Sunday, September 4, 2016

যিলহাজ্জ: বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিনে আমাদের করণীয়

যিলহাজ্জ: বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিনে আমাদের করণীয়

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বছরের সমস্ত দিন অথবা রাতকে সমান মর্যাদাপূর্ণ করেননি। বরং কিছু রাত এবং দিনকে তিনি মহিমান্বিত করেছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেগুলোতে ইবাদাতের জন্য বিশেষ পুরস্কারের। রমাদানের শেষ দশ রাত যেমন বছরের শ্রেষ্ঠ দশ
.আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন: “শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির” – [সূরাহ আল-ফাজর: -]

এই শপথের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বছরের বিশেষ দশটি রাতের মাহাত্ম্য পবিত্রতা তুলে ধরছেন। এটি কোনো সাধারণ শপথ নয়; অনেক নির্ভরযোগ্য তাৎপর্যবাহী শপথ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা স্বয়ং শপথের মাধ্যমে এই দশটি রাতের (যিলহাজ্জের প্রথম দশক) প্রতি কতটা গুরুত্ব মর্যাদা আরোপ করছেন জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্রই তা বুঝতে পারেন।
.
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই দশ দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন: যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মত প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোন আমল নেই। তাকে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদ করা কি তার চেয়ে প্রিয় নয় ? রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বললেন: না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ব্যক্তির কথা আলাদা যে তার প্রাণ সম্পদ নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়ে গেল, অত:পর তার প্রাণ সম্পদের কিছুই ফিরে এল না। – [সহীহ বুখারী]
.
যিলহাজ্জের প্রথম দশ দিন যে অত্যন্ত পুণ্যময় এবং শ্রেষ্ঠ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের তাই এই দশ দিন নিবিড় ইবাদাত এবং ভালো কাজের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করা উচিত। এতো বিপুল পরিমাণ পুণ্য অর্জনের সুযোগ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করলে মৃত্যুর পরে অনুতাপ করা ছাড়া আমাদের কিছুই করার থাকবে না।
.
যিলহাজ্জের এই পুণ্যময় দশ দিনে আমরা নিচের কাজগুলো করতে পারি

.১। যিলহাজ্জের প্রথম নয় দিন সাওম পালন করা

যিলহাজ্জের প্রথম নয় দিন সাওম পালন করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে, বিশেষত নয় তারিখে যেটি হচ্ছে আরাফাহর দিন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)আমাদের যিলহাজ্জের প্রথম দশ দিনে বেশি পরিমাণে নেক আমল করার উৎসাহ দিয়েছেন; আর নিঃসন্দেহে সাওম হচ্ছে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি নেক আমল। সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন:
আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্যশুধু সিয়াম ছাড়া। কারণ, তা আমার জন্য। তাই আমিই এর প্রতিদান দেব।” – [সহীহ বুখারী]
[নোট: যিলহাজ্জ মাসের দশ তারিখ হচ্ছে ঈদ-উল-আদ্বহা। ঈদের দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ।]
.
আরাফাহর দিনে রোজা রাখার মাধ্যমে দুবছরের গুনাহ মাফ হওয়া: আবু কাতাদাহ আল-আনসারী থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে আরাফাহর দিনের রোজার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আরাফাহর দিনের রোজা বিগত সামনের এক বছরের গুনাহসমূহের জন্য কাফফারা স্বরূপ। তাঁকে আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আশুরার রোজা অতীতের এক বছরের গুনাহর কাফফারা স্বরূপ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সোমবারের রোজার ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হলো। তিনি উত্তর দিলেন, এই দিনেই আমার জন্ম এবং এই দিনেই আমার ওপর ওহী নাযিল হয়। [মুসলিম]
.
সুতরাং, যিলহাজ্জের প্রথম নয় দিনএবং অবশ্যই আরাফাহর দিনেসাওম পালন করার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। পুরো নয় দিন যদি সম্ভব নাও হয় তবে যত বেশি দিন পারা যায় রোজা রাখার চেষ্টা করা উচিত এবং তা বছরই। ভবিষ্যতে আমাদের জীবনে কী ঘটবে তা আমরা কেউই বলতে পারি না। হয়তো আগামী বছর আমরা সুযোগ নাও পেতে পারি। তাই ভালো কাজে কখনোই অলসতা করা উচিত নয়।

