আর
সেটাও
হয়েছিল
সূর্যদেবতা পূজারী পৌত্তলিকদের প্রভাবে।
৫.
অরিজিনের
মতো
প্রাথমিক
যুগের
খ্রিষ্টান পণ্ডিতগণ জন্মোৎসব
পালনের
বিরোধী
ছিলেন,
কারণ
এর
ভিত্তি
ছিল
মূর্তিপূজারীদের রীতি।
ইসলামিক উৎসে বার্ষিকী পালন
আদি
ইসলাামি
উৎসগুলোতে জন্মদিন বা
মৃত্যুবার্ষিকী উদ্যাপনের
কোনো
নির্দেশনা নেই। প্রিয়
নাবির
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
জীবদ্দশায় অনেক সাহাবির
মৃত্যু
হয়েছে।
মাক্কায়
মৃত্যুবরণ করেন তাঁর
প্রিয়
স্ত্রী
খাদিজাহ
(রাদিয়াল্লাহু আনহা)।
উহুদের
যুদ্ধে
নির্মমভাবে হত্যা করা
হয়
তাঁর
প্রিয়
চাচা
হামযাকে
(রাদিয়াল্লাহু আনহু)।
তারপরও
তিনি
কখনো
তাদের
জন্ম
বা
মৃত্যু
বার্ষিকী
পালন
করেননি।
রাবি‘উল-আওয়াল
মাসে
তাঁর
নিজের
জন্মদিন
পালনের
জন্যও
তিনি
তাঁর
সঙ্গীদের
কোনো
আদেশ
দেননি।
এসব
উদ্যাপনে
সমস্যা
কোথায়
এ
ধরনের
উৎসব
পালনের
ফলে
ইসলাামের
প্রকৃত
শিক্ষা
থেকে
মানুষের
মনযোগ
বিচ্যুত
হয়ে
যায়।
এগুলো
রূপ
নেয়
কেবল
আনুষ্ঠানিক কিছু কর্মকাণ্ডে। প্রাথমিকভাবে এসব
উদ্যাপন
হয়তো
সর্বোচ্চ
ধার্মিকতা এবং ধার্মিক
ব্যক্তির
প্রতি
শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আন্তরিক উদ্দেশ্য
থেকে
শুরু
হয়;
কিন্তু
শেষমেশ
এগুলোর
মধ্যে
আমোদফূর্তি অনুপ্রবেশ করে।
সেক্যুলার উৎসবের রীতি
এবং
বেশিরভাগ
ক্ষেত্রে
বিভিন্ন
সেক্যুলার পাপপূর্ণ কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে
এসব
উদ্যাপনে
আশ্রয়
গুঁজে
নেয়।
বড়দিনের রূপান্তর
“বড়দিনের
উদাহরণ
এক্ষেত্রে বেশ প্রাসঙ্গিক। খ্রিষ্টীয় এই
উৎসব
প্রথমে
যিশুখ্রিষ্টের জন্মোৎসব পালনের
জন্য
এবং
অবশ্যই
তাঁর
শিক্ষাগুলো স্মরণের জন্য
উদ্ভাবিত
হয়েছিল।
কিন্তু
একবার
যখন
এটা
উৎসব
হিসেবে
স্বীকৃতি
লাভ
করে,
প্রকাশ্য
উৎসব
পালনের
সব
সেক্যুলার রীতি এতে
অনুপ্রবেশ করে।
“বেশ
কবছর
ধরে
বড়দিন
শুধু
গির্জায়
বার্ষিকভাবে পালিত হতো।
কিন্তু
খ্রিষ্টধর্ম যখন পৌত্তলিক
ভূমিতে
ছড়িয়ে
পড়ে,
তখন
মকরক্রান্তি অঞ্চলের (winter
solstice) অনেক রীতি এর
সঙ্গে
মিশে
যায়।
আর
এর
কারণ
ছিল
দ্যা
গ্রেট
প্রথম
গ্রেগরির
উদার
শাসন।
তাছাড়া
মিশনারিগুলোর সহযোগিতাও ছিল।
ফলে
উদ্যাপনের
দিক
দিয়ে
বড়দিন
একইসঙ্গে
হয়ে
ওঠে
ধর্মীয়
ও
সেক্যুলার উৎসব। কখনো
শ্রদ্ধাপূর্ণ; কখনো কেবলই
ফূর্তি।
“ধর্মীয়
দিকে
যদিও
বেশি
জোর
ছিল,
কিন্তু
তারপরও
আমোদফূর্তি বড়দিনের উৎসবে
জেঁকে
বসে।
সামন্তপ্রভুদের সুসজ্জিত বিশাল
হলরুমগুলোতে তাদের বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও
প্রজাদের
নিয়ে
আসর
বসত।
সেখানে
ভোজোৎসব,
নাচ-গান,
ক্রীড়া
সবই
হতো।
ছদ্মবেশী
ও
মূকাভিনেতাদের নৃত্য ও
ভাঁড়ামিপূর্ণ নাটক সবই
ছিল
এই
উৎসবের
অংশ।”[৩]
কীভাবে
নিছক
