ধর্মের কিছু কথা : মাছের নিয়ামত |
চট্টগ্রামের হালদা নদীর কথা। হাটহাজারী ও রাউজান নামে
দু’উপজেলার মাঝে। এই নদীতে বর্ষার শুর¤œতে ও মাঝে সমুদ্র থেকে প্রচুর মা-মাছ এসে
ডিম পেড়ে চলে যায়। এত পরিমাণ ডিম পাড়ে যে, তা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। পৃথিবীতে
অন্যান্য অঞ্চলেও বিভিন্ন মাছের এভাবে ডিম পাড়ার ব্যাপার ল—গ্য করা যায়। পত্রিকায়
দেখা গেল, মাছ গবেষকরা বলছেন যে, ১২ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ ধরা পড়ে সেই নদীতে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুর¤œল কিবরিয়া বাসসকে
জানান, খবর পেয়ে তিনি রাউজান মৎস্য কর্মকর্তার দফতরে যান এবং মাছটির বিভিন্ন
পরী—গা-নিরী—গা করেন। তিনি বলেন, মাছটির বয়স ৮ বছর। ৩ বছর বয়স থেকে মাছটি ডিম দেয়া
শুর¤œ করেছে। প্রতি মৌসুমে একটি মাছ সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ ডিম ছাড়ে। তিনি বলেন, ধৃত
মাছটি ৫ বছরে যে পরিমাণ ডিম ছেড়েছে এবং সেগুলোর রেণু থেকে যে পরিমাণ পোনা উৎপাদিত
হয়েছে, তাতে মাছটি জাতিকে কমপ—েগ বিশ কোটি টাকার মাছ যোগান দিয়েছে। অন্যদিকে বলা
হয়েছে, ১২ কেজি এই কাতলা ও ৫ কেজি ওজনের একটি র¤œই মাছকে ধরা হয়েছে। এ দুটি মা-মাছ
বেঁচে থাকলে দেশ ও জাতিকে উপহার দিতো বছরে সাড়ে আট কোটি টাকার মাছ সম্পদ।
(ইনকিলাব, ২৯ মে, ২০০৭)। দুটো মাছ বছরে আটকোটি টাকার মাছ সম্পদ উপহার দিল! কি
গুর¤œত্বপূর্ণ কথা! আসলে মাছ চাষের দিকে ভালোভাবে নজর দিলে মাছেই আমাদের খাদ্য
সমস্যার সমাধান হতে পারে। পৃথিবীতে কৃষি কাজ আসার আগে মানুষ তো ফল খেয়েই থাকতো।
শুধু ভাত-র¤œটি খেতে হবে, তা তো নয়। আলু খেয়ে বাঁচে আয়ারল্যান্ডের মানুষ। মাছ
খেয়েও বাঁচা যায়। প্রকৃতিকে তো আল¯œাহ্্ই বলেছেন, মানুষের জন্য এগুলো তৈরি করতে।
নইলে এত মাছ কেন? একটা মাছ ৩৫ লাখ পর্যšত্ম ডিম ছাড়তে পারে। এত কেন? মানুষের জন্য
যে, মানুষ এগুলো খাবে। গাভীর যে দুধ হয় একটা বাছুর শেষ করতে পারে না। তাহলে বাড়তি
দুধটা কার জন্য? মানুষের জন্য। আল¯œাহ্ই এ ব্যবস্থা করে রেখেছেন। মানুষ কিছুই না
করলে গাছের ফল, গর¤œ-বকরি-মহিষ-উটের দুধ, আর ঝরনা-নদীর পানি খেয়ে বাঁচতে পারে।
সুদূর অতীতে কৃষি কাজ শুর¤œর আগে মানুষ সেইভাবে বাঁচত। আল¯œাহ্ই সম্পদ বৃদ্ধি
করেন, নেকি বৃদ্ধি করেন। কোরআন বলে, “যদি কেউ একটি সৎ কাজ করে, তাহলে আল¯œাহ্্
তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের প—গ থেকে তাকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন। (৪ সূরা
নিসা : ৪০ আয়াত)। “যে ব্যক্তি আল¯œাহ্্র কাছে হাজির হবে সৎ কাজ নিয়ে তার জন্য
রয়েছে দশ গুণ প্রতিফল আর যে ব্যক্তি অসৎ কাজ নিয়ে আসবে সে ততটুকুই প্রতিফল পাবে
যতটুকু অপরাধ সে করেছে এবং কারোর উপর জুলুম করা হবে না। (৬ সূরা আনআম : ১৬০
আয়াত)।যারা আল¯œাহ্্র পথে আপন ধনসম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্য বীজের মতো
যা থেকে সাতটি শীষ জন্মে, প্রতিটি শীষে থাকে একশ’ দানা। আর আল¯œাহ্্ যাকে ইচ্ছে
বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। আল¯œাহ্্ প্রাচুর্যময়, মহাজ্ঞানী। (২ সূরা বাকারা : ২৬১
আয়াত)। “তুমিই (আল¯œাহ্্ই) যাকে ইচ্ছা বিনাহিসাবে (বি গাইরি হিসাব) রিজেক দান কর।
(৩ সূরা আলে ইমরান : ২৭ আয়াত)”।তাহলে একটি অসৎ কাজে একটি গুনাহ। ভালো কাজে দুই
গুণ, দশগুণ, সাতশ’ গুণ এমন কি “মহাপুরস্কার” “বহুগুণে বাড়িয়ে দেন” “বিনা হিসাবে”
দেন আল¯œাহ। পৃথিবীতে একটা মা-মাছই জ্বলšত্ম প্রমাণ। সিনাইয়ের মর¤œভূমিতে বনি
ইসরাইলিদের রেডিমেড মান্না ও সালওয়া নামে খাদ্য সরবরাহ করেছিলেন আল¯œাহ্। একটা
অপরাধে একটা গুনাহ। তবে বাইবেলে দেখা যায়, ইহুদিদের জন্য একটা গুনাহের সাতগুণ
শা¯িত্ম। এটা হয়তো এই জন্য যে, তাদের সামনে আল¯œাহ্্ হযরত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে কথা
বলেছিলেন। আর মর¤œভূমির ভিতর ‘রেডিমেড’ খাদ্য (ফাস্ট ফুড) সরবরাহ করেছিলেন। তারপরও
তারা আল¯œাহ্্র সঙ্গে তাদের চুক্তি (কভেনান্ট) পালন করেনি। তাই সাতগুণ শা¯িত্ম।
তবে ইহকালে-পরকালে উভয়স্থানে, নাকি ইহকালে তা স্পষ্ট নয়। বাইবেলে আছে, “আর সদা
প্রভু মুসাকে কহিলেন, দেখ, আমি নিবিড় মেঘে তোমার নিকট আসিব, যেন লোকেরা তোমার সহিত
আমার আলাপ শুনিতে পায় এবং তোমাতেও চিরকাল বিশ্বাস করে।” (এক্সোডাস ১৯:৯)। “তৃতীয়
দিনে সদা প্রভু সকল লোকের সা—গাতে সীনয় পর্বতের উপরে নামিয়া আসিবেন।” (এক্সোডাস
১৯:১১)। “পরে সদাপ্রভু মুসাকে কহিলেন, তুমি ই¯্রায়েল সšত্মানগণকে এই কথা কহ, তোমরা
আপনারাই দেখিলে, আমি আকাশ হইতে তোমাদের সহিত কথা কহিলাম।” (এক্সোডাস ২০:২২)।
আল¯œাহর কণ্ঠস্বর শোনার পর এবং বেহেশতী “ফাস্ট ফুড” খাওয়ার পরও যদি আল¯œাহ্র কথা
অমান্য করা হয়, তাহলে তো সাতগুণ শা¯িত্ম হতেই পারেÑ এটা ‘কোর্ট মার্শাল’ আর কি।
বাইবেলে আছে, “আর যদি তোমরা (ইহুদিরা) ইহাতেও আমার বাক্যে মনোযোগ না কর, তবে আমি
তোমাদের পাপ প্রযুক্ত তোমাদিগকে সাতগুণ অধিক শা¯িত্ম দিব।” (লেভিটিকাস ২৬:১৮)।
“ইহাতেও যদি আমার উদ্দেশ্যে শাসিত না হও, কিন্তু আমার বিপরীত কর, তবে আমিও তোমাদের
বিপরীত আচরণ করিব, ও তোমাদের পাপ প্রযুক্ত আমিই তোমাদিগকে সাত বার আঘাত করিব।”
(লেভিটিকাস ২৬:২৪) “আর এই সকলেতেও যদি তোমরা আমার কথা না শুন, আমার বিপরীত আচরণ
কর, তবে আমি ক্রোধে তোমাদের বিপরীত আচরণ করিব এবং আমিই তোমাদের পাপ প্রযুক্ত
তোমাদিগকে সাতগুণ শা¯িত্ম দিব।” (লেভিটিকাস ২৬:২৮)। বাইবেলে থাকলেও কোরআন-হাদীসে
পাওয়া যায় না ইহুদিরা আল¯œাহ্্ ও হজরত মুসা (আ.)-এর মধ্যে কথোপকথন শুনেছিলেন কিনা।
তবে এটা তো ঠিক বনি ই¯্রাইলিদের জন্য লোহিত সাগর শুকিয়ে পথ করে দিয়েছিলেন,
মর¤œভূমিতে ফাস্ট ফুড মান্না-সালওয়া খেয়েছিল সবাই। যাই হোক আল¯œাহ্্ তার রহমত ও
শা¯িত্ম বাড়াতে-কমাতে অধিকার রাখেন। মৎস্য সম্পদের অগুনতি বৃদ্ধি দিয়ে তিনি
মানুষকে বাঁচাচ্ছেন। আমরা অকৃতজ্ঞ। তা র—গা করতেও জানি না। মৌসুমের সময় হালদা
নদীতে ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা উচিত। সোনার ডিম যে হাঁস দেয় তাকে কি জবাই করে বেশি