.২। বেশি বেশি তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল এবং তাকবীর পাঠ করা

যিলহাজ্জের প্রথম দশ দিনে তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পাঠ করা সুন্নাহ। আল্লাহকে স্মরণ এবং তাঁর বড়ত্ব প্রকাশের লক্ষ্যে মসজিদে, বাড়িতে, পথেঘাটে এবং সম্ভাব্য সব জায়গায় এগুলো অধিক পরিমাণে পাঠ করা উচিত
যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করার সময়।” – [সূরা হাজ্জ: ২৮]
যিলহাজ্জ মাসের থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত তাকবীরাত--তাশরীক পাঠ করা:
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
.
পুরুষেরা এটি যিলহাজ্জের তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয সালাতের পর শব্দ করে পড়বে। মহিলাদের উচিত হবে নিঃশব্দে পড়া।

.৩। পশু কুরবানি করা


ঈদ-উল-আদহায় পশু কুরবানি করা (যা উদহিয়া নামেও পরিচিত) নবী ইবরাহীম (‘আলাইহিস সালাম) -এর সুন্নাত। কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করা যায়। প্রত্যেক বিবেকবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমযিনি মুসাফির নন এবং কুরবানি করার আর্থিক সামর্থ্য রাখেন (নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে) – তার জন্য জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব। ১০, ১১ বা ১২ যিলহাজ্জের যে কোনো একদিন কুরবানি করা যায়। এই দিন তিনটির বাইরে কেউ এক হাজার পশু কুরবানি করলেও তা উদহিয়া হিসেবে গণ্য হবে না। কুরবানির পবিত্র এই কাজটি তাই উপরোক্ত তিন দিনের মধ্যেই করতে হবে। কুরবানি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন:
এগুলোর গোশত রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া।” – [সূরা হাজ্জ: ৩৭]
.৪। সাধারণ সময়ের চেয়ে অধিক পরিমাণে ভালো কাজ করা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশদিনে করা আমলের চেয়ে কোন উত্তম কাজই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় নয়। – (সুনানে ইবনে মাজাহ)
.
যেহেতু এই ১০ দিনের আমলের মর্যাদা অনেকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে, সুতরাং এই পবিত্র সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করার জন্য এই সময়টুকুতে বেশি বেশি ভালো কাজে নিজেদের নিয়োজিত করা উচিত।
এখানে আটটি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো যা এই ১০ দিনে করা যেতে পারে

.১। বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা 

যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন থেকে একটি অক্ষর পাঠ করবে, সে একটি পুরষ্কার (নেকি) লাভ করবে। এবং এই পুরষ্কারটি ১০ গুণ করে দেওয়া হবে। আমি বলছি না যেআলিফ, লাম, মীমএকটি অক্ষর, বরং আমি বলছিআলিফএকটি অক্ষর, ‘লামএকটি অক্ষর, এবংমীমএকটি অক্ষর।”- (তিরমিজি)
কুরআনের একটি অক্ষর যেখানে ১০ টি উত্তম কাজের সমান, সেখানে প্রতিটি অক্ষর পাঠের জন্য বছরের শ্রেষ্ঠতম এই ১০ দিনে কি পরিমাণ পুরষ্কার অর্জন করা যাবে- সেটা কল্পনা করা যায়!! আবু দারদা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “তোমরা কেউ কি এক রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে সক্ষম হবে? সাহাবীরা বললেন, কিভাবে একজন মানুষের পক্ষে এক রাতের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ কুরআন শেষ করা সম্ভব? তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বললেন, “তিনি আল্লাহ, একএটি এক তৃতীয়াংশ কুরআনের সমান।”- (সহীহ মুসলিম)
.
তাই এই ১০ দিনে অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত, এবং চেষ্টা করা উচিত সারা বছর সেটা অব্যাহত রাখারকারণ কুরআন তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম আমলগুলোর একটি!