ধর্মীয়
একটি
উৎসব
সেক্যুলার আনন্দ আয়োজনে
রূপ
নেয়
সেটা
বোঝার
জন্য
উপরের
উদ্ধৃতিই
যথেষ্ট।
সব
ধরনের
ধর্মীয়
ও
আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ডকে বাদ
দিয়ে
বড়দিনের
উৎসব
রূপ
নেয়
সেক্যুলার আমোদফূর্তি ও
মৌজমাস্তিতে।
মানুষের
মনস্তত্ত্বের কথা মাথায়
রেখে
ইসলাাম
কখনোই
জন্মোৎসব
ও
বার্ষিকী
পালনের
আদেশ
দেয়নি,
কিংবা
উৎসাহিতও
করেনি।
বরং
ধর্ম
পালনের
অংশ
হিসেবে
এগুলো
যখন
পালন
করা
হতো,
সেগুলোকে
তখন
পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
ইসলাম পরিপূর্ণ
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
শেষ
হাজ্জে
আল্লাহ
স্পষ্ট
ঘোষণা
করেছেন:
“আর
আমি
তোমাদের
জন্য
তোমাদের
দীন
পূর্ণ
করলাম।”
(সূরাহ
আল-মাা’ইদাহ,
৫:৩)
আল-কুর’আন
ও
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
মাধ্যমে
ইসলাামের
সব
বার্তা
পৌঁছানো
হয়েছে।
কাজেই
দীনের
অংশ
হিসেবে
এগুলোর
মধ্যে
নতুন
কিছুর
সংযোজন
নিষিদ্ধ।
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
সময়ে
যেটা
দীনের
অংশ
ছিল
না
সেটা
পরবর্তীকালে কখনোই এর
অংশ
হতে
পারে
না।
এ
ধরনের
সংযোজনকে
নাবি
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
সংজ্ঞায়িত করেছেন বিদ‘আহ
বা
তিরস্কারযোগ্য উদ্ভাবন হিসেবে।
১২ই
রাবি‘উল-আওয়ালকে
ধর্মীয়
উৎসব
হিসেবে
পালন
করার
আদেশ
আল-কুর’আনের
কোনো
আয়াতে
বা
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
কোনো
হাদীসে
পাওয়া
যায়
না।
এটা
যদি
দীনের
কোনো
অংশ
হতো
তবে
নাবি
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
অবশ্যই
তা
পালন
করতেন
বা
আদেশ
দিতেন,
কিংবা
তাঁর
সাহাবিরা
পালন
করতেন;
অন্তত
তাদের
শিক্ষার্থীরা (তাবি‘ঈন)।
কিন্তু
ইসলাামের
ইতিহাসের
প্রাথমিক
বছরগুলোতে এই উদ্যাপনের
কোনো
নজির
নেই।
অনেক
শতক
পরে—মাওলানা
য়ুসুফ
লুধিনাভির মতে ৬০৪হিজরি
সনে—কিছু
শাসকেরা
১২ই
রাবি‘উল-আওয়ালকে
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
জন্মদিন
হিসেবে
পালন
করে।
তবে
তাদের
এই
পালনের
পেছনে
কোনো
নির্ভরযোগ্য ধর্মীয় ভিত্তি
ছিল
না।
মাওলূদ
বা
মিলাদের
নামে
মানুষজন
সমবেত
হতো।
আর
সেখানে
সাধারণত
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
জন্মের
ইতিহাস
বর্ণনা
করা
হতো।
জন্মের তারিখ নিয়ে মতপার্থক্য
একদিকে
১২ই
রাবি‘উল-আওয়ালকে
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
জন্মদিন
হিসেবে
পালন
করাটা
ভিত্তিহীন বিদ‘আহ,
অন্যদিকে
তাঁর
জন্মতারিখ আসলেই ১২
তারিখ
কি
না
সেটা
নিয়েও
যথেষ্ট
সন্দেহ
রয়েছে।
বিভিন্ন
বর্ণনায়
বিভিন্ন
তারিখ
পাওয়া
যায়।
নির্ভরযোগ্য বেশিরভাগ ‘আালিমই
যে-তারিখ
নিয়ে
মোটামোটি
একমত
সেটা
হচ্ছে
৯ই
রাবি‘উল-আওয়াল।
