Friday, April 3, 2015

ইসলাম প্রচারের নিয়মনীতি

ইসলাম প্রচারের নিয়মনীতি


অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম : আল্লাহ জাল্লা শানুহু মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর খলীফা বা প্রতিনিধি করে। মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করবার জন্য। মানুষকে তিনি দান করেছেন পথ চলার দিশা। হযরত আদম ‘আলাইহিস সালাম’ থেকে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল পৃথিবীতে এসেছেন মানুষকে সঠিক পথে চলবার দিশা দিবার জন্য। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু মানুষকে দান করেছেন দীন বা জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম আল্লাহর দেওয়া একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যা হযরত আদম (আ.) হতে প্রচারিত হতে হতে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে। তিনি পৃথিবীতে আবির্ভূত হন সমগ্র মানবজাতির জন্য, তিনি আবির্ভূত হন বিশ্ব জগতের জন্য রহমতরূপে। তিনি আবির্ভূত হন সিরাজাম মুনীরা রূপে অর্থাৎ প্রদীপ্ত চেরাগরূপে। আল্লাহ জাল্লাহু ইরশাদ করেন, হে নবী, নিশ্চয়ই আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে সাক্ষ্যদাতারূপে, সুসংবাদদাতারূপে, সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর দিকে তাঁরই অনুমতিক্রমে আহ্বানকারীরূপে এবং প্রদীপ্ত চেরাগরূপে। (সূরা আহযাব : আয়াত ৪৫)।
৬১০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ রমজান রাতে আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁর নিকট প্রথম ওহী প্রেরণ করেন। তিনি প্রথম ওহী পেয়ে অতি সংগোপনে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তিন বছর সংগোপনে ইসলাম প্রচার করার পর তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করবার জন্য ওহী প্রাপ্ত হলেন। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু তাঁকে নির্দেশ দিলেন : (হে রসূল) আপনাকে যে বিষয়ে আদেশ করা হয়েছে আপনি তা প্রকাশ্যে প্রচার করুন আর মুশরিকদের পরওয়া করবেন না। (সূরা হিজর : আয়াত ৯৪)। আপনার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দিন। (সূরা শু’আরা : আয়াত ২১৪)। এই নির্দেশ পেয়ে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। তিনি সাফা পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মক্কার বিভিন্ন গোত্রের নাম ধরে ধরে উচ্চস্বরে আহ্বান করলেন। সবাই এসে পাহাড়ের পাদদেশে জড়ো হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : যদি কোনো কথা তোমাদের নিকট উপস্থাপন করি, তোমরা কি তা বিশ্বাস করবে না? সবাই বললো, আপনি আল-আমিন, আমরা আপনার কথা বিশ্বাস করব। আপনি তো নির্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক। তিনি বললেন : আমি যদি বলি, এই পর্বত শ্রেণীর আড়াল থেকে একটি অশ্বারোহী বাহিনী তোমাদের আক্রমণ করতে ছুটে আসছে, তাও কি তোমরা বিশ্বাস করবে? সবাই সমস্বরে বলে উঠলো : নিশ্চয়ই বিশ্বাস করব। আপনি যে আল-আমীন, আপনি তো আস্সাদীক। তিনি তখন বললেন : তাহলে তোমরা শোনো, আমি তোমাদেরকে কঠোর আযাবের সতর্কবাণী শুনাচ্ছি।