.২। উত্তম ব্যবহার করা


রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন,
হাশরের ময়দানে মুমিনের পাল্লায় সবচেয়ে ভারি হবে তার উত্তম চরিত্র। যারা বাজে এবং কর্কশ ভাষা ব্যবহার করে আল্লাহ তাদের ঘৃণা করেন।” – (তিরমিজি)
.সুতরাং লক্ষ্য ঠিক করা উচিত যেন এই পবিত্র দিন এবং রাতগুলোতে আমরা নিজেদের সর্বোত্তম চরিত্র বজায় রাখতে পারি, এবং সেটা অব্যাহত রাখতে পারি বছরের বাকি দিনগুলোতেও। অযথা তর্ক, পরনিন্দা, গল্পগুজব, অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি থেকে নিজেদেরকে যথাসম্ভব বিরত রাখতে হবে।
.
টিপস: বাড়তি কিছু পরিশ্রম করা উচিত পরিবার, বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য, বিশেষ করে যারা অন্য ধর্মালম্বী তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিত।

.৩। বেশি বেশি দান করা


যেহেতু এই ১০ দিনে করা আমলগুলোর পুরষ্কার অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি, তাই এটাই উপযুক্ত সময় নিজেদের দানের পরিমাণ বৃদ্ধি করার! যারা দান করেন এবং অভাবী ব্যক্তিদের সাহায্য করেন, আল্লাহ তাঁদেরকে ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ দান করাকে “beautiful loan to Allah“ নামে সম্মানিত করেছেনএটা বোঝানোর জন্য যে দান করা আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় কাজ এবং তিনি নিজে আমাদের এটির প্রতিদান দিবেন বহুগুণ হিসেবে!
যদি তোমরা আল্লাহ তালা কে ঋণ দাও-উত্তম দান, তাহলে তিনি তা বহুগুণ বাড়িয়ে দিবেন এবং তিনি তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন, আল্লাহ তালা কতই না গুণগ্রাহী এবং ধৈর্যশীল।” – (সূরা তাগাবুন: ১৭)

.৪। বাবা-মাকে যথাযথ সম্মান করাঃ

ইসলাম আমাদেরকে শেখায় যে, নিজের পিতা-মাতাকে সম্মান করা আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় কাজগুলোর একটি। এমনকি এর মর্যাদা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার চেয়েও বেশি! আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “কোন কাজটি সবচেয়ে উত্তম?” তখন রাসূল  উত্তর দেন, “সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা।আমি জিজ্ঞেস করলামতারপর?” তিনি  উত্তর দিলেনপিতামাতার সাথে সদয় ব্যবহার করা।আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম,“তারপর?” তিনি  উত্তর দিলেন, “আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা (জিহাদ)” আমি ভয় পাচ্ছিলাম তাঁকে বিরক্ত করছি, তাই তাঁকে পুনরায় প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকলাম।”- (সহীহ মুসলিম)

..৫। অধিক পরিমাণে নফল ইবাদত করা


রাবিয়াহ ইবনে মালিক হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “যে কোন কিছু চাও।রাবিইয়াহ বললেন, “আমি জান্নাতেও আপনার সহচর (companion) হতে চাই।রাসূলুল্লাহ বললেন, “আর কিছু?” রাবিয়াহ বললেন,“না আর কিছু নয়।তখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ)বললেন, “তাহলে বেশি বেশি সিজদাহ করার মাধ্যমে আমাকে সাহায্য কর (নফল ইবাদত)”- (আবু দাউদ)
.এই পবিত্র ১০ দিন করা যেতে পারে এমন সুন্নাহ এবং নফল সালাত হলো,

.প্রতিদিন ১২ রাকআত সুন্নত সালাত

ফরজ সালাতের সাথে প্রতি ওয়াক্তের সুন্নাহ ইবাদতগুলো করার চেষ্টা করতে হবে। উম্ম হাবিবাহ রামিলাহ বিনত আবু সুফিয়ান বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে বলতে শুনেছেন, “প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি তৈরি করা হবে যারা ফরজ সালাত ছাড়াও প্রতিদিন দিনে এবং রাতে ১২ রাকআত সালাত আদায় করে, আল্লাহর  সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।“ – (মুসলিম)
.
উম্ম হাবিবাহ  বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “ যে ব্যক্তি মধ্যাহ্নের সালাতের আগে এবং পরে চার রাকআত সালাত আদায়ের অভ্যাস করবে, আল্লাহ  তাঁকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।”- (সুনানে আন-নাসাঈ)