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
জন্মের
তারিখ
নিয়ে
যে
মতভেদ
আছে,
সেটাও
এদিকেই
ইঙ্গিত
করে
যে,
এটা
যদি
দীনের
অংশ
হতো
তাহলে
নির্ভুলভাবে তার জন্মের
তারিখ
সংরক্ষণ
করা
হতো।
এ
ব্যাপারে
কোনো
সন্দেহ
নেই
যে,
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
জীবন
প্রতিটি
মুসলিমের
জন্য
দিকনির্দেশনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাঁর
জীবনের
বিভিন্ন
ঘটনা
সম্পর্কে
জানা
ও
পড়াশোনা
করা
এবং
জীবনের
প্রতিটি
ক্ষেত্রে
তাঁর
ব্যবহারিক উদাহরণ অনুসরণ
করা
প্রত্যেক
মুসলিমের
জন্য
বাধ্যতামূলক। তাঁর জীবন
বা
সীরাহ
বর্ণনা
করাটাই
একটা
ধর্মীয়
কাজ।
এতে
অবশ্যই
বারাকাহ
আছে।
কিন্তু
আল-কুর’আন
বা
আস-সুন্নাহ
এজন্য
কোনো
নির্দিষ্ট সময় বা
পন্থা
নির্ধারণ
করে
দেয়নি।
এই
কাজের
সময়
সারাবছর।
সবসময়।
রাবি‘উল-আওয়াল
মাসকে
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
জন্মদিন
বা
তার
জীবনালেখ্যের জন্য সমবেত
হয়ে
পালন
করাকে
শারী‘আহ
মনোনীত
করেনি।
এটা
তাই
এমন
একটা
বিদ‘আহ
যা
সীরাহ
সমাবেশকে
কেবল
রাবি‘উল-আওয়াল
মাসে
সীমাবদ্ধ
করে
ফেলেছে।
কিংবা
এর
ফলে
মানুষের
মনে
এই
বিশ্বাস
গেঁথে
গেছে
যে,
এই
মাসে
তাঁর
জন্মদিনকে কেন্দ্র করে
আয়োজিত
সভাগুলো
অধিক
সাওয়াব
(পুরস্কার)
লাভের
যোগ্য;
যেন
অন্য
মাসে
আয়োজন
করলে
সাওয়াব
কম
হবে।
বরং
সত্য
তো
এটাই
যে,
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
সাহাবিরা
বছরজুড়ে
তাঁর
জীবনশিক্ষাকে পালন করতেন।
অন্যদেরকে শুধু তা
শেখানো
বা
প্রচারের
মধ্যেই
সীমাবদ্ধ
ছিলেন
না,
বরং
তারা
নিজেরা
নিজেদের
জীবনে
তা
অনুসরণ
করতেন,
জীবনের
প্রতিটি
ছত্রে
তাঁর
শিক্ষা
পালন
করতেন।
আর
এটাই
করা
প্রয়োজন
প্রতিটা
মুসলিমের।
এর
মাধ্যমে
আমরা
এটা
বলছি
না
যে,
রাবি‘উল-আওয়াল
মাসে
কোনো
সীরাহ
সমাবেশ
করা
যাবে
না।
আমরা
যেটা
বলতে
চাচ্ছি
তা
হচ্ছে,
এগুলো
যেন
কেবল
এ
মাসেই
সীমিত
করে
রাখা
না-হয়।
এই
বিশ্বাসও
মনে
লালন
করা
যাবে
না
যে,
এই
নির্দিষ্ট মাসে এ
ধরনের
সমাবেশ
করার
জন্য
শারী‘আহ
বিশেষ
তাগিদ
দিয়েছে।
এ
ধরনের
সমাবেশ
আয়োজনের
বেলায়
আরেকটি
জিনিস
মাথায়
রাখতে
হবে।
এগুলোর
সবগুলো
যেন
শারী‘আহ্র
সঙ্গে
সংগতিপূর্ণ হয়। একজন
মুসলিম
তার
সব
কর্মকাণ্ডে শারী‘আহর
বিধি
অনুসরণ
করবে
এমনটাই
প্রত্যাশিত। কাজেই প্রিয়
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
স্মরণে
আয়োজিত
সভাগুলোতে কোনোভাবেই এমন
কিছু
করা
যাবে
না,
যা
শারী‘আহ
দ্বারা
নিষিদ্ধ।
সমসাময়িক সীরাহসভা ও শারী‘আহ
অনেক
সীরাহসভায়ে দেখা যায়
যে
ইসলাামি
পর্দাবিধি লঙ্ঘন হয়।
একটি
সীরাহসভা
কীভাবে
কল্যাণকর
হতে
পারে
যেখানে
শারী‘আহ্র
এধরনের
মৌলিক
রীতি
প্রকাশ্যে লঙ্ঘন করা
হয়?