তিনি একে একে এক একটি গোত্রকে সম্বোধন করে বলতে লাগলেন, হে বুনু আবদি মনাফ, বুনু জাহারা, আমার আত্মীয়-স্বজনকে সতর্ক করে দেবার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এই কলেমায় তোমরা ঈমান আনো। যদি তোমরা এতে ঈমান না আনো তাহলে তোমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সাধন অসম্ভব হবে। প্রিয় নবী (সা.) প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অবলম্বন করলেন, তাতে লক্ষ্য করা যায় যে, আসল কথা তুলে ধরবার পূর্বে তিনি সমবেত সকলের মন-মানসিকতা এবং তাঁর প্রতি তাদের আস্থা যাচাই করে নিলেন। ইসলাম প্রচার করতে যেয়ে তাঁকে এবং তাঁর সাহাবীগণকে দারুণ কষ্ট, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সইতে হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে এই মহান কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেনি। বরং তিনি ঘোষণা করেছেন, আল্লাহর কসম, আমার এক হাতে সূর্য এবং অন্য হাতে চন্দ্র এনে দেয়া হলেও আমি আমার কর্তব্য পালন করা থেকে বিরত হবো না।
তিনি হযরত যায়েদ বিন হারিসা রাদি আল্লাহু তাআলা আনহুকে সঙ্গে নিয়ে তায়েফে গিয়েছেন সেখানকার মানুষকে হিদায়াত দান করবার জন্য, তাদের মধ্যে ইসলাম প্রচার করবার জন্য। তায়েফে তিনি প্রায় এক মাস অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি তায়েফের মানুষের নিকট ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। তায়েফের মানুষ তাঁর দাওয়াত গ্রহণ তো করলোই না বরং তাঁকে কঠোর ভাষায় বিদ্রুপ করতে লাগলো, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করলো, এমন কি দৈহিক নির্যাতন চালালো, পাথর মেরে তাঁর জিসম মুবারক রক্তাক্ত করে দিল। তাঁর জিসম ও কদম মোবারক থেকে পবিত্র খুন প্রবাহিত হলো। তিনি এমন অবস্থাতেও ধৈর্য ইখতিয়ার করলেন। তিনি তায়েফবাসীর অকথ্য জুলুম-নির্যাতনের  কথা ভুলে যেয়ে তাদের জন্য দু’আ করেন এই বলে : আল্লাহ গো, আমার দুর্বলতা, উপায়হীনতা এবং মানব দৃষ্টিতে হেয়তার জন্য আপনার দরবারেই ফরিয়াদ করছি, হে রহমানুর রহীম, হে পরম করুণাময় দয়ালুদাতা, সমস্ত দুর্বলের রব আপনি। এবং আপনিই আমার রব। যদি আপনি আমার উপর ক্রদ্ধ না হয়ে থাকেন তাহলে আমি কোনো পরওয়া করি না। আপনার আফিয়াত আমার আশ্রয়। আমি আপনার সেই নূরের আশ্রয় প্রার্থনা করছি যে নূর মুবারকে আসমান-যমীন রওশন হয়েছে, যে নূরের ছটায় অন্ধকার বিদূরিত হয়। যে নূরের ছটায় দুনিয়া ও আখিরাতের কর্ম সম্পাদন হয়। সেই নূর মুবারকের উসিলায় আপনি আপনার গজব নাযিল করবেন না। আপনার অসন্তুষ্টি নাযিল করবেন না। একমাত্র আপনার সন্তুষ্টি সাধন করাই আমার কর্তব্য। যতক্ষণ না আপিনি সন্তুষ্ট হন। লা হাওলা ওয়া কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা।
সেদিন তায়েফে ইসলাম প্রচার করতে যেয়ে অত্যাচার জর্জরিত অবস্থায় তিনি ধৈর্য ধারণ করে যারা তাঁকে আঘাত করলো তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করে ইসলাম প্রচারের কি নীতিমালা হওয়া উচিত তার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তিনি সেদিন ক্ষমার পথ বেছে নিলেন, তিনি তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলেন। তিনি বললেন : হয়তো আল্লাহ তা’আলা তায়েফবাসীদের কারো বংশে এমন মানুষ পয়দা করবেন যারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং আল্লাহর সঙ্গে কারো শরিক করবে না।
পরবর্তীকালে হযরত আয়িশা রাদিআল্লাহু তা’আলা প্রিয় নবী (সা.) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন : হে আল্লাহর রাসূল, ওহোদের চেয়ে আপনার জীবনে কি কোনো কঠিনতর দুর্দিন এসেছে? প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন : তায়েফে আমার জীবনে সবচেয়ে কঠিন দুর্যোগের দিন এসেছিল।