.সালাতুল দুহা

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “যে ব্যক্তি মধ্যাহ্নের আগে ১২ রাকআত সালাত আদায় করবে, আল্লাহ পুরষ্কার হিসেবে তাঁর জন্য জান্নাতে স্বর্ণ দিয়ে প্রাসাদ তৈরি করবেন।” – (সুনানে আন-নাসাঈ)
.

       i.            মসজিদে প্রবেশের পর দুই রাকআত সুন্নত সালাত
আবু কাতাদাহ বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “ যদি তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বসার পূর্বে দুই রাকআত সালাত আদায় করে নেয়।”- (আবু দাউদ)
 .
    ii.            ওজু করার পর দুই রাকআত সুন্নত সালাত (তাহিয়্যাতুল উদ্বু)
আবু হুরায়রাহ  হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বিলাল  কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে বিলাল! আমাকে সর্বাধিক আশাপ্রদ আমল বল, যা তুমি ইসলাম গ্রহণের পর বাস্তবায়িত করেছ। কেননা, আমি (মিরাজের রাতে) জান্নাতের মধ্যে আমার সম্মুখে তোমার জুতার শব্দ শুনেছি।বিলাল বললেন, “আমার দৃষ্টিতে এর চাইতে বেশী আশাপ্রদ এমন কোন আমল করিনি যে, আমি যখনই রাত-দিনের মধ্যে যে কোন সময় পবিত্রতা অর্জন (অজু, গোসল বা তায়াম্মুম) করেছি, তখনই ততটুকু নামাজ পড়েছি, যতটুকু নামাজ পড়া আমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ ছিল।”- (বুখারি মুসলিম)
.
 iii.            তাহাজ্জুদের সালাত
নফল ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে তাহাজ্জুদ সালাত, যার মাধ্যমে যে কেউ আল্লাহ এর নৈকট্য লাভ করতে পারে। এই সময়ে কুরআনের যতটুকু অংশ মুখস্ত আছে সেটা তিলাওয়াত করার চেষ্টা করা, দীর্ঘ সিজদাহে লিপ্ত থাকা এবং আল্লাহ  এর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। নিশ্চয়ই আল্লাহ  তাঁর সেসব বান্দাদের ফিরিয়ে দেন না যারা তাহাজ্জুদের সালাতের মাধ্যমে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে

.৬। আল্লাহ কে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা এবং তাঁর প্রশংসা বর্ণনা করা 

আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে আমাদের কর্তব্য তাঁকে স্মরণ করা এবং বেশি বেশি তাঁর প্রশংসা করা, বিশেষ করে পবিত্র এই দিনগুলোতে এর পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেওয়া উচিত! কিছু সহজ এবং মূল্যবান জিকর যা আমরা মহিমান্বিত এই দিনগুলোতে করতে পারি সেগুলো হলোঃ
.আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া  ইল্লাহিল হামদ
  • সুবহানআল্লাহ
  • আলহামদুলিল্লাহ
  • আল্লাহু আকবার
  • লা ইলাহা ইল্লাহ
  • লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ
  • আস্তাগফিরুল্লাহ
  • সুবহান্নালাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহী
  • সুবহান্নালাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি, ওয়া লা ইলাহা ইল্লালাহু, ওয়াল্লাহু আকবার। ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম
  • লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইয়্যুহি ওয়া ইয়্যুমিতু ওয়া হুয়া হায়্যুল্লা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা, দুল জালালি ওয়াল ইকরাম, বিয়াদিহীল খাইর, ওয়া হুয়া লা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির। (সংক্ষিপ্ত রূপেঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু হুয়া লা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির।)
.এছাড়াও দরূদ পড়া যেতে পারেদরূদ হিসেবে সালাতের শেষে যেটা পাঠ করা হয় সেটি পড়া যেতে পারে, তাছাড়া সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত দরূদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লিমপড়া যেতে পারে।

.৭। বেশি করে দু করাঃ 


আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাঁদেরকে বলে দাও আমি তাঁদের নিকটেই আছি।” – (সূরা বাকারাহ: ১৮৬)
পবিত্র এই ১০ দিন এবং রাতে, বিশেষ করে যিলহাজ্জের নবম দিনে আরাফাত এর দিন এবং রাতে বেশি বেশি দু করা উচিত। সাওমরত অবস্থায় দু বেশি কবুল হয়, বিশেষ করে সেহরির শেষ সময়ে এবং ইফতারের ঠিক পূর্বের সময়ে। এই সময়গুলোকে কাজে লাগানোর জন্য অধিক পরিমাণে দু করা উচিত।