প্রিয়
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
স্মরণে
অনেক
অনুষ্ঠানে নারীরা পুরুষদের
সামনে
না’ত
(কবিতা)
আবৃত্তি
করেন;
কখনো
কখনো
মিউজিক
সহ।
এ
ধরনের
সভা
আয়োজন
এবং
তাতে
অংশ
নেওয়া
স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। কেননা,
এতে
শুধু
শারী‘আহ
বিধিই
লঙ্ঘিত
হয়
না,
প্রিয়
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
সীরাহকে
প্রকাশ্যে অপমান করা
হয়।
১২ই
রাবি‘উল-আওয়ালে
অন্য
আরও
যেসব
কাজ
করা
হয়
তার
মধ্যে
রয়েছে
মিছিল
বের
করা,
প্রিয়
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
নকল
কবর
বানানো,
ঘরবাড়ি
ও
সড়কগুলোতে আলোকসজ্জা। শারী‘আহ
এগুলোর
কোনোটারই
নির্দেশ
দেয়নি।
বরং
এগুলো
সচেতন
বা
অবচেতনভাবে অন্যান্য ধর্মগুলোর অনুকরণ। ইসলাামের
ইতিহাসের
প্রাথমিক
সময়ে
এগুলোর
কোনো
দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া
যায়
না।
সীরাহ্র
আসল
বার্তা
প্রিয়
নাবির
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)
ব্যাপারে
আসা
যা
গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে,
তাঁর
শিক্ষা
অনুসরণ
করা,
তার
জীবনীকে
প্রতিটা
মুসলিমের
জন্য
সহজলভ্য
করা।
শৈশব
থেকেই
অন্তরে
তা
লালন
করা;
পরিবারের
সদস্যদের
এগুলো
শেখানো,
তাঁর
জীবনের
আলোকে
নিজের
জীবন
পরিচালনা
করা
এবং
মানবীয়
আচরণের
ক্ষেত্রে
তাঁর
জীবনী
যে
সবচেয়ে
মহিমান্বিত উদাহরণ সেটা
বিশ্বাস
করা।
আর
এর
সবগুলোই
হতে
হবে
গভীর
ভালোবাসা
ও
শ্রদ্ধার
সঙ্গে।
কেবল
আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে এগুলোকে
সীমিত
করা
যাবে
না,
বরং
সুন্নাহ্র
অনুসরণের
মাধ্যমে
তা
ফুটিয়ে
তুলতে
হবে।
কেবল
মিছিল
করে
কিংবা
দেয়ালে
আলোকসজ্জা করে এগুলো
সম্ভব
না।
এজন্য
প্রয়োজন
ধারাবাহিক ও লাগাতার চেষ্টা।
প্রয়োজন
তা
শেখানো
ও
চর্চার
জন্য
অর্থবহ
প্রোগ্রাম আয়োজন।
লেখক:
মুফতি
তাকি
উসমানি
(মূল
আর্টিকেল
লিঙ্ক)
অনুবাদক:
মুহাম্মাদ শরিফুল ইসলাম,
মুসলিম
মিডিয়া
প্রতিনিধি।
[১]
কলিয়ারের এনসাইক্লোপিডিয়া, ১৯৮৪
সংস্করণ,
ভলিউম:
৬,
পেজ:
৪০৩
[২]
ব্রিটানিকা, ১৯৫৩ সংস্করণ,
ভলিউম:
৫,
পেজ:
৬৪2
[৩]
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, ১৯৫৩
সংস্করণ,
ভলিউম:
৫,
পেজ:
৬৪৩
0 comments:
Post a Comment