মদীনায় হিজরতের পূর্বে হজ মওসুমে মক্কার আকাবাতে মদীনার বনী খাজরায ও বনী আউসের কিছু প্রধান ব্যক্তির সাথে অতি গোপনে প্রিয়নবী (সা.) মিলিত হন এবং তাদের বলেন : তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে। তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। আল্লাহ ও তাঁর  রসূলের কথা শুনবে ও মানবে, সুখে-দুঃখে আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করবে। আল্লাহর আদেশ প্রচারে কোনো নিন্দাকারীর নিন্দাকে পরওয়া করবে না। তোমাদের সাথে সম্মিলিত হলে আমাদের সাহায্য করবে। যেভাবে তোমরা স্ত্রী, সন্তান ও নিজেদেরকে রক্ষা করো ঠিক সেভাবে আমাকে রক্ষা করবে।
একজন জিজ্ঞেস করলেন : আপনার কথামতো ঐ কাজগুলো করলে আমাদের কি লাভ হবে? প্রিয় নবী (সা.) বললেন : জান্নাত অর্থাৎ তিনি বুঝালেন যে, তোমরা ঐগুলো যথাযথভাবে পালন করলে জান্নাত প্রাপ্ত হবে। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কথা শুনে তারা ইসলাম গ্রহণ করলেন। ইশা’আতে ইসলামের জন্য ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য কি প্রদ্ধতি অবলম্বন করতে  হবে সে সম্পর্কে আল্লাহ জাল্লা শানুহু নির্দেশ দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : তোমার রবের পথে আহ্বান করো হিকমতের সঙ্গে এবং সুন্দর সুন্দর উপদেশ দ্বারা আর ওদের সঙ্গে আলোচনা করো সদ্ভাবে আলোচনার মাধ্যমে। (সূরা নাহল : আয়াত-১২৫)। এখানে লক্ষ্য করা যায়, আল্লাহর পথের দিকে মানুষকে আহ্বান করার তিনটি পন্থা অবলম্বনের নিদর্শে দেয়া হয়েছে। আর তা হচ্ছে- হিকমত, সদুপদেশ ও সদ্ভাবে আলোচনা। ইসলামের উপস্থাপন পদ্ধতির এই তিনটি মাধ্যম অনুসরণ করার নীতি আমরা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কাল থেকেই দেখে আসছি। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন সা¤্রাজ্যের স¤্রাটদের কাছে, বিধর্মী শাসনকর্তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত সংবলিত যে সমস্ত পত্র দিয়েছিলেন, সেসব পত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাতে হিকমত, সদুপদেশ ও সদ্ভাব প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে।
স¤্রাট হিরাক্লিয়াসের নিকট প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। প্রেরক : মুহম্মদ, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। প্রাপক ঃ হিরাকল, মহান রোম স¤্রাট। সালাম বর্ষিত হোক তাঁদের উপর, যারা সত্য পথের অনুসারী। অতঃপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি, ইসলাম গ্রহণ করে নিন, নিরাপত্তা প্রাপ্ত হবেন। আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ পারিশ্রমিক প্রদান করবেন। আপনি যদি অগ্রাহ্য করেন, তাহলে আপনার প্রজাকুলের পাপ আপনার উপরই বর্তাবে। হে আহলে কিতাব এসো আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একটি ঐকমত্য হয়ে যাক যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করব না, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করব না এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে কেউ কাউকে রব বলে গ্রহণ করব না। আর যদি তাঁরা একান্তই মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থেক, আমরা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করেছি- আমরা মুসলিম।
এই একটি মাত্র চিঠির কথাগুলোর মধ্যে ইসলামের দিকে আহ্বান করার যে পদ্ধতি স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে, তাতে হিকমত, সৎ উপদেশ ও সদ্ভাবে আলোচনা-আবেদন সবই লক্ষ্য করা যায়। এতে আরো লক্ষ্য করা যায়, প্রেরকের নাম ও পরিচয় এবং প্রাপকের নাম ও পরিচয় প্রথমে প্রদত্ত হয়েছে। চিঠি লেখার এ রেওয়াজও প্রিয় নবী (সা.) প্রবর্তন করেন।