.৮। জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসা


মুসলিম হিসেবে নিজেদেরকে উন্নত করার জন্য প্রতিনিয়তই নিজেদের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা উচিত। জীবনকে আমূল বদলে দেওয়া পরিবর্তনগুলো করার জন্য পবিত্র এই ১০ দিনের চেয়ে উপযুক্ত সময় আর কি হতে পারে? এছাড়া প্রয়োজন এই পরিবর্তন ধরে রাখার চেষ্টা করা, নিজ রবের কাছে ব্যাপারে সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। হয়ত এর মাধ্যমে তিনি আমাদের পূর্বের পাপ গ্লানিগুলো মুছে দেবেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত সদ্যজাত শিশুর মত আমরা পবিত্র হয়ে উঠছি, ইনশাআল্লাহ!
.তাই যিলহাজ্জ মাসের প্রথম এই ১০ দিনের সর্বোত্তম ব্যবহার করার চেষ্টা করা উচিত, জন্য প্রয়োজনীয় সকল পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিতযেন আমরা নিজেদের জীবনকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করতে পারি। আমরা নিজেদের অবস্থা উন্নত করব, ভুলগুলো শুধরে নিব, এবং বেঁচে থাকব শুধুমাত্র আখিরাতের জন্য। এই দুনিয়ার জীবনের জন্য বেঁচে থাকব না, যা কিনা যে কোন মুহূর্তে শেষ হয়ে যেতে পারে! আল্লাহ  কুরআনে আমাদের বলেছেন সম্পূর্ণভাবে দ্বীনে প্রবেশ করতে, আংশিক কিংবা অসম্পূর্ণভাবে নয়।
হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ”- (সুরা বাকারা: ২০৮)
.
তাই আমরা কি ইসলামকে আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলব না? এটি আমাদের সর্বোত্তম সুযোগ! আমরা যদি মৃত্যুর আগমন ঘটার আগেই সেটি গ্রহণ করতে না পারি, তবে আমাদের যে চিরন্তন অনুতাপের শিকার হতে হবে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই! চিরন্তন আখিরাতের জীবনকে অবহেলা করে নিজেদের সকল প্রচেষ্টা, সকল পরিশ্রম সম্পূর্ণভাবে ক্ষণিকের এই জীবনের জন্য কাজে লাগানো খুবই অযৌক্তিক, যা কিনা সেকেণ্ডের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারে। তারপরও আমরা কেন দুনিয়ার জীবনকেই প্রাধান্য দেই, দুনিয়ার জন্যই বেঁচে থাকতে চাই, এবং অবহেলা করি আখিরাতকে? সময় সদা প্রবাহমান, কিন্তু জীবনের সাময়িক বেড়াজালে আবদ্ধ আমরা যেন অন্ধ হয়ে আছি! সময় আমাদের পক্ষে নেই। জীবন খুবই ছোট্ট, সব সময় বয়ে চলা একটা নদীর মত। দুনিয়ার জীবন ক্ষণিকের যাত্রাবিরতির মত, আমাদের প্রকৃত গন্তব্য তো আখিরাতের চিরন্তন জীবন
এই ছোট্ট জীবন আমাদের একমাত্র সুযোগ নিজেদের আখিরাতকে গড়ে তোলার। আখিরাতে আমরা চাইব আবার এই দুনিয়ায় ফিরে আসতে, আবার বাঁচতে চাইব, যেন আমরা ইবাদত করতে পারি, শেষবারের মত ভালো কাজে সময় দিতে পারি। কিন্তু তখন আর সেটা সম্ভব হবেনা। তাই এখনই চেষ্টা করা উচিত আখিরাতের জন্য, অপ্রতিরোধ্য মৃত্যুর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করারনিজেদের জানাজার প্রস্তুতির আগেই যেন প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারি সেই চিরন্তন জীবনের জন্য।
.আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন, যেন এই পবিত্র দিন এবং রাতগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার আমরা করতে পারি। মহিমান্বিত এই দিনগুলোকে তিনি আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জীবনের সাফল্যের মাধ্যম করে দিন। আমীন

<

0 comments:

Post a Comment