লোভে? বোকারাই তা করে। কেউ কেউ দাবি করেছেন, “ইউনিফায়েড ২৬ ফ্যামিলি কোড চাই”। এরা
সবধর্মের অনুসারীদের জন্য একই পারিবারিক আইন চায়। আসলে এটা চাওয়ার অর্থ মুসলমানদের
পারিবারিক আইনে যতটুকু ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে তার বিলুপ্তি। কিভাবে একই পারিবারিক
আইন হতে পারে? হিন্দু-খ্রিস্টানরা কি মুসলমানদের পারিবারিক আইন গ্রহণ করবে? করলে
তো ভালো। তবে মুসলমানরা তো জোর করে তাদের পারিবারিক আইন অন্যদের উপর চাপাতে পারে
না। মুসলমান শাসনে সমগ্র বিশ্বেই অমুসলিমদের পারিবারিক আইনগুলোকে মানা হতো, পালিত
হতো, কারণ বিয়ে-তালাক নিয়ে যে আইন রয়েছে তা ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন ঈমানদার
মুসলমান কখনও সাধারণ একীভূত আইনের নামে বিয়ে-তালাকে এমন কিছু করাতে চাইবে না যা
কোরআন-হাদীসে নিষিদ্ধ। অন্যদিকে হিন্দুদের ভিতর কাজিন ভাই-বোনে বিয়ে হয় না। মুসলমানে
হয়। এটা কিভাবে এক ধরনের করা হবে?ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গ¯œাডস্টোন মšত্মব্য
করেছিলেন,‘ঝড় ষড়হম ঃযব গঁংষরসং যধাব ঃযব ছঁৎধহ বি ংযধষষ নব ঁহধনষব ঃড় ফড়সরহধঃব
ঃযবস. বি সঁংঃ বরঃযবৎ ঃধশব রঃ ভৎড়স ঃযবস ড়ৎ সধশব ঃযবস ষড়ংব ঃযবরৎ ষড়াব’ আরও বলেন,
“ঝড় ষড়হম ঃযবৎব রং ঃযরং নড়ড়শ, ঃযবৎব রিষষ নব হড় ঢ়বধপব রহ ঃযব ড়িৎষফ.” এসব হলো
ব্রিটিশদের ইসলামবিদ্বেষ। কোরআনই বিশ্বে শাšিত্ম এনেছে। আনতে পারবে। আর হ্যাঁ,
মুসলমানরা কোরআন আঁকড়ে ধরলে কেউ তাদের উপর ছড়ি ঘুরাতে পারবে না।কোরআন তথা শরিয়ত
থেকে সরে আসতে মুসলমানদের উপর চাপ প্রয়োগ বহু শতাব্দী থেকে চলছে। তার প্রভাব
আমাদের দ্বারপ্রাšত্ম পর্যšত্ম পৌঁছেছে। অথচ ইসলামের মহান শি—গা থেকে পাশ্চাত্যও
ছবক নিয়েছে। জর্জ হেনরী লুই তার দর্শন শাস্ত্রের ইতিহাসে ইমাম গাযযালীর ‘এহ্ইয়াউল
উলূম’ সম্পর্কে লিখেছেনÑ বেকার্টের (যাকে ইউরোপে দর্শন শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বলা
হয়) যুগে যদি ফরাশী ভাষায় এহ্ইয়াউল উলূমের অনুবাদ করা হতো তাহলে প্রত্যেকেই এ কথা
বলত যে, বেকার্ট এহ্ইয়াউল উলূমের বিষয়বস্তু চুরি করেছেন। (৪র্থ মুদ্রণ, ২য় খ-,
লন্ডন, পৃ. ৫০)।একথার অর্থ কী? বেকার্ট হলেন ফরাসী দার্শনিক। তিনি পার্শ্ববর্তী
স্পেন থেকে মুসলমানদের জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে বিদ্যা অর্জন করেছিলেন তা স্পষ্ট। তবে
তার সময় গাজ্জালীর এই গ্রন্থটি ফরাসী ভাষায় অনূদিত হয়নি। বেকার্ট সম্ভবত এর মূল
আরবী থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। ‘এহ্ইয়াউল উলূম’-এর জ্ঞান নেওয়া যাবে, আর কোরআনকে দমন
করতে হবে, এ কোন নীতি? এদিকে ‘মৌলবাদ’ “ফান্ডামেন্টালিজম” শব্দ অপব্যবহার করে
ইসলাম ও মুসলমানদের সমালোচনা করা হচ্ছে। অথচ এ শব্দ সৃষ্টি করা হয়েছিল
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোঁড়া খ্রিস্টান গোষ্ঠীর পরিচয় বুঝাতে।
সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব, ড. মুহাম্মদ সিদ্দিক
লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক
0 comments:
Post a Comment