ঈশা’আতে ইসলাম নিজের গৃহ থেকেই সূচিত করতে হবে, এটি এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এখানে লক্ষণীয় যে, প্রিয় নবী (সা.)-এর নবুওয়াত লাভের পরপরই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন হজরত খাদীজাতুল কুবরা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহা, হজরত আলী (রা.) এবং হজরত যায়দ বিন হারীসা (রা.)। এরা ছিলেন তাঁর পরিবার-পরিজনের অন্তর্গত। প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের যে নির্দেশ আল্লাহ তা’আলা প্রদান করেছিলেন তাতে ছিল নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের কথা। সূরা তাহরীমের ৬ নম্বর আয়াতখানি সম্পর্কে হযরত উমর রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু প্রিয় নবী (সা.)-এর নিকট আরজ করেছিলেন, ইয়া রাসূল্লাহ নিজেদের দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করার বিষয়টি বোধগম্য হয়, কিন্তু পরিবার-পরিজনকে কিভাবে দোজখের আগুন থেকে বাঁচাব? এ কথা শুনে প্রিয় নবী (সা.) বলেছিলেন, আল্লাহ তা’আলা যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, সেসব কাজ করতে নিষেধ করবে এবং যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন, সেসব কাজ করতে আদেশ করবে।
প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সা.) ঈশা’আতে ইসলামের যে পদ্ধতি প্রবর্তন করেন তা আল্লাহ কর্তৃক প্রত্যাদিষ্ট। তিনি শিক্ষিত সাহাবায়ে কেরামকে বিভিন্ন জনপদে প্রেরণ করেন। ইসলাম প্রচার করতে যেয়ে তাঁকে ভীষণ ভীষণ বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। দেশত্যাগ করতে হয়েছে, দান্দান মোবারক শহীদ হয়েছে, কতো সাহাবী শহীদ হয়েছেন, অনেকগুলো যুদ্ধের মুকাবিলা করতে হয়েছে, অতঃপর মক্কা বিজয় হয়েছে, ঘোষিত হয়েছে, সত্য এসেছে, মিথ্যা দূর হয়েছে, মিথ্যা দুর হবারই। ৬২৮ খ্রিস্টাব্দের হুদায়বিয়ার সন্ধি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে শান্তির হাওয়া প্রবাহিত হয় গোটা আরব ভূখ-ে। সেই সময় দলে দলে লোক তাঁর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) ও হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) এই সময়েই ইসলাম গ্রহণ করেন। এই সময় তাঁর নির্দেশে সাহাবায়ে কেরামগণেল মধ্য থেকে বহু সাহাবী বিভিন্ন দেশে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যান। জানা যায়, কোনো কোনো সাহাবী চীন-সুমাত্রা অঞ্চলে আরব বণিকদের নৌজাহাজে করে যাবার পথে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে সফর বিরতি করে এখানে কিছুকাল ইসলাম প্রচার  করেন।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণের শেষপর্যায়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা এখানে উপস্থিত আছ তারা শোনো এবং যারা উপস্থিত নেই তাদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দিও। সেই নির্দেশের পথ ধরে ইসলাম প্রচারের গতিধারা অব্যাহত রয়েছে। আজ সমগ্র বিশ্বের জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ মুসলিম। তারা সবাই উচ্চারণ করে : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
লেখক : মুফাসসিরে কুরআন, গবেষক, সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

0 comments:

Post a